পেঁয়াজের দাম এই তো ৫ টাকা বাড়লো, ১ ঘণ্টা পর আবার কমলো। পাশাপাশি দুই দোকানে দুই রকম দাম। ম্যাজিস্ট্রেট আসলে দাম কমে, চলে গেলে বেড়ে যায়। এই ভাবে মুহূর্তে মুহূর্তে পরিবর্তন হচ্ছে পেঁয়াজের দাম।
মঙ্গলবার সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কাঁঠাল বাগান বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ ২৩০ টাকা থেকে ২৩৫ টাকা, চীনা পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা, মিশর ও তুরস্কের পেঁয়াজ ১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
তবে কারওয়ান বাজারের এই দামের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে রাজধানীর কাঁঠাল বাগান ও মহাখালীর কাঁচা বাজারে।
হোটেলের জন্য কারওয়ান বাজার থেকে প্রতিদিন পেঁয়াজ কিনেন কলাবাগান এলাকার নোয়াখালী হোটেলের মালিক হালিম মিয়া। তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘এখানে পেঁয়াজের দাম শেয়ার বাজারের মতো। এই বাড়লো তো, এই আবার কমে গেল। এই রকম।’
তিনি বলেন, ‘পরশুদিন বিকেলে (রোববার) এই বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম দেখলাম ২৪০ টাকা। হুট করে ম্যাজিস্ট্রেট আসলে দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা কমে যায়। এই রকম চিত্র ২/৩ দিন দেখেছি।
শামীম নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, একই জায়গায় পেঁয়াজ এক দোকানে ২২০ টাকা আরেক দোকানে ২৩০ টাকা। এই পেঁয়াজগুলোকে দেশি পেঁয়াজ বলে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু সেগুলোকে মিয়ানমারের বাছাই করা ভাল মানের পেঁয়াজ বলে দাবি করেন এই ক্রেতা।
শামীমের এই অভিযোগ যাচাই করে এর কিছু সত্যতা মিলেছে। তার দেয়া তথ্যমতে, ওই দুই দোকানে গিয়ে দুই রকম দামের চিত্র দেখা গেছে। দুইজনই নিজেদের পেঁয়াজকে ফরিদপুর ও পাবনার দেশি পেঁয়াজ বলে দাবি করেন। কেনা দাম অনুযায়ী বিক্রি করছেন বলে জানান তারা।
হুমায়ুন নামের একজন পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, এটা পচনশীল পণ্য। স্টক করে রাখা যায় না। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি হলে দাম একটু কমে। সরবরাহ কমে গেলে আবার ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে যায়। এভাবে ওঠানামা করে দাম।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মোনায়েম বলেন, দেশি পেঁয়াজের দাম ১৬০ টাকায় নেমেছিল। এখন আবার ২২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ দেশি পেঁয়াজ কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা।
একই বাজারের লাকসাম বাণিজ্যালয়ের বিক্রেতা হাবিবুর রহমান মোস্তফা বলেন, দুই দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম আবারও ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ শেষের দিকে, তাই দাম বাড়ছে বলে জানান তিনি।
পেঁয়াজের দাম নিয়ে জানতে চাইলে শ্যামবাজার পেঁয়াজ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ মাজেদ জানান, শ্যামবাজারে গত কয়েকদিন ধরেই দেশি পেঁয়াজ নেই। এখনও আগের অবস্থায় রয়েছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় বড় ধরনের সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। বিকল্প দেশ হিসাবে মিয়ানমার, মিশর, তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাংলাদেশ। কিন্তু জলপথে জাহাজে এসব পেঁয়াজ আসতে প্রায় এক মাস লেগে যায়। এতে বাজারে পেঁয়াজের চরম ঘাটতি তৈরি হয়। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়ে ২৫০ টাকা দরে কেজি বিক্রি হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত সংকট মেটাতে উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আানার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর কয়েকটি গ্রুপ অব কোম্পানি বিমানে পেঁয়াজ আনা শুরু করে। এসব পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করে গত বৃহস্পতিবার থেকে।
এরপর দাম স্থিতিশীল রাখতে আকাশপথে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য চার্জ মওকুফ করার ঘোষণা দেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। আকাশপথে যেকোনো পচনশীল দ্রব্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে ১৮ টাকা চার্জ প্রদান করতে হয়। এছাড়া চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানিতে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাধারণত পেঁয়াজ আমদানিতে ব্যাংকভেদে সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ পর্যন্ত সুদ কাটা হয়। এত উদ্যোগের পরও কমেনি দাম।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বোর্ডের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৭ থেকে ১৯ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। যা দেশের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশেরও বেশি। বাকি প্রায় ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ৭ থেকে ১১ লাখ টন আমদানি করা হয়। তবে এর ৯৫ শতাংশই আমদানি করা হয় ভারত থেকে। বাকি ৫ শতাংশ আসে মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিশর থেকে।