বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়ের রাজত্বের অবসান হোক

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ হিসেবে একক কোনো কারণ খুঁজে পায়নি পুলিশ। অনেকগুলো বিষয়ের সমষ্টিতেই আবরার ফাহাদকে পেটানো হয়। পাশাপাশি হত্যায় জড়িতরা রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে। যাদের সবাই উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত ছিল। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে চার্জশিট জমা দিয়ে পুলিশ বলছে, ‘একজনকে মেরে অন্যজনকে শিক্ষা দিতে কিংবা জুনিয়রদের মধ্যে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করতে তারা দীর্ঘদিন ধরে র‌্যাগিংয়ের নামে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল।’

বুয়েটের এই আলোচিত হত্যাকাণ্ডে দ্রুত সময়ে চার্জশিট দিতে পারায় পুলিশের ভূমিকা প্রশংসনীয়। এভাবে অপরাধীরা দ্রুত তাদের দণ্ড বুঝে পাবে বলে আবরারের পরিবারের মতোই আমাদের বিশ্বাস। একইসঙ্গে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন হত্যাকাণ্ড কেন ঘটছে তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারের ঘটনা দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয় জাগানিয়া র‌্যাগিং সংস্কৃতির মুখোশ উন্মোচন করেছে। এক আবরারের জীবনাবসান ঘটেছে, কিন্তু অসংখ্য আবরারের মানসিক অবস্থার মৃত্যু হচ্ছে প্রতিদিন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা এ ধরনের নোংড়া র‌্যাগিংকাণ্ডে জড়িত তারাও অন্য শিক্ষার্থীদের মতো মেধাবী। কিন্তু ছাত্র রাজনীতির অবক্ষয়ের প্রামাণ্য দলিল হয়ে উঠছে তারা। সেই সাথে তাদেরও নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে, হয়ে উঠছে হিংস্র। যাদের হিংস্রতায় প্রাণ যাচ্ছে আবরারদের।

এক্ষেত্রে তারা যে শুধু শিক্ষার্থী নির্যাতনের মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখছে তা নয়, শিক্ষকদের অসম্মান করার ক্ষেত্রেও তারা অগ্রগামী। সম্প্রতি অনৈতিক দাবি না মানায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলতেও দ্বিধা করেনি তারা। এ ঘটনা দেশের মানুষের মনে কী প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে তা সহজেই অনুমেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা নিরসন হওয়া জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চা, বিনোদন, খেলাধুলা, সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির চর্চা- সবই চলবে একসঙ্গে। কারণ এসবই একজন শিক্ষার্থীকে পরিপূর্ণ মানুষ করে তুলতে, প্রকৃত দেশপ্রেমিক করে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। এর ব্যতিক্রম যেসব ঘটনা ঘটছে সেসব যেন আর না ঘটে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যারা এসব কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আবরার হত্যায় দ্রুত চার্জশিট দেয়ার এই ঘটনা নজির হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আমরা মনে করি। এরপরও কেউ যেন এসব না ঘটায় সেজন্য প্রয়োজনে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভয়ের রাজত্বের অবসান হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে জ্ঞান চর্চার উন্মুক্ত আকাশ হয়ে উঠবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

আবরারআবরার ফাহাদর‍্যাগিংসম্পাদকীয়