করোনা: বাইরে বের হলে সঙ্গে পরিচয়পত্র রাখতে আইজিপি’র আহ্বান

দেশজুড়ে চলমান করোনা ভাইরাস সঙ্কটে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণকে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। প্রয়োজনে বাইরে বের হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রদর্শনের জন্য পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেন তিনি

রোববার করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দেশব্যপী পুলিশের সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

করোনা মোকাবেলায় সকলকে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও অনুরোধ জানিয়ে আইজিপি বলেন, আপনারা প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে যাবেন না। জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা, বিভিন্ন হোটেল-দোকানের কর্মচারী কিংবা প্রয়োজনে যারা বাইরে বের হবেন তারা পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখবেন। যাতে রাস্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কারণ জানতে চাইলে প্রদর্শন করতে পারেন।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা পুলিশের নিয়মিত দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিয়মিত দায়িত্বের পাশাপাশি করোনা বিস্তার রোধে পুলিশের সকল ইউনিট একযোগে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে পুলিশের সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়, গতিশীল ও ফলপ্রসূ করতে পুলিশ সদর দপ্তরে ২৪/৭ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।

‘ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সকল ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছি। ক্ষুদেবার্তায় অপারেশনাল সকল কমান্ডারকে সরকারের সকল নির্দেশনা পৌঁছে দিচ্ছি। কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষনিকভাবে পরিস্থিতির আপডেট নিচ্ছি এবং সে অনুযায়ী করনীয় সম্পর্কে নির্দেশনা পৌঁছে দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, পুলিশ প্রথম থেকেই আইইডিসিআর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সকল ধরনের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। স্বার্বক্ষনিকভাবে আমাদের সঙ্গে প্রশাসনের সকল পর্যায়ে আমাদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে, যে কোন প্রয়োজনে তাদেরকে সকল ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।

পুলিশ সদস্যরা প্রথম থেকে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আসা লোকদের ইমেগ্রেশন থেকে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতে নির্দেশনা সম্বলিত প্রচারপত্র দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ইমিগ্রেশন থেকে বিদেশফেরতদের তালিকার সংগ্রহ করে সকল এসপি এবং ইউনিটের কাছে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকেও সেই তালিকা দেওয়া হয়েছে, যাতে তারাও পর্যালোচনা-পর্যবেক্ষন করতে পারেন।

পুলিশ সদস্যরা প্রথম থেকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়েছে। বিদেশফেরতদের প্রায় প্রতিটি বাড়ি স্টীকার দিয়ে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে উল্লেখিত ঠিকানায় পাওয়া যায়নি। পরবর্তিতে তাদের অবস্থান জানাতে অনুরোধ জানিয়ে নির্দেশনা দিয়েছি। যেন তারা যেখানে আছেন সেখানেই কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে পারি।

পুলিশের বিনীত আহ্বানে যারা সাড়া দেননি এবং নির্দেশনা অমান্য করেছেন বিভিন্ন জায়গায় অনেককে জরিমানা করা হয়েছে। পুলিশ নিজে থেকে বিভিন্ন জায়গায় কোয়ারেন্টিনে থাকাদের প্রনোদনা হিসেবে ফল, স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হয়েছে। অনেক এলাকায় ফোন করলে সরাসরি বাজারও পৌঁছে দেয়ার দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে পুলিশ।

করোনা সংকটে প্রচুর গুজব ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত গুজব এবং ভুল খবরের বিরুদ্ধে ব্যপক প্রচারণা চালনো হচ্ছে। সচেতনতার পাশাপাশি সাইবার টিম নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জড়িত কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ বেশকিছু আইডি বন্ধ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, করনীয়-বর্জনীয় সম্বলিত ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করে সার্বক্ষনিকভাবে আমাদের ফিল্ড কমান্ডারদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। তাৎক্ষনিক সারা দেশের সংবাদ সংগ্রহ করে, সে অনুযায়ী করনীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিচ্ছি।

পুলিশ সদস্যদেরকে জনগণের সঙ্গে পেশাদার আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনার মানবিক এবং ধৈর্যশীল আচরণ করুন। শুধু বাংলাদেশই নয় সারা বিশ্ব এখন বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এ সময় সকলের পাশে থাকতে চাই, সকলের সঙ্গে থেকে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। নিশ্চই আমরা সবাই মিলে এ যুদ্ধে জয়ী হবো।

আইজিপিকরোনা