ব্রেক্সিট: টেরেসা মে’র বিশাল হারে ব্রিটিশদের উল্লাস

মে’র হারে পাউন্ডের দাম বাড়ল

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র ব্রেক্সিট চুক্তিটি নাকচ করে দিয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। ২৩০ ভোটের বিশাল ব্যবধানে চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করেন ব্রিটিশ এমপিরা।

টানা পাঁচ দিন ধরে অনেক তর্ক-বিতর্ক আর আলোচনা-সমালোচনার পর শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র ব্রেক্সিট প্রস্তাবের বিপক্ষেই রায় দেন ব্রিটিশ এমপিরা।

মঙ্গলবার ৬৫০ সদস্যের হাউজ অব কমনসে প্রস্তাবটি বাতিলের পক্ষে সরকারি দলের ১১৮ জন সদস্যসহ ভোট দেন ৪৩২ জন সদস্য আর প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ২০২ জন সদস্য।

পার্লামেন্টে এটিই যুক্তরাজ্যের কোনো ক্ষমতাসীন সরকারের সবচেয়ে বড় হার।

আইনপ্রণেতাদের সিদ্ধান্তের পর সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন বিরোধী লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিন। বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানান তিনি।

ধারণা করা হচ্ছে, এই অনাস্থা প্রস্তাব দেশটিতে সাধারণ নির্বাচনেও গড়াতে পারে। বুধবার অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর আলোচনা ও ভোটাভুটিতে অংশ নেবেন পার্লামেন্টের সদস্যরা।

টেরেসা মে

এর আগে পরাজয় নিশ্চিতের পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বলেন, তার সরকারের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট হলে স্বাগত জানাবেন তিনি। আস্থা ভোটে জয়ী হলে ব্রেক্সিট ইস্যুটি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে সব দলের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

ইইউ’র প্রতিক্রিয়া
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সিদ্ধান্তের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, ইইউ’তে থাকাই যুক্তরাজ্যের জন্য ইতিবাচক সমাধান। দেশটির উচিত ব্রেক্সিট পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়া।

ডোনাল্ড টাস্ক

এখন একটি ‘বিশৃঙ্খল ব্রেক্সিট’র আশঙ্কা বেড়ে গেল বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ-ক্লদ জাংকার।

ব্রেক্সিট ইস্যুতে দ্রুত পরবর্তী পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইইউ নেতারা।

সাধারণের উল্লাস ও পাউন্ডের দরে হেরফের
ওদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র ব্রেক্সিট চুক্তিটি পার্লামেন্টে নাকচ হওয়ার পর আনন্দ উল্লাস করেছে সাধারণ মানুষ। ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়ে দ্বিতীয় গণভোটেরও দাবি জানিয়েছে তারা।

শুধু তাই নয়, অর্থনীতিতেও পড়েছে এই ভোটাভুটির প্রভাব। মে’র প্রস্তাব ভোটে হেরে যেতেই আকস্মিকভাবে বেড়ে গেছে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের মূল্যমান। আগের দিন এক শতাংশের বেশি দাম কমলেও মঙ্গলবার ভোটের ফল প্রকাশের পর হুট করেই স্টারলিংয়ের দাম ০.০৫ শতাংশ বেড়ে ১.২৮৭ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ হয়ে গেছে।

ইইউ থেকে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও চুক্তি নিয়ে থাকা অনিশ্চয়তার প্রতিফলন হিসেবে গত বছর বেশ মন্দায় ছিল ব্রিটিশ পাউন্ড। ২০১৮ সালে এর মূল্যমান আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ নেমে গিয়েছিল। 

২০১৬ সালের ২৩ জুন গণভোটে পৌনে দুই কোটি ভোটারের ৫২ শতাংশ ভোট দিয়েছিলেন ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে। ওই রায় অনুযায়ী আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)টেরেসা মেব্রেক্সিটব্রেক্সিট ভোটযুক্তরাজ্যসেমি লিড