মাংসের বাজারও কি প্রধানমন্ত্রী দেখবেন?

ভাতে-মাছে বাঙালি হলেও মাঝে-সাঝে কেউ মাংস খায় না বা বাড়িতে মেহমান এলে মাংস আনা হয় না- এমন কিন্তু ব্যাপারটা না। আনা হয়। আবার কেউ বলতে পারেন বয়স বেড়েছে গরু-খাসির মাংস খাওয়া নিষেধ করে দিয়েছেন ডাক্তার সাহেব, তাই মাংস আনা বন্ধ হয়ে গেছে।

কিন্তু বাড়িতে সবার জন্য তো আর নিষেধ করে দেয়া হয়নি। যারা ছোট তাদের পুষ্টির জন্য দৈহিক কাঠামো ঠিক রাখার জন্য হলেও তো মাঝে-মাঝে মাংস খাওয়া দরকার। সেজন্য হলেও আনা পড়ে মাসে একবার-দু’বার।

কিন্তু কত দিয়ে কিনে আনেন গরু মাংস এক কেজি? কিংবা খাসির মাংস এক কেজি? এ প্রশ্নের উত্তরে কেউ বলবেন- গরুর মাংস সাড়ে পাঁচ শ’ থেকে পাঁচ শ’ আশি টাকা আর খাসির মাংস আট শ’ টাকা।

কিন্তু কেউ কখনো প্রশ্ন করেছেন বিক্রেতাকে- কেন গরুর মাংস সাড়ে পাঁচ শ’ টাকা? কিংবা খাসির মাংস কেন আট শ’ টাকা? সরকার তো বেধে দিয়েছেন গরুর মাংস পাঁচ শ’ টাকা খাসির মাংস সাড়ে সাত শ’টাকা।

দাম-টাম নিয়ে প্রশ্ন করাটা অনেকের কাছে হয়তো ছোটলোকের পর্যায়েই পড়ে। তাই বেশি কথা না বলে কিনে আনার লোকই হয়তো বেশি এ সমাজে। কারো কোনো মাথা ব্যথাও নেই। হতে পারে এটা। আবার এটাও হতে পারে-একটা শ্রেণীর কাছে এত অবৈধ টাকা-কড়ি হয়ে গেছে মাংস কত দিয়ে কেনা হলো সেটা তাদের কাছে কোনো ব্যাপার না। মাংস খেতে হবে তাই কিনে আনা হয়েছে।

মগের মুল্লুকে বাস করি আমরা। কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে একবার কোনো জিনিস বেড়ে গেলে আর সেটা সহজে তো কমেই না বরং বাড়তে থাকে। আড়াই তিন বছর আগেও গরুর মাংস ছিল ১৮০ টাকা। খাসির মাংস সাড়ে তিন শ’ থেকে তিন শ’ আশি টাকা। হুট করে বেড়ে পাঁচ শ’ টাকা গরু আর খাসির মাংস বেড়ে ৭৫০ টাকা হয়ে গেল।

কেন বাড়ানো হলো? মাংস বিক্রেতাদের দাবি ট্রাকে করে গরু আনতে হলে ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয়। স্বাস্থ্যসম্মত জবাইখানা না থাকায় যেখানে সেখানে গরু জবাই করার জন্য পুলিশসহ সিটি করপোরেশনের লোকজনকে চাঁদা দিতে হয়। তাই বেড়ে যায়। ওসব বন্ধ হলে আগের দামেই তারা মাংস খাওয়াতে পারবে।

কিন্তু ওই কথার আর কোনো প্রকার ফলোআপ হয়নি। কে শোনে কার কথা। মগের মুল্লুকে বাস করলে কি কেউ কারো কথা শোনে? এখনো সেভাবে চলছে মাংসের বাজার।

বাজার মনিটরিং সেল বলে নাকি একটা কিছু আমাদের দেশে আছে। তারাও মাঝে মাঝে সরব হয়ে যান। কেন সরব হন সেটা বোঝার ক্ষমতা নেই আমাদের। তবে পত্রপত্রিকা বা টেলিভিশনে নিজেদের ছবি দেখানোর জন্য হলেও তারা তো আসেন মিডিয়ার সামনে এটাই বা কম কি?

কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল কোন ঘোড়ার ঘাস কাটে? সেটা জানার আগ্রহ থেকেই এ লেখার উদ্দেশ্য।
বাজারে গরুর মাংস কত দামে বিক্রি হচ্ছে? সেটা দেখার দরকার কি? মাস শেষে বিক্রেতাদের কাছ থেকে মাসোহারা পেলে কি ওই ব্যাপারে তৎপর হয় কেউ? প্রত্যেক এলাকায় পৌরসভার সংশ্লিষ্ট লোকজন আছে। যারা দেখে থাকেন কোথায় গরু-খাসি জবাই হচ্ছে। রাস্তার ওপর ফেলেই গরু-খাসি জবাই করার নিয়ম নেই। কিন্তু হচ্ছে তাই। দেখার কেউ নাই। বিক্রি হচ্ছে সিটি করপোরেশনের বেধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে। কে দেখবে? বিক্রেতাকে বলা হলে বলে দেয় সাফ কথা-বাতাস বদলাইয়া গেছে, তাই ওই দামে বিক্রি হয় না। বাতাস ঠিক হইলে আবার আগের দামে বিক্রি হবে। এই বাতাসটা কি? জানা যায় না।

আমাদের দেশে বর্তমানে কোনো মন্ত্রণালয়ে কেউ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে না। তা না হলে কি পেঁয়াজ নিয়ে পুরো দেশ মেতে উঠে? কোনোভাবে ঠিক করতে পারেনি সিন্ডিকেটকে মন্ত্রণালয়। কেউ কেউ বলেছেন ব্যবসায়ীদের কাছে মন্ত্রণালয় ইজারা দিলে তো এরকমই হবে। চালের দামের ক্ষেত্রেও একই কথা সাধারণ মানুষের। ব্যবসায়ী বা ব্যবসায়ী নেতা কেন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাবেন? এ প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারেনি। হায় মগের মুল্লুক!

সবকিছু যখন তলানিতে গিয়ে ঠেকে তখনি সেখান থেকে তুলে আনার দায়িত্ব যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তাই তো বিনয়ের সঙ্গেই ওই প্রশ্নটা করতে ইচ্ছে করছে- মাংসের বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই নিতে হবে?

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

প্রধানমন্ত্রী