‘প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিএনপি’র জঙ্গিপক্ষাবলম্বন জঙ্গি দমনে বড় প্রতিবন্ধকতা’ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার দুপুরে ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউ এর সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমসাময়িক প্রসঙ্গে তিনি একথা বলেন।
রাজধানীর গুলশানে ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনার পর গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রশংসা করে সদ্য ঘোষিত হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের রায়ের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের রায়ে ৭ জনের ফাঁসি হয়েছে। এই হলি আর্টিজানে জঙ্গিরা যেভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তারপর গণমাধ্যমে যে রিপোর্ট হয়েছে, আমি মনে করি সেগুলো এ ঘটনার গভীরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বা এই ঘটনার বিচার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভবিষ্যতে যাতে আর জঙ্গি তৈরি না হয়, এই রিপোর্টগুলো সেবিষয়েও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’
অপরদিকে বিএনপি’র ভূমিকাকে জঙ্গি দমনের প্রতিবন্ধক বলে বর্ণনা করে ড. হাছান বলেন, ‘দুঃখের বিষয় জঙ্গিদের যখন ধরা হচ্ছিল, তখন এই বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন কিছু লোককে ধরে এনে কিছুদিন রেখে দেয়া হয়, চুল-দাড়ি লম্বা হলে তাদেরকে নাকি জঙ্গি হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তৃতায় এই ধরণের দায়িত্বহীন কথাবার্তা বারংবার বলেছেন। যখনই কোনো জঙ্গি ধরা হলো, বা এনকাউন্টারে যখন কোনো জঙ্গির মৃত্যু হয়, তখন তারা নানা প্রশ্ন তুলেছেন। এই যে পরোক্ষভাবে বা প্রত্যক্ষভাবে জঙ্গিদের সহায়তা করা, এটি জঙ্গি দমনে বড় প্রতিবন্ধকতা।’
‘আমরা জঙ্গিদমনে পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রের চেয়ে সফল উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা জঙ্গি নির্মূল করতে পেরেছি, একথা আমি বলবো না। কিন্তু জঙ্গিবাদ এবং জঙ্গি দমন করতে সক্ষম হয়েছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইউরোপেও এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। আমাদের দেশে যেভাবে ঘটনা প্রবাহ ঘটছিল, সেগুলো সরকারের তড়িৎ পদক্ষেপে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী, একইসাথে গণমাধ্যমের সম্মিলিত ভূমিকার কারণে সেই জঙ্গিবাদ দমনে অনেক দেশের তুলনা আমরা অনেক সফল হয়েছি।
‘গণমাধ্যম ভাষাহীনদের ভাষা এবং ডিআরইউ পুরস্কার একটি ভালো উদ্যোগ’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এসময় বলেন, সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দেয়ার মতো দায়িত্বশীল রিপোর্টিং-এর ক্ষেত্রে এধরণের পুরস্কার অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা যাদের ভাষা নেই তাদেরকে ভাষা দিতে পারে, যার কাছে ক্ষমতা নেই তাকে ক্ষমতাবান করতে পারে, যে প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না, তাকে প্রতিবাদী হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে। সুতরাং এ দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এজন্যই গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। স্বাধীনতার পূর্বকালে আমাদের স্বাধিকার সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা উত্তরকালে গণতন্ত্রকে শেকলবন্দি করে গণতন্ত্রের নামে যখন ‘মার্শাল ডেমোক্রেসি’ চালু করা হয় তখনও, গণমাধ্যমের যে বিশাল ভূমিকা, তা অনস্বীকার্য।
তিনি বলেন, একইসাথে আরো যে বিষয় মাথা রাখা প্রয়োজন, সেটি হচ্ছে একটি ভুল কিংবা অসত্য রিপোর্ট যে সমাজ, রাষ্ট্র বা কোনো ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এটি সাংবাদিকদের দায়িত্ব।
মন্ত্রী বলেন, ‘আজকাল সবার আগে সর্বশেষ সংবাদ পরিবেশন করতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক সময় ভুল রিপোর্ট পরিবেশিত হয়েছে, বিশেষ করে অনলাইন মাধ্যমে।যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সুতরাং এক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’
অনুষ্ঠানে ৯টি ক্যাটাগরিতে ‘ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড’ হিসেবে ১০ জন বিজয়ীর হাতে ক্রেস্ট, সনদপত্র ও নগদ ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের চেক তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন পুরস্কারের জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি শাহজাহান সরদার ও জুরি বোর্ডসদস্য জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি সাইফুল আলম ও সিনিয়র সাংবাদিক মনোয়ার হোসেন। ডিআরইউ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
এবারের বিজয়ীরা হলেন- প্রিন্ট ও অনলাইন ক্যাটাগরির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে দৈনিক যুগান্তরের মিজানুর রহমান চৌধুরী, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে ডেইলি স্টারের মোহাম্মদ আল-মাসুম মোল্লা, অনুসন্ধানে বাংলা ট্রিবিউনের শাহেদ শফিক, বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে যুগ্মভাবে দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের জসিম উদ্দিন হারুন ও দৈনিক কালের কণ্ঠের জিয়াদুল ইসলাম, ক্রীড়ায় দৈনিক প্রথম আলোর তারেক মাহমুদ, সাহিত্য-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যে দৈনিক সমকালের তপন দাস। টেলিভিশন ক্যাটাগরিতে সেবাখাতে এনটিভির শফিক শাহীন, অনুসন্ধানে একাত্তর টিভির আদনান খান (নয়ন আদিত্য) এবং বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে চ্যানেল ২৪ এর মোর্শেদ হাসিব হাসান।