বাংলাদেশের ছোটপর্দার নন্দিত অভিনেত্রী দীপা খন্দকার। শোবিজে ১৯ বছরের ক্যারিয়ার তার। নাটক, বিজ্ঞাপনে নানামাত্রিক চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করে পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। অভিনয়ের বাইরে দীপা খন্দকার একজন চমৎকার মানুষ। তার আচরণে পাওয়া যায় মুগ্ধতার ছাপ। এই অভিনেত্রী তার ক্যারিয়ারে প্রথমবার চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেন। ছবির নাম ‘ভাইজান এলো রে’। কলকাতার শীর্ষ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে মুভিজের প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে ছবিটি। গেল ঈদে পশ্চিমবঙ্গে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। আমদানি চুক্তিতে ‘ভাইজান এলো রে’ ছবিটি চলতি জুলাই মাসে বাংলাদেশে মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এই ছবি এবং নিজের ক্যারিয়ারের নানাদিক নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন দীপা খন্দকার।
‘ভাইজান এলো রে’ ছবিতে যুক্ত হলেন কিভাবে?
আমার স্বামী শাহেদ আলী (অভিনেতা) এসকে মুভিজের সঙ্গে আগে কাজ করেছে (চালবাজ)। তখন তারা শাহেদের কাছ থেকে জেনেছে যে আমি তার স্ত্রী। আমি নিজেও অভিনয় করি। এরপর শাহেদের কাছ থেকে জেনে নেয়, আমি কী কাজ করি। ইউটিউব থেকে আমার কয়েকটি কাজ তারা দেখে। এটা ‘ভাইজান এলো রে’ ছবি শুরু আগের কথা। এরপর তারা ভাইজানের জন্য বোনের চরিত্র খুঁজছিলেন। অনেক ভাইটাল একটা ক্যারেক্টার এটা। তারপর ছবির পরিচালক জয়দীপ মুখার্জি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে। তখন আমি বলেছিলাম, দেখেন ছোট চরিত্র হলে আমি কাজ করবো না।
এরপর জয়দীপ দা আমাকে বলেছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের জন্যই আপনাকে নিতে চাচ্ছি। প্রথম দফায় ফোনের মাধ্যমে এতটুকুই আলাপ হয়েছিল। আর জানিয়েছিলেন, আমি যদি কাজটি করি তবে যেন রেডি থাকি। কারণ মার্চের ৩ তারিখ থেকে শুটিং শুরু হবে। পরে আমি ছবির গল্প শুনি। শুনে ভালো লাগে। তারপর কাজ করতে রাজি হই। এরপর মুঠোফোন, হোয়াটসঅ্যাপে বাকি আলাপ, পেমেন্ট নিয়ে কথা চূড়ান্ত হয়। পহেলা মার্চ কলকাতা যাই। লুক টেস্ট দেই। ৩ মার্চ থেকে শুটিং শুরু করি।
ছবিতে শাকিব খানের বোন হিসেবে আপনার চরিত্রের গুরুত্ব কতটুকু?
যারা সিনেমাটা দেখেবন, তারা বুঝবেন আমার চরিত্রের গুরুত্ব কতখানি। এটা পুরোপুরি ফ্যামিলি ড্রামা। ভাই-বোনের গল্পটাই মুখ্য। বাকি নায়িকা যারা আছেন, তারা কমার্শিয়াল সেক্টরের জন্যই আছেন। কিন্তু মেইন যে গল্পটা, সেটা ভাই-বোনকে নিয়ে, আমি এবং শাকিব। এখানে আমার চরিত্রের নাম অরুণিমা।
প্রথম ছবিতে শাকিব খানের বোনের চরিত্রে অভিনয় করলেন…
হুম খুবই ভালো লেগেছে। আমার সঙ্গে শাকিবের ব্যক্তিগত খুব বেশি পরিচয় ছিল না। ঢাকায় দু-একবার আমাদের দেখা হয়েছে। হায়, হ্যালো হয়েছে। এর বেশি নয়। কিন্তু এই ছবিতে শাকিবের সঙ্গে আমার প্রচুর দৃশ্য রয়েছে। আমি যে ধরনের গল্প শুটিং শুরুর আগে শুনেছি কাজও করেছি তেমন। যেটা আমার সঙ্গে মেলে। আর আমি জানি না, শাকিব বাংলাদেশে একরকম আর কলকাতায় আরেক রকম কিনা! কিন্তু ওখানে আমি যে শাকিবকে পেয়েছি সেটা আমার কাছে পারফেক্ট একজন সহশিল্পী মনে হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পাওয়ার পর সেখানে ছবিটি কেমন চলেছে, খোঁজ নিয়েছেন?
