আমার বাবা গান লিখেছেন- ‘গাছের একটা পাতা পড়লে/কাছের একজন মানুষ মরলে কে তার খবর রাখে?’ আমি আজকে বাবাকে বলবো, বাবা। দেখো, সারা বাংলাদেশ আজকে তোমার খবর রাখছে, সারা বাংলাদেশ আজকে তোমার জন্য কাঁদছে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রয়াত নির্মাতা আমজাদ হোসেনের মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই শোক প্রকাশ করছিলেন তার বড় ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল।
শনিবার সকাল থেকে প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক আমজাদ হোসেনকে শহীদ মিনার চত্বরে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সর্বস্তরের জনসাধারণ। যেখানে শেষবারের মতো গুণী এই নির্মাতা, অভিনেতা ও গীতিকারকে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হয়েছেন চলচ্চিত্র ও শিল্প সাহিত্যের বিভিন্ন সংগঠন।
শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে আমজাদ পুত্র দোদুল বলেন, আমার বাবা ছিলেন নির্লোভ একজন মানুষ। তিনি দেশকে নিজের থেকেও বেশী ভালোবাসতেন। সেই ‘জীবন থেকে নেয়া’ থেকে শুরু করে ‘কাল সকালে’ পর্যন্ত তার কলম যেভাবে চলেছে, তার চেতনা যেভাবে চলছে, তার বুদ্ধি যেভাবে চলেছে তা অপূর্ব। অসাধারণ।
বাবার মৃত্যু শোকের মধ্যেও আমজাদ হোসেনকে নিয়ে এক অজানা স্মৃতির কথাও উচ্চারণ করেন দোদুল। বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সিনেমা আমার বাবা নির্মাণ করেন। সিনেমার নাম ছিলো ‘বাংলার মুখ’, আমরা সেই সিনেমার পোস্টার দেখেছি। একাত্তরের যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এই ছবিটির দৃশ্য ধারণ করা হয়। কিন্তু এফডিসি থেকে কোনো কালো হাত সেই ছবির পিকচার ও সাউন্ড নেগেটিভ গায়েব করে দেয়। যদি ‘বাংলার মুখ’ আলোর মুখ দেখতো তাহলে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে উচ্চারিত হতো আমার বাবার ছবির নাম, ‘ওরা ১১ জন’ নয়।
নিজের ইচ্ছানুযায়ি জামালপুরে সমাহিত হবেন আমজাদ হোসেন। সে কারণও ব্যাখ্যা করলেন দোদুল। বললেন, জামালপুর কবরস্থানের প্রতি বাবা একটা কাব্য তৈরী করেছেন সেই ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ থেকে। ওই ছবিতেও ট্রেন থেকে একটা শটে জামালপুরের কবরস্থানকে আব্বা রেখেছেন। তৎকালীন সময়ে জামালপুরের মানুষ যখন সিনেমাটি হলে দেখেছে তখন চিৎকার দিয়ে বলতো, এই আমাদের জামালপুরের কবর। আর বাবাও জামালপুরকে খুব ভালোবাসতেন।
গেল শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আমজাদ হোসেন। এর আগে গেল ১৮ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোক করে রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় ২৮ নভেম্বর রাতে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ব্যাংককে নেওয়া হয়।
ছবি : নাহিয়ান ইমন