ব্যর্থতার ষোলোকলা মেলানো হার

ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে, কোথাও টেস্ট লড়াইয়ের ছাপ রাখতে না পারা বাংলাদেশ ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করা হার দেখেছে ইন্দোরে, ম্যাচের তৃতীয় দিনেই। ভারতের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের প্রথমটিতে ইনিংস ও ১৩০ রানে হেরেছে মুমিনুলের দল।

হলকার স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে এসে বৃহস্পতিবার নিজেদের প্রথম ইনিংসে কেবল ১৫০ পর্যন্ত যেতে পেরেছিল বাংলাদেশ। পরে ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান তুলে শুক্রবার দ্বিতীয় দিন শেষ করা ভারত শনিবার আর ব্যাটিংয়ে নামেনি।

তাতে তৃতীয় দিনে ৩৪৩ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। নেমেই প্রথম ইনিংসের পুনরাবৃত্তি। একের পর এক উইকেট হারিয়ে কোনো প্রতিরোধ তো গড়তে পারেইনি, প্রতিরোধের মানসিকতাও দেখাতে পারেননি সফরকারী ব্যাটসম্যানরা! দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হওয়ার আগে তারা যেতে পেরেছেন ২১৩ রান পর্যন্ত।

বাংলাদেশ-১৫০ ও ২১৩, ভারত-৪৩৯/৬(ইনিংস ঘোষণা)

ইডেনে ২২ নভেম্বর সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে নামবে দুদল। যেটি বাংলাদেশ-ভারত উভয়ের জন্যই প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট। গোলাপি বলের পরীক্ষায় নামার আগে টাইগাররা আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু করল হার দিয়ে।

বড় রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ দ্রুতই ওপেনারদের হারায়। ইনিংস হার এড়াতেই যেখানে সাড়ে তিনশর কাছে রান দরকার, সেখানে টপাটপ উইকেট পতন পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য মহাচাপই হয়ে এসেছে!

ক্রিজে এসে সাদমান ইসলাম ও ইমরুল কায়েস জুটি ওভার পাঁচেক নিরাপদে কাটিয়ে দেন। এরপরই পতন ইমরুলের। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ বাঁহাতি ওপেনার করেছিলেন ৬ রান, দ্বিতীয় ইনিংসেও ঠিক একই রানে ফিরেছেন। আগের ইনিংসে উমেশ যাদবের বলে ক্যাচ দিয়েছেন, এবার বোলার একই তবে হয়েছেন বোল্ড।

আরেক ওপেনার সাদমানও ফিরেছেন ঠিক ৬ রানে। আগের ইনিংসেও তার নামের পাশে ৬ রানই। বোলারও একই। ইশান্ত শর্মার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন প্রথম ইনিংসে, এবার বোল্ড।

অধিনায়ক মুমিনুল হক কিছুক্ষণ ছিলেন, তবে ইনিংস টানতে পারেননি। এলবিডব্লিউ হয়েছেন ৭ রান করে। রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরান মোহাম্মদ সামি।

মোহাম্মদ মিঠুনও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৪ চারে ২৫ বলে ১৮ পর্যন্ত গিয়েছিলেন। এরপরই সামিকে পুল খেলতে যেয়ে আলগা রকমের বাজে শটে ক্যাচ দেন। প্রথম ইনিংসে তার ব্যাটে এসেছিল ১৩, এলবি হয়েছিলেন সামির বলেই।

সকালে যখন আর ব্যাটিংয়ে নামল না ভারত উদ্দেশ্য তখনই পরিষ্কার হয়ে যায়, বাংলাদেশকে যতদ্রুত সম্ভব অলআউট করা! কোহলিদের পরিকল্পনায় মুক্তহস্ত ছিলেন টাইগাররা। লাঞ্চের আগেই খোলাসা হয়ে পড়ে পরিণতি, চা বিরতির আগেই ষষ্ঠ উইকেট সাজঘরে। ইনিংস পরাজয় তখন কেবল সময়ের ব্যাপার!

সেটি একটু দীর্ঘ হয়েছে ছোট দুই লড়াইয়ে। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই ফিরে যান অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রথম ইনিংসের (১০) চেয়ে বেশি রান করেছেন তিনি, ১৫! সেখান থেকে প্রথম প্রতিরোধ গড়েন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস।

৭২ রানে ৫ উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলানোর চেষ্টায় মুশফিক-লিটন ৭৭ বলে যোগ করেন ৬৩ রান। এরপর বাজে শটে বিদায় লিটনের। ওয়ানডে স্টাইলে খেলে তুলছিলেন ৩৯ বলে ৩৫ রান, তখন উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে বল ফেরত দেন বোলার অশ্বিনের হাতে। ফিরতি ক্যাচ সহজেই তালুবন্দী করেন স্বাগতিক অফস্পিনার।

মুশফিকের পরের প্রতিরোধ মেহেদী মিরাজকে নিয়ে। এই জুটিতে উঠেছে ৫৯ রান। যাদবের বলে ৫ চার ও এক ছক্কায় ৩৮ করা মিরাজ বোল্ড হলে ভাঙ্গে জুটি।

ততক্ষণে ফিফটি তুলে নিয়েছেন মুশফিক। শেষদিকে আরও কিছু রান দিয়েছেন প্রথম ইনিংসেও দলীয় সর্বোচ্চ ৪৩ করা ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তাতে দুইশ পেরিয়েছে সংগ্রহ। এদিন ফিরেছেন ৬৪ করে। ৭ চারে ১৫০ বলের টেস্টসুলভ ইনিংস। তার ক্যারিয়ারের ২০তম অর্ধশতক। ম্যাচে বাংলাদেশের একমাত্র ফিফটি।

বাংলাদেশের হার এগিয়ে আনতে দিনের সেরা বোলার মোহাম্মদ সামি। এ পেসার নিয়েছে ৪ উইকেট, প্রথম ইনিংসে তার নামের পাশে ছিল ৩ উইকেট। এছাড়া ৩টি উইকেট নিয়েছেন অশ্বিন, যাদব ২টি, আর একটি ইশান্তের।

বাংলাদেশ -ভারত সিরিজবাংলাদেশ দলের ভারত সফরলিড স্পোর্টস