মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে আসতে পারেন যারা

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরী হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য ও উদ্দীপনা। ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশের স্বীকৃত প্লাটফর্ম স্বেচ্ছাসেবক লীগ। আসছে ১২ নভেম্বর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।  

এই সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য প্রার্থী থাকবেন সাবেক সব ছাত্রনেতারা। অন্যান্য সহযোগী সংগঠনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ি থাকলেও, স্বেচ্ছাসেবক লীগ মহানগর উত্তর কিছুটা ভিন্ন। কাঙ্খিত পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও সকলের মধ্যে এক ধরণের শ্রদ্ধারপূর্ণ আচরণ লক্ষ্য করা গেছে।

পদ প্রত্যাশী সকলেই আস্থা রাখছেন দলীয় অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমের সিদ্ধান্তের ওপর। নেতৃত্বে যেই আসুক না কেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতকে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী করার জন্য সামনের দিনগুলোতে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন সকলেই।

এবারের সম্মেলনে সভাপতি পদের আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়া, বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী। এই পদে জন্য আরও আলোচনায় রয়েছে সংগঠনটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফরিদুর রহমান খান ইরান।

সম্মেলন প্রসঙ্গে চ্যালেন আই অনলাইনকে ইরান বলেন: আমরা চাই আমাদের কমিটিতে আরও নতুন নতুন ছাত্রনেতারা আসুক, নতুন নেতৃত্ব আসুক। যে যেখানে আছে তার দলীয় অবস্থান সামনে আরও ভালো হবে। আমরা আশাকরি নতুন পুরাতন সমন্বয়ে আমাদের কমিটি গুলো হবে। দীর্ঘদিন পর আমাদের এ সম্মেলন হবে, এ সম্মেলন ঘিরে ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে থানাসহ সকল স্তরে আনন্দের আবহ বয়ে যাচ্ছে। আমি আশাকরি আমাদের সম্মেলন সার্থক ও সুন্দর হবে।

তিনি আরও বলেন: আমরা ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম কমিটি। এমন একটা সময় আমাদের পার করতে হয়েছে যখন কেউ স্বেচ্ছাসেবক লীগ করতে চাইতো না। আমরা সে অবস্থা পার করে এসেছি। এখন আমাদের সাংগঠনিক অবস্থান অত্যন্ত সুসংহত। যেকোন পরিস্থিতিতে আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে সুসংহত ও শক্তিশালী করতে প্রস্তুত রয়েছি।

ইরান তার রাজনৈতিক বিবরণ তুলে ধরে বলেন: বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে স্কুলে থাকতেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৮৩-১৯৮৪ রাজধানী উচ্চবিদ্যালয় ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে স্কুল ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক, ১৯৮৭-১৯৮৮ নবম শ্রেনীতে সভাপতি নির্বাচিত হন। রাজনীতির ওই বন্ধুর সময়ে নির্যাতন শত নির্যাতন সহ্য করেও পিছুপা হননি। এরপর ১৯৯৩ সালে তেজগাঁও কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিপি পদে নির্বাচন করেন ইরান। কিন্তু চক্রান্ত কারণে সে নির্বাচনের ফল স্থাগিত হয়ে যায়। এরপর, ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পরপর তিনবার তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়া, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দুই বার দায়িত্বে ছিলেন ইরান। ২০০৬ সালের ৩১জুলাই সম্মেলনের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।

এছাড়া, সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আফরোজ হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ার হোসেন বিপুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ দুলাল হোসেন, মোহম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ, মোহম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বাবু, দক্ষিণ খান থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আনিসুর রহমান নাইম।

মনোয়ার হোসেন বিপুল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে গত ১৩ বছর যাবৎ কাজ করছি। সব সময়ই চেষ্টা করেছি, সংগঠনকে সুসংহত করে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে। প্রত্যেক রাজনীতিবীদেরই একটা লক্ষ্য থাকে দলে ভালো অবস্থান তৈরি করা। আসন্ন সম্মেলনে যদি আমার কাজকে মূল্যায়ন করা হবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। একই সঙ্গে যাকেই নেতা নির্বাচিত করা হবে তার সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এ নেতা।

পাশাপাশি পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য তুলে ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এ নেতা বলেন: আমার নানা মাওলানা আবদুর রশিদ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বঙ্গবন্ধুর সময় ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এবং ৭৫’র পর আমার বাবা আওয়ামী লীগ করার কারণে সিরাজগঞ্জ থানা শিক্ষা অফিসার থাকা অবস্থায় খুনি মোশতাক তাকে চাকুরিচ্যুত করে। পরে আদালত তাকে পুনঃবহালের আদেশ দিলেও তিনি বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে চাকুরি যোগদানে অস্বীকৃতি জানান।

মোহম্মদপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন: আমি মোহাম্মদপুর স্বেচ্ছাসেবকলীগকে সুসংহতহ করার চেষ্টা করেছি। আগামীতে আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে কাজ  করে যাবো।

এর আগে, ১৩ বছর পর হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সম্মেলন। ১১ নভেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও ১২ নভেম্বর উত্তরের সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করেছে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ।