মানুষের নৈতিক সমর্থনের আন্দোলনে স্বার্থবাজদের অনুপ্রবেশ

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে অভিযোগ উঠেছে, তাদের ন্যায্য আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকছে। তাই শিক্ষার্থীদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে দেখা গেছে। শনিবার বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে শাহবাগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট পোশাক (ইউনিফর্ম) ছাড়া কাউকে সেখানে অবস্থান করতে দেো হয়নি।

শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থীর সড়কে মৃত্যুর পর আন্দোলন শুরু হলেও পরবর্তীতে তা পরিবহন ব্যবস্থার অনিয়মের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা চোখে আঙুল দিয়ে আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে, কী পরিমাণ অব্যবস্থাপনা হচ্ছে সড়কে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এখনও সড়কের শৃঙ্খলার দায়িত্ব নিজেরা নিয়ে কাজ করছে শিক্ষার্থীরা। তারা লেন মেনে গাড়ি, রিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে সহয়োগিতা করছে। পাশাপাশি চালক ও যানবাহনের লাইসেন্সও পরীক্ষা করছে।

শিক্ষার্থীদের এসব কর্মকাণ্ড দেশের সব মানুষের সমর্থন পেয়েছে। এমনকি সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরাও এই আন্দোলনকে যৌক্তিক বলে সমর্থন করেছেন। কিন্তু তাদের সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে বলে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হলেও অনেক শিক্ষার্থী এখনও ক্লাসে ফিরে যায়নি। তারা বলছে, তাদের দাবির বাস্তবায়ন দেখে তারা ক্লাসে ফিরবে। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কিছু দাবির বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীসহ দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা যখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে, তাদেরকে বুঝিয়ে ক্লাসে ফেরানোর চেষ্টা করছেন, তখন আমরা দেখেছি শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। শনিবারও রাজধানীর জিগাতলাসহ বেশ কয়েক জায়গায় তারা হামলার শিকার হয়েছে। হামলার অভিযোগ রয়েছে সরকারদলীয় কিছু সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর তৎপরতার মধ্যে এমন হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে আমরা মনে করি।

আমরা ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য লক্ষ্য করেছি। তিনি বলেছেন: ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে। কিন্তু একটি গোষ্ঠী হীনস্বার্থে এই আন্দোলনেকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে। অনুপ্রবেশকারী বিভিন্নভাবে অান্দোলনে অনুপ্রবেশ করছে।’ শুরু থেকে পুলিশ ধৈর্যসহ যেভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে তা প্রশংসনীয়। কিন্তু অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনারের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের লক্ষ্য রাখতে হবে। একইসঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের কথা বলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা বা হয়রানি করাও হবে ভুল। তাদের সব দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, এবং সেটা এখনই।

ছাত্র আন্দোলননিরাপদ সড়ক আন্দোলননিরাপদ সড়ক চাইসম্পাদকীয়