বিশ্বকাপের ছোঁয়া পাননি যে কিংবদন্তিরা

মুখে যত সহজে বলা যায়, বিশ্বকাপ জয় তার চেয়ে ভীষণ রকম কঠিন- কথাটা শচীন টেন্ডুলকারের। পাঁচ দফা চেষ্টার পর ষষ্ঠবারে এসে বহু আরাধ্য বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরার পর এমন উপলব্ধি হয়েছে ভারতীয় কিংবদন্তির।

ক্রিকেট ও বিশ্বকাপের পথচলার ইতিহাস বেশ রঙিন। এই শিরোপাটা সর্বোচ্চ আকাঙ্ক্ষার। দীর্ঘ ইতিহাসজুড়ে সর্বসময় ক্রিকেটকে বিশ্বময় বিদ্যালয় করে চলেছেন একের পর এক কিংবদন্তি। যাদের অনেকেরই সুযোগ হয়নি আরাধ্য বিশ্বকাপ ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরার।

গ্রাহাম গুচ

গ্রাহাম গুচ
নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন ইংলিশ কিংবদন্তি। তিনবার ফাইনাল খেলেছেন। কিন্তু একবারও শিরোপাটা ছুঁয়ে দেখা হয়নি তার। ১৯৮৭ বিশ্বকাপের সেমিতে মুম্বাইয়ে ভারতকে দারুণ এক শতকে বিদায় করে দিয়েছিলেন। খেলেছে ১৯৯২ আসরের ফাইনালেও। কিন্তু শিরোপা আর উঁচিয়ে ধরা হয়নি তার। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত লম্বা সময় খেলে বিশ্বকাপ জিততে না পারার আক্ষেপ সঙ্গী গুচের।

ইয়ান বোথাম

ইয়ান বোথাম
সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছেন দুবার। কিন্তু ইংল্যান্ড আর গ্রাহাম গুচের মতো সমান দুর্ভাগা ইয়ান বোথাম।

ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় খেলেছেন সমান ফর্ম নিয়ে। তার আগুনে ফর্মের দেখা মিলেছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপে। সেই আসরের ১০ ম্যাচে নিয়েছেন ১৬ উইকেট। তারপরও একজন বিশ্বকাপ অপ্রাপ্তির তালিকায় নাম বোথামের। তার মতো সেরার শিরোপা জিততে না পারার মতো বিশ্বকাপ জিততে পারেনি ইংল্যান্ডও।

ওয়াকার ইউনুস

ওয়াকার ইউনুস
ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম কঠিন এক সত্য। সময়ের সেরা পেস বোলার হয়েও চোটের কারণে ১৯৯২ বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি ওয়াকার ইউনুস। অথচ ওই বিশ্বকাপে সবাইকে অবাক করে শিরোপাটা জিতে নেয় পাকিস্তান।

ওয়াকারের পরিবর্তে পাকিস্তানের বোলিং লাইনআপকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওয়াসিম আকরাম। তিনি বদলে দেন পাকিস্তান ক্রিকেটের হালচালও। সতীর্থের উল্লাস আর শিরোপা জয়ের আনন্দ বাইরে থেকেই দেখতে হয়েছে ওয়াকারকে।

১৯৯২ বিশ্বকাপের আক্ষেপ পুষিয়ে দেয়ার সেরা সুযোগটা পেয়েছিলেন ওয়াকার, ১৯৯৯ বিশ্বকাপে। দুর্দান্ত খেলা পাকিস্তান সেবার উঠেছে ফাইনালেও। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কাছে 8 উইকেটের পরাজয়, বিশ্বকাপটা না ধরেই থেকে যায় পাকিস্তানি কিংবদন্তির।

সৌরভ গাঙ্গুলি

সৌরভ গাঙ্গুলি
খেলেছেন তিন বিশ্বকাপে। তার হাত ধরেই ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ভারত। মূলত গাঙ্গুলির হাত ধরেই নতুন করে বদলে যাওয়া ভারতীয় দলের। দীর্ঘ সময় আক্ষরিক অর্থেই সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশ্বমঞ্চে নিজে পেয়েছেন ৩ শতকের দেখা। সেবার পুরো আসরে দুর্দান্ত খেলা ভারতের দৌড় থামে ফাইনালে। রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে।

বিশ্বকাপ ইতিহাসে ট্র্যাজেডির নায়ক হয়ে থাকবেন গাঙ্গুলি। বিশ্বকাপে মোট ২২ ম্যাচ খেলে ১০০৬ রান করেছেন ‘প্রিন্স অব কলকাতা।’

ব্রায়ান লারা

ব্রায়ান লারা
ক্রিকেটের বরপুত্র খ্যাত মহাতারকা জন্মেছেন ক্যারিবীয় ক্রিকেটের দুঃসময়ে। ক্রিকেটে যখন লারার উত্থান, তখন থেকে নিজেদের সোনালি সময়ের শেষটা দেখতে শুরু করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ!

টেস্ট ক্রিকেটে যতটা বর্ণাঢ্যময়, ওয়ানডে ক্যারিয়ার ততটা সোনায় মোড়ানো ছিল না লারার। ২৯৯ ওয়ানডে খেলে তিনবার দেড়শো ছুঁইছুঁই ইনিংস খেলতে পেরেছেন ক্যারিবীয় সাবেক অধিনায়ক। যাত্রা পথে বিশ্বকাপ ধরা দেয়নি তার হাতে।

ল্যান্স ক্লুজনার

ল্যান্স ক্লুজনার
১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমিতে ল্যান্স ক্লুজনার সেই পাগলাটে দৌড়টা না দিলে বিশ্বকাপের ইতিহাস অন্যভাবেও লেখা হতে পারত! মাত্র এক রানের জন্য বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে না পারাটা এখনও ভূতের মতো ঘাড়ে চেপে আছে সাউথ আফ্রিকার। এর পেছনে অনেকে দায় দিয়ে থাকেন ক্লুজনারকে।

অথচ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে বিধ্বংসী খেলে সাউথ আফ্রিকাকে আসরের সেমি পর্যন্ত নেয়ার পেছনে ক্লুজনারের অবদানটা ছিল অনেক। ব্যাটিং-বোলিংয়ে অসাধারণ নৈপুণ্য ছিল প্রোটিয়া অলরাউন্ডারের। সবকিছু শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে সেমি ফাইনালে হেরে।

জ্যাক ক্যালিস

জ্যাক ক্যালিস
না পাওয়াদের তালিকায় আরেক সাউথ আফ্রিকান। ক্রিকেটে সর্বকালের সেরাদের ছোট্ট তালিকার একজন হয়ে আছেন, কিন্তু বিশ্বকাপটা জেতা হয়নি।

ওয়ানডে ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার যার আছে ১১ হাজার রান ও ২৭৩ উইকেট। ১৭ শতকের মালিকও তিনি। প্রোটিয়া ক্রিকেটের সোনালি সময়ের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হয়েও বিশ্বকাপ জিততে না পারা ক্যালিসের জীবনের অন্যতম আক্ষেপ!

কুমার সাঙ্গাকারা

কুমার সাঙ্গাকারা
ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ পর্যন্ত নিজের সেরাটা দিয়েছেন সাঙ্গা। গত আসরে হাঁকিয়েছেন রেকর্ড টানা চার শতক। তবে ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালটা নিশ্চয় এখনো পোড়ায় লঙ্কান কিংবদন্তিকে।

শুরুটা উইকেটরক্ষক হিসেবে করলেও পরে পুরাদস্তুর ব্যাটসম্যান বনে গিয়েছিলেন সাঙ্গাকারা। ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ে বিশ্বকে মুগ্ধ করে রেখেছেন লম্বা সময়। প্রিয় বন্ধু মাহেলা জয়াবর্ধনেকে নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছেন দুবার।

কিন্তু ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ২০১১তে ভারত, দুই দলের কাছে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে লঙ্কানদের। তাই সাঙ্গা-মাহেলা কেউই পাননি বিশ্বকাপ ছোঁয়ার আনন্দ।

ওয়ানডে বিশ্বকাপ না জিতলেও টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পেয়েছেন সাঙ্গাকারা। অন্তত একটা বিশ্বকাপ জিতে তবেই বিদায় জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে।

এবি ডি ভিলিয়ার্স

এবি ডি ভিলিয়ার্স
মাঠের এমন কোনো কোণা ছিল না যেখান দিয়ে বল বাইরে পাঠাতে পারতেন না ভিলিয়ার্স। তার মতো একজন ব্যাটসম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখেই এখন বড় হচ্ছে ভবিষ্যতের একটা ক্রিকেট প্রজন্ম।

৫৩.৫০ গড় ও ১০০ স্ট্রাইকরেট নিয়ে বিদায় বলা ভিলিয়ার্স খেলতে পারতেন আরও একটা বিশ্বকাপ। কিন্তু ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে হার আর সাউথ আফ্রিকার হয়ে কোনো শিরোপা জিততে না পারার শোকটা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন ওয়ানডেতে ৩১ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান।

শহিদ আফ্রিদি

শহিদ আফ্রিদি
বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানের হয়ে নতুন দিক উন্মোচন করেছিলেন আফ্রিদি। তার ৩৭ বলে সেঞ্চুরি ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ধরে রেখেছিল দীর্ঘ সময় ধরে। লম্বা সময় ধরে ক্রিকেটপ্রেমীদের বিনোদন যুগিয়ে যাওয়া আফ্রিদি শেষ পর্যন্ত কোনো বিশ্বকাপ ছাড়াই শেষ করেছেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।

ওয়াকার ইউনিসকুমার সাঙ্গাকারাডি ভিলিয়ার্সবিশ্বকাপ-২০১৯ব্রায়ান লারালিড স্পোর্টসসৌরভ গাঙ্গুলি