বিএনপির চিঠি অন্তঃসারশূন্য ‘স্টান্টবাজি’ মাত্র: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন: প্রধানমন্ত্রী বরাবর বিএনপির চিঠি অন্তঃসারশূন্য এবং ভারতবিরোধী ‘স্টান্টবাজি’ ছাড়া আর কিছুই না।

সোমবার দুপুরে ঢাকায় সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী বরাবর বিএনপির পক্ষ থেকে গতকাল দেয়া চিঠির বিষয়ে সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেন: সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং চুক্তি (এগ্রিমেন্ট) এর পার্থক্য বুঝতে যে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে, এই চিঠিতে তা স্পষ্ট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যে ভারত সফরের পর মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে, সংসদে এবং সংবাদ সম্মেলনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরসহ সব বিষয় ব্যাখ্যা করে বলেছেন, সেটি জানার পরও বিএনপির এই চিঠি অন্তসারশূন্য এবং ‘স্টান্টবাজি’ ছাড়া আর কিছুই নয়। বিএনপি যে ভারতবিরোধী রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসেনি সেটি বোঝানোর জন্যই তারা মূলত: এ চিঠিটি দিয়েছে, অন্য কোনো কিছু না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের এ প্রথম চিঠিতে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে একটি শব্দও না থাকায় প্রশ্ন জাগে- তারা আসলে তার মুক্তি চায় কি না ?

এসময় পাল্টা প্রশ্ন রেখে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া তার সময় দু’বার ভারত সফর করেছেন, ৭টি চুক্তি করেছেন। এই চুক্তিগুলো করার পর তিনি কি রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করেছিলেন, সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন? বেগম জিয়া রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করেননি, সংবাদ সম্মেলন করে এগুলো প্রকাশও করেননি, এমনকি পার্লামেন্টেও ব্যাখ্যা করেননি। খালেদা জিয়া তো পার্লামেন্টেই যাননি। তিনি পুরো পাঁচ বছরে ৭বার পার্লামেন্টে গিয়েছেন। বিএনপি নিজেরাই এগুলো করেনি। অথচ তারা যে প্রসঙ্গগুলোর অবতারণা করেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবগুলোই করেছেন।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, গতকাল বিএনপির পক্ষ থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব স্বাক্ষরিত একটি চিঠি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেয়া হয়েছে, যেটি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া গ্রহণ করেছেন। সেই চিঠি খুললে আপনারা দেখতে পাবেন, বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রথমবারের মতো তারা প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন, কিন্তু সেখানে কোনো জায়গায় খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নেই। একটি শব্দও বেগম খালেদা জিয়ার জন্য নেই। স্বভাবত প্রশ্ন জাগে, বিএনপি আসলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় কি না! ফখরুল সাহেব যখন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কথা বলেন, শারীরিক বিষয়াদি নিয়ে কথা বলেন, সেগুলো কি নিছক জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য ?’

ড. হাছান বলেন, ‘সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বিএনপির ভাষ্য অনুযায়ী যে ‘চুক্তি’গুলো হয়েছিল, সেগুলো সম্পর্কে বিএনপির এ চিঠি অনুযায়ী তাদের ভাষ্য হচ্ছে, ‘জনগণ জানুক’। অথচ এই সফরে কিন্তু কোনো নতুন চুক্তি হয়নি। এ সফরে যেগুলো হয়েছে সেগুলো হচ্ছে এমওইউ বা সমঝোতা স্মারক (মেমোরান্ডাম অভ্ আন্ডারস্ট্যান্ডিং) ও এসওপি (স্ট্যান্ডার্ন্ড অপারেশন প্রসিডিউর) এবং শুধুমাত্র আমাদেরকে দেয়া ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের আলোকে এক্সিম ব্যাংক ঢাকায় একটি অফিস খুলবে সেই মর্মে একটি চুক্তি। অন্য কোনো চুক্তি সেখানে সই হয় নাই। অথচ বিএনপির চিঠিতে বলা হয়েছে ‘চুক্তি’। বিএনপির মতো একটি দল এবং তাদের মহাসচিব ‘চুক্তি’ আর ‘এমওইউ’র পার্থক্য বুঝতে পারেন না, এটি হাস্যকর।’

‘বিএনপি’র বক্তব্য- এগুলো জনগণ জানেনা, এবং তারাও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানে এবং এগুলো রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার প্রয়োজন আছে, বিধান আছে’ –তা খণ্ডন করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনরা জানেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে যান এবং তারপর তিনি রাষ্ট্রপতিকে সবকিছু অবহিত করেন। সেই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী এবারও ভারত সফর থেকে এসে রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করে সফর সম্পর্কে সবিস্তারে অবহিত করেছেন। সেটিও বিএনপি জানে।’

ড. হাছান বলেন, ‘শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর থেকে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন। এবারও তিনি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এবং সেখানে ভারতে সফরকালে কি কি বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে, সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, সব তিনি গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশের জনগণকে অবহিত করেন। তাঁর পার্লামেন্টের বক্তৃতায়ও এ বিষয়গুলো সবিস্তারে বলেছেন, এমনকি বিএনপি’র পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রশ্নের জবাবেও তিনি সমস্ত বিষয় ব্যাখ্যা করে বলেছেন।’

‘বিএনপিকে বলবো, বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে বরং জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে এসেছেন সেগুলো প্রতিটি দেশের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এবং দেশকে সমৃদ্ধি করার লক্ষ্যে, এবিষয়টি বোঝার চেষ্টা করতে’, বলেন তথ্যমন্ত্রী।