হ্যাঁ। ইউটিউনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। তারা বলেছে, এ পর্যন্ত শাকিবকে নিয়ে তারা যতগুলো ছবি করেছেন তার মধ্যে ‘ভাইজান এলো রে’ খুব ভালো চলছে। এর আগে ‘শিকারী’ও ভালো চলেছিল। কলকাতায় অনেক প্রতিযোগিতা করতে হয়। বলিউডেরে ছবির সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতা করতে হয়। যেমন, সালমান খানের ‘রেস ৩’-এর সঙ্গে ভাইজানও চলেছে। সেদিক থেকে আমাদের ছবিটি ভালো চলেছে। নির্মাণ সংস্থা খুবই খুশী। কারণ, প্রতিযোগিতার পরেও ভাইজানের অবস্থান ভালো।
আপনার চরিত্রের ভালো-মন্দ নিয়ে কেউ কিছু বলেনি?
‘ভাইজান এলো রে’ ছবিতে ভিলেনের চরিত্র করেছেন শান্তিলাল দাদা। তিনি আমাকে মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়েছেন, আমি খুব ভালো কাজ করেছি। স্ক্রিনে আমাকে দেখে ভালো লেগেছে। এই ছবির ছবির সাথে রিলেটেড না তারাও আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছেন, আমার কাজ দেখে তাদের ভালো লেগেছে। এটা আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। ছবি মুক্তির সময় আমি যেহেতু যাইনি, সেখানকার গণমানুষের রি-অ্যাকশন সম্পর্কে বলতে পারবো না।
‘ভাইজান এলো রে’ বাংলাদেশে আসছে। এ নিয়ে কিছু বলুন..
আমার জন্য এটা অনেক পজিটিভ হবে। কারণ, আমার চরিত্রটা সবাই খুব পছন্দ করবে। যেকোনো টাইপের দর্শক পছন্দ করবেন। যারা বোদ্ধা তাদের কাছেও ভালো লাগবে। এটা আমি শতভাগ বলতে পারি। আমি আমার সেরাটা দিয়েছি ছবিতে। সবাই ছবিটা দেখবেন। হতাশ হবেন না।
১৯ বছর বাংলাদেশের শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। এবার দেশের বাইরের শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করে কেমন মনে হয়েছে?
দু’দেশের শিল্পীরাই প্রফেশনাল। তবে আমাদের অনেক বাধা আছে। যেমন- আমাদের আর্থিক দিকটা ঝামেলার। এই ঝামেলা থাকার কারণে আমাদের নানাবিধ স্যাক্রিফাইস করতে হয়। প্রডাকশনের কিছু না থাকলে স্যাক্রিফাইস করছি, নিজের সাজগোজ অনেকসময় নিজে করছি। নিজের গয়না নিজেই দেখছি। এসবই মেনে নিচ্ছি। কিন্তু কলকাতায় কোনোকিছু নিজে দেখতে হয় না। নিজের অভিনয়ের বাইরে একজন শিল্পীকে কিছুই নিতে হচ্ছে না। তাদের যাতায়াত, কস্টিউম কিছুই নিয়ে ভাবতে হয় না। অথচ, ঢাকায় আমাদের সবকিছু নিয়ে ভাবতে হয়। কিভাবে যাব, কখন রওনা দেব সবকিছু নিয়েই ভাবতে হয়। কলকাতায় ওরা অনেক বেশি গোছানো। আমার কাছে মনে হয়েছে, তারা অনেক প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া। একটা প্রডাকশনের সাথে কাজ করে এটাই মনে হয়েছে। তারা অনেক অর্গানাইজড, টাকা-পয়সা, পেমেন্ট, টাইম সবকিছুই ঠিকঠাক। হয়তো আমার সাথে অনেকেই একমত হবেন না। কারণ তারা ভালো প্রডাকশনে কাজ করেনি। আমি আমার অভিজ্ঞতার কথা বললাম। বাকিরা কেমন সেটা আমার জানা নেই।
আপনার ক্যারিয়ার ১৯ বছরের। এতদিন পর সিনেমায় কেন?
