বাজেট নিয়ে বিএনপির বক্তব্য নির্লজ্জ মিথ্যাচার: কাদের

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিএনপি যে বক্তব্য দিয়েছে তাকে নির্লজ্জ মিথ্যাচার বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন: আজকে বিএনপি বাজেটকে নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে চলেছে। আমি বিএনপির বন্ধুদের উদ্দেশে বলতে চাই, জাতীয় সংসদে তো আপনাদের প্রতিনিধি রয়েছে। বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে।

শনিবার ধানমণ্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন: গত ১৩ জুন জাতীয় সংসদে মাননীয় অর্থমন্ত্রী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ৫ লক্ষ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতার কারণে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট উপস্থাপনের মাধ্যমে দক্ষ নেতৃত্বের এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। দেশের সর্বস্তরের জনগণ ও বিশেষজ্ঞ মহল এই বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছেন।

‘আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে- এবারের বাজেট জনকল্যাণমুখী বাজেট। সাফল্য আর অগ্রগতির নবতর সম্ভাবনা সঞ্চারি বাজেট। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্মিত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিত্তিমূলকে আরও সুদৃঢ় ও গতিশীল করণে নব-উদ্যম সৃষ্টিকারী বাজেট।

২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ১১টি বাজেট ঘোষণা করেছে। বিগত দশটি বাজেট ও কর্মপরিকল্পনার ফসল আজকের বাংলাদেশের অর্থনীতির সুদৃঢ় ভিত্তি। সকলেই মানবেন যে কোন মানদণ্ডে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি শক্তিশালী কাঠামোতে রূপ লাভ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচনা করে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, ১৯৭২-৭৫ সালে বাংলাদেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল গড়ে শতকরা ৫ ভাগ। বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে এ সময়ে আয় বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিলো শতকরা ৭ ভাগ। ১৯৭৬-১৯৮০ সালে (মুশতাক-জিয়া আমল) জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়ায় ৪.৭ ভাগ এবং ১৯৮০-৮১ হতে ১৯৮৫-৮৬ সালে (জিয়া-এরশাদ আমল) জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার আরও হ্রাস পেয়ে মাত্র ৩.৬ ভাগে দাঁড়ায়।’

তিনি বলেন: জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ আরও অনেক আগেই বিশ্বের বুকে উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হতো। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘৃণ্য ঘাতকরা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকেই হত্যা করেনি। তারা হত্যা করেছিল বাংলাদেশের সম্ভাবনাকেও। তারা বুলেট বিদ্ধ করে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতিকে বিলম্বিত করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রায় তিন দশক জিয়া-এরশাদ-খালেদা’র অপশাসনে বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল পর্যুদস্ত।

‘‘অথচ আজকে সেই বিএনপি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্মারক ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ; সময় এখন আমাদের সময় এখন বাংলাদেশের’ শীর্ষক বাজেটকে নিয়ে নিলর্জ্জ মিথ্যাচার করে চলেছে। আমি বিএনপি’র বন্ধুদের উদ্দেশে বলতে চাই- জাতীয় সংসদে তো আপনাদের প্রতিনিধি রয়েছে। বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে। শুধু বিরোধীতার খাতিরে বিরোধীতা না করে জনগণের কল্যাণে কোনো প্রস্তাব থাকলে তা সুনির্দিষ্টভাবে সংসদে উপস্থাপন করুন। যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব গ্রহণের মতো উদারতা সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সরকারের রয়েছে। নির্বাচনের আগে সকল রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়েছে।’’

ওবায়দুল কাদের বলেন: দেশবাসী ভুলে যায়নি, বিএনপি নেতারা গত ১০টি বাজেট ঘোষণার পর বাজেট নিয়ে নানা ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন এবং বরাবরই বলেছেন বাজেট বাস্তবায়ন হবে না, অর্থনীতি মুখথুবড়ে পড়বে। এ ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করতে দেখা গেছে। এবারও তারা একই কায়দায় অযৌক্তিকভাবে জনকল্যাণকর এই বাজেটের বিরুদ্ধে তাদের চিরাচরিত বিরোধীতার রাজনীতি শুরু করেছে। অবশ্য বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মাত্র ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করেছিল। তাদের পক্ষে জনগণের কল্যাণের লক্ষে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দেওয়া ৫ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেটের ব্যাপকতা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। এটাই স্বাভাবিক।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন: দেশবাসী যখন অগ্রগতির সোপান জনকল্যাণকর এই বাজেটকে সাধুবাদ জানিয়েছে- তখন গুটি কয়েক মানুষ শুধুমাত্র সরকারের বিরুদ্ধাচারণের জন্যই মনগড়া ও বিভ্রান্তমূলক মন্তব্য করে যাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন- বাংলাদেশের অর্থনীতি নাকি ঝুঁকির মুখে পড়বে! তাদের উদ্দেশে বলবো- অর্থনৈতিক ঝুঁকি তখনই বৃদ্ধি পায় যখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়, রিজার্ভ ঝুঁতিতে থাকে এবং বৈদেশিক ঋণ অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছায়। বর্তমানে অর্থনীতির এই তিনটি খাতেই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৫.৫০ শতাংশ, রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বৈদেশিক ঋণের পরিমাণও জিডিপি’র ১৫ ভাগের নিচে রয়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এই অর্থবছরেই ২০২০ সালে মাথাপিছু আয় ২ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়াবে। যা ২০০৮ সালে ছিল মাত্র ৬১৯ ডলার।

ওবায়দুল কাদের বলেন: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের সম্পদ জনকল্যাণে ব্যয় হয় বলেই গত এক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকল সূচকেই কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সকল সঙ্কট ও সমস্যা মোকাবিকলা করে এক সময়ের তলাবিহীন ঝুঁড়ি থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটআওয়ামী লীগওবায়দুল কাদেরবিএনপি