ড. হাছান বলেন, ‘ফেনী নদীর ৮০০ কিউসেক পানিপ্রবাহ থেকে মাত্র ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি তারা খাবার পানি হিসেবে নেবে, এই মর্মে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ৮০০ কিউসেক এর মধ্যে ১.৮২ কিউসেক হচ্ছে ৪০০ ভাগের একভাগেরও কম। সেই পানি এখনো তারা নিচ্ছে, কিন্তু সমঝোতা স্মারকে সেটা একটা ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে আনা হয়েছে’।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, এলপিজি গ্যাস আমাদের দেশে আমরা উৎপাদন করি না, বিদেশ থেকে আসে। মূলত: আমাদের দেশের পুরো বাজারটা হচ্ছে আমদানি নির্ভর এলপিজি গ্যাস। সেই এলপিজিতে ‘ভ্যালু এড’ করে ভারতে রপ্তানি করার জন্য সমঝোতা স্মারক হয়েছে। বিদেশ থেকে কাপড় এনে রেডিমেড গামেন্টস এক্সপোর্ট করে আমাদের অর্থনীতিতে যেমন প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তেমনি আমাদের ‘এক্সপোর্ট বাস্কেটে’ আরেকটি এরকম পণ্য যুক্ত হয়েছে- এলপিজি, এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য সহায়ক। এটি তারা ভালোই বোঝে। এরপরও বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য তারা (বিএনপি) এই কথাগুলো বলে।’

সমুদ্রবন্দরের বিষয়ে ড. হাছান বলেন, ‘একইসাথে চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য পূর্বের চুক্তির আলোকে স্ট্যান্ডার্ড অব প্রসিডিউর সই হয়েছে। এই দু’টি বন্দর তারা যদি ব্যবহার করে, তাহলে আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধতর হয়। কারণ, এই বন্দর ব্যবহার করা ও বন্দর থেকে মালামাল পরিবহণের জন্য আমাদেরকে রেভিনিউ দিতে হবে। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা মালামাল পরিবহণের অনেক সুযোগ পাবেন। সিএন্ডএফ এজেন্ট থেকে শুরু করে বন্দর অনেক রেভিনিউ পাবে, এটা তো আমাদের অর্থনীতির সহায়ক। এটা যে তারা (বিএনপি) বোঝেন না, তা কিন্তু নয়। তারা মূর্খ বলে আমি মনে করি না, কিন্ত তাদের বক্তব্যগুলো মূর্খের মতো।’

বঙ্গোপসাগরে রাডার স্থাপন নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, প্রতিবেশী দেশের ট্রলার এসে আমাদের মাছ ধরে নিয়ে যায়। এটি ধরার জন্য আমাদের কোস্টগার্ডের রাডার সিস্টেম যথেষ্ট নয়, রাডার সংকট রয়েছে। রাডার সিস্টেমকে উন্নত করার জন্য ভারত আর্থিক সহায়তা দিবে, যা নিয়ে রাডার আমরা স্থাপন করবো, আমরা সেটার মালিকানা থাকবো। আমরা সেটা অপারেশন করবো। সবকিছুই আমরা করবো। আমাদেরই মালিকানা। এতে করে আমাদের কোস্টগার্ড সমৃদ্ধ হবে।’

‘সুতরাং বিএনপি যে বক্তব্যগুলো দিচ্ছে, চিঠি দিচ্ছে, তা আসলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘প্রথমত: তাদের এই চিঠি প্রমাণ করে, তারা সমঝোতা স্মারক ও চুক্তির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। দ্বিতীয়ত: তারা একটিবারও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আনেনি। এতে স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে যে, তারা আসলে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কতটুকু ‘সিরিয়াস’! না কি তারা খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে, বাইরে রাজনীতি করে সহানুভূতি আদায় করতে চায়- সেই প্রশ্ন জাগে। আর তৃতীয়ত: এই চিঠি দেয়ার মাধ্যমে তারা এটিই প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে, তারা ভারতবিরোধী রাজনীতি থেকে বিচ্যুত হয়নি। পুরোপুরি ভারতবিরোধী রাজনীতি নিয়েই তারা এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যেতে চায়।’

মন্ত্রী ড. হাছান বলেন, ‘আপনরা জানেন যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমা জয় করে সমুদ্রে প্রায় আরেকটি বাংলাদেশ অর্জন করেছি। সীমান্তে যে লক্ষ লক্ষ মানুষদের পরিচয় ছিল না, তারা দেশ-পরিচয়হীন ছিল, ছিটমহলের সেই মানুষগুলোর পরিচয় ফিরিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৪ সালের যে চুক্তিকে বিএনপি সবসময় গোলামির চুক্তি বলতো, সেই চুক্তির আলোকেই কিন্তু তা হয়েছে।’

‘আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতি হচ্ছে সবার সাথে সুসম্পর্ক কারো সাথে বৈরিতা নয়’, স্মরণ করিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্বার্থকে অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে, কোনো অবস্থাতেই আমাদের স্বার্থ আদায় করার ক্ষেত্রে পিছ পা হবো না, হই না এবং প্রতিবেশিদের সাথেও সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে চাই। সেই নীতির আলোকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশ পরিচালনা করছেন। ভারতে সফরে গিয়েও সেই নীতির আলোকেই সমঝোতা স্মারক সই করেছেন।’

আওয়ামী লীগড. হাছান মাহমুদবিএনপি