মিডিয়াতে আমি যখন এসেছি, তখন ছোট ছিলাম। ২০-২২ বছর বয়স ছিল। লিড চরিত্র, নায়িকা হিসেবে কাজের অফার পেয়েছি। আরও ১৫-২০ বছর আগে সিনেমার অবস্থা ভালো ছিল না। পরে কিছুটা অশ্লীলতা ছিল। আমি অতোটা খোলামেলা চরিত্রের জন্য উপযুক্ত না। তখন তো পারিনি, এখনও পারবো না।
তখন সিনেমা করতে ভয় কাজ করতো। রাজি হয়ে গেলে যদি খোলামেলা চরিত্র করা লাগে! আমি সেগুলো পারবো না। এখন আমি সিনেমা করতে চাই। তবে ভালো চরিত্র, যেখানে প্রপার অভিনয় করার সুযোগ পাব সেসব ছবি করতে চাই। আমার ইমেজের সঙ্গে যেটা যাবে সেই কাজটা করবো। এর আগে কাজের অফার পেয়েছি, কিন্তু ভালো লাগেনি। একটা কাজ করলেও যেন বলতে পারি, হ্যাঁ এটা আমার সিনেমা। যেমন- ছবি দেখার পর দর্শকই বলবে, ‘ভাইজান এলো রে’ আমার ও শাকিব খানের সিনেমা।
এতদিন পর এসে সিনেমায় কাজ করলেন। আপনার কি মনে হয় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
আমার কাছে মনে হয় তখন সিনেমা না করে আমি একদম সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার কখনোই মনে হয়নি যে, আমি ছবির অফার পেয়েও ছেড়ে দিয়ে ভুল করেছি।
আগামীতে সিনেমায় কাজের ইচ্ছে আছে?
অবশ্যই ইচ্ছে আছে। সেক্ষেত্রে চরিত্রটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইতিবাচক, নেতিবাচক সব চরিত্রই কাজ করতে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে। শুধু সিনেমায় আছে সেসব কাজ আমি করতে চাইনা। আমাকে চরিত্রে গুরুত্ব দিতে হবে, তাহলে আমিও নিজেকে ঢেলে দিয়ে সেরা কাজ নিয়ে আসবো।
ঈদে ছোটপর্দায় কয়টি নাটকে কাজ করলেন?
চার-পাঁচটি নাটকে কাজ করেছি। আমার অভিনীত ‘মালেক হতে সাবধান’, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’, ‘বাসর রাত’, ‘পরশ পাথর’ এই চারটি নাটক ঈদে প্রচারিত হয়েছে। এছাড়া চ্যানেল আই-এর জন্য নির্মিত ডেক প্রেজেন্টস ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’ নামের ২৪ পর্বের একটা লাইফস্টাইল অনুষ্ঠানের শুটিং করেছি, যেটা শিগগির প্রচারে আসবে। সবকিছু মিলিয়ে আমি কাজ নিয়ে যতটা ব্যস্ত থাকতে চাই। এছাড়া রোজার সময় প্রায় ২০ থেকে ২৫ দিন শুটিং করতে হয়েছে।