১০ মাসের করোনা বিরতির পর বুধবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছে বাংলাদেশ। টাইগারদের নতুন পথচলায় শুরু হচ্ছে অধিনায়ক হিসেবে তামিম ইকবালের নতুন অধ্যায়। মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে শুরু বেলা সাড়ে ১১টায়।
তামিম আগেও বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তা ছিল নিয়মিত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে। আনুষ্ঠানিকভাবে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে হতে যাচ্ছে টাইগার ওপেনারের নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
গত বছরের মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সবশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছিল বাংলাদেশ। করোনার পেটে গেছে পরে বছরের পুরোটাই। নতুন বছরে শুরু হচ্ছে নতুন অভিযান। নতুন চ্যালেঞ্জে নামার আগে নতুন অধিনায়ক জানালেন মাঠে সাফল্য পেতে চেষ্টায় কোনো কমতি থাকবে না।
‘মাশরাফী ভাই দলের জন্য অনেককিছু করেছেন। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি আমার সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করবো। আর খেলোয়াড়দের কথা ধরলে কিছু খেলোয়াড় আছে যাদের মনে হয় কাছে গিয়ে একটু বুঝাই, আবার কয়েকজন আছে যাদের নিজেদের জায়গা প্রয়োজন হয়। এটি বুঝতে হবে, কোন খেলোয়াড়ের বিষয় নিয়ে ভাবছেন। সেভাবেই কাজ চালাতে হবে।’
৩১৪ দিনের দীর্ঘ বিরতির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নামতে যাওয়া স্বাগতিকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ক্যারিবীয়দের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ সফরে সেরা দল না পাওয়া। করোনা সংক্রমণের ভীতির কারণে তাদের অনেক তারকা ক্রিকেটারই সিরিজ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। যে কারণে উইন্ডিজ দল হয়ে গেছে খর্বশক্তির।
নতুন চেহারার অনভিজ্ঞ দলের বিপক্ষে টাইগারদের নির্বিঘ্নে সিরিজ জয়ের প্রত্যাশাই থাকবে সবার। অবশ্য প্রতিপক্ষের দিকে না তাকিয়ে তামিম অপেক্ষায় দীর্ঘ বিরতির পর ভালো শুরুর।
‘সিরিজ জেতা অবশ্যই জরুরি। কিন্তু আমার যেটা মনে হয়, কালকের ম্যাচটা শুরু করাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। কারণ ভালো শুরুটা সবচেয়ে জরুরি। আমরা যদি ভালো শুরু করতে পারি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় একবছর পরে ফিরছি। প্রথম শুরুটা, প্রথম ৫ ওভার বোলিং করি বা ব্যাটিং, ভালো শুরুটা জরুরি।’
‘এরপরে সবই জেতার চেষ্টা করে যাবো। কিন্তু প্রথমে কালকের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। বাড়তি চাপ শুধু বাংলাদেশের জন্য না, বিশ্বে সব দলের জন্যই। কারণ সবাই ভালো করতে চাইবে।’
‘ওরা(উইন্ডিজ) কি দল পাঠাবে, কে আসবে বা না আসবে। আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে আমাদের ভালো খেলা। এখন তো সিরিজগুলো নরমাল সিরিজ না, যেখানে হারলে সমস্যা নেই। ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাইংয়ের জন্য প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, শুধু সেটাতেই আমরা ফোকাস করছি। যেটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই, সেটা নিয়ে আলাপ করে খুব বেশি লাভ নেই।’
তামিমের নেতৃত্বের ধরন কেমন হবে সেটি জানতে কৌতূহল রয়েছে সবার। অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটার জানিয়েছেন নিজস্ব শক্তি-সামর্থ্যের জায়গাই পাবে বিশেষ গুরুত্ব।
‘যেটা সবসময় প্রায়োরিটি দেই, আমাদের বাংলাদেশি ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট উন্নত করতে হবে। সবসময় একটা কথা বলেছি, প্রত্যেকটা দেশের নিজের নিজের স্টাইল আছে। সুতরাং মনে হয় না আমাদের অন্য কাউকে ফলো করা উচিত। আমরা হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো স্ট্রং না, বা