বিশ্বকাপের আগে পথের খোঁজে মাশরাফী

আগের চারটি সিরিজে যা হয়েছিল এবারও তাই হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে একে একে পাঁচটা সফরে কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। বুধবার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে হেরে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচের শেষে অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা বলেছেন, নিজেদের মৌলিকত্ব (বেসিক) ধরে রাখতে না পারাতেই এই হাল হয়েছে। ফলে এখান থেকে বের হতে বিশ্বকাপের একটা পথ বের করতে হবে বলে জানান তিনি।

ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘একটা জিনিস, ফিল্ডিং চাইলেই উন্নতি করা যায়। বোলিং বা ব্যাটিংয়ে একটু সময় লাগে। এখানে স্কিলের ব্যাপার আছে। ফিল্ডিংয়ে চেষ্টা করলে দেখতে ভালো লাগে, চেষ্টাটা বোঝা যায়।। হয়তো সবাই মানসিকভাবে একটু ধাক্কা খেয়েছিল। মানসিকভাবে একটু তাড়াহুড়োও ছিল, তাই গড়বড় হয়ে গেছে। যে ফিল্ডার থাকে তারা বিভ্রান্ত হয়ে যায়। আর সব সময় একই ছন্দে তো থাকা সম্ভব নয়, ক্যাচ মিস তো হতেই পারে।’

সব মিলে ‘বেসিকের’ জায়গাতেই সমস্যা হয়েছে বলে মনে করেন ম্যাশ, ‘প্রথম দুই ম্যাচে না হওয়ার পর আমি না, পুরো দল তারপরও পজিটিভ ছিলাম। আমরা মনে হয় ভিন্ন কিছু করতে গেছিলাম। এই উইকেটে একটু সুইং বা বাউন্স থাকবে স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু বেসিকে থাকাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যেটা আমরা থাকতে পারিনি। কালকে হয়তো চিন্তা করিনি, কারণ পজিটিভ তো থাকতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে তামিম রান করেছে, কিন্তু এশিয়া কাপে ২০-২৫ রানে ৩ উইকেট গেছে, এখানেও তাই হয়েছে।’

বিশ্বকাপের আগে এই ফলাফল অস্বস্তি দায়ক হলেও সামনে তাকাচ্ছেন মাশরাফী, ‘পরের টুর্নামেন্টের এখনো দুই মাস বাকি, আমাদের একটা পথ বের করতে হবে। আয়ারল্যান্ডে প্রায় একই রকম কন্ডিশন, আগেরবার তো ঘাস বেশি ছিল। অনেক সময় কন্ডিশন আমাদের পক্ষে ছিল না। কীভাবে রান করব, সেটা আমাদের বের করতে হবে। ১০ ওভার পরে ব্যাটিং করা সহজ হয়ে যায়, এটা আমাদের বুঝতে হবে।’

অনেক নেতিবাচক বিষয়ের মধ্যে ইতিবাচক কিছুও ছিল। দলের হতাশার মাঝে মাশরাফী স্বস্তি ও ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছেন মিঠুন-সাব্বিরে, ‘আমাদের লোয়ার মিডল অর্ডারে আমরা কিছু রান করেছি। মিঠুন দুই মাচে রান করেছে। সাব্বির আজকে সেঞ্চুরি করেছে, আগের ম্যাচেও ভালো করেছিল। সাইফ উদ্দিন রান করছে, আজ বোলিংও ভালো করছে। ইতিবাচক যা আছে সেটা একটু পেছনের দিকে, কিন্তু ম্যাচ জিততে হলে টপ অর্ডার থেকে কিছু করতে হবে। নেতিবাচক তো অনেক কিছু, তবে কিছু ইতিবাচক আছে।’

প্রথম দুই ম্যাচে যেভাবে বাংলাদেশ হেরেছে, আজ তার চেয়ে অন্য রকম কিছুর আশা ছিল। শুরুতে বোলিং নিয়েছিল বাংলাদেশ, একটা সময় পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের রানও খুব বেশি ছিল না। তবে জেমস নিশাম আসার পরেই তরতর করে বাড়তে শুরু করে রানের গতি। মাশরাফী ঐ সময় খেই হারিয়ে ফেলাকেই বড় করে দেখছেন, ‘নিশামের ইনিংসটাই টার্নিং পয়েন্ট। ৩৫ ওভার পর্যন্ত তাদেরকে আমরা এমন একটা জায়গায় রেখেছিলাম, ওই সময় আরেকটু ভালো বোলিং বা ফিল্ডিং করলে ওদেরকে ৩০০’র নিচে রাখারও একটা সুযোগ ছিল। চারজন পড়ে যাওয়া মানে ওদের টেল-এন্ডারে জুটি না হতে দিলে অবশ্যই ওদেরকে আটকে রাখার সুযোগ ছিল। তবে ওই সময় যে শট খেলেছে বা ঝুঁকি নিয়েছে তাতে ওরা সফল হয়েছে। আর আমরা পারিনি।’

দশম ওভারের দ্বিতীয় বল শেষেই টিভি পর্দায় দেখা যায় তামিম ইকবাল মুশফিককে কিছু একটা বলছিলেন, তখন মুশফিককে একটু ক্ষিপ্ত দেখাচ্ছিল। তা নিয়ে ধারাভাষ্যকাররা কথা বলছিলেন। অধিনায়ক কথা বলেছেন সেই ঘটনা নিয়েও, ‘সবাই হয়ত ভুল বুঝেছে। ব্যাপারটা ছিল একেবারে ভিন্ন, ‘হাতে ব্যথা করছিল ওটাই দেখাচ্ছিল। কারণ ব্যাট করার সময় ওর আঙুলের নখ ফেটে গিয়েছিল, ওটাই দেখাচ্ছিল অনেক ব্যথা করছে ব্যাটিং করতে কষ্ট হচ্ছিল। এটাই। আমার মনে হয় যে যেটা বুঝেছে ভুল বুঝেছে। ও যেটা বুঝাতে চাচ্ছিল যে হাতে ব্যথা করছে।’

সাব্বিরের সেঞ্চুরির পরও ৮৮ রানে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের ৩৩১ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে ১৬ বল বাকি থাকতে ২৪২ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা। সেই সঙ্গে তিন ম্যাচের সিরিজের স্কোর হয় ৩-০।

মাশরাফীলিড স্পোর্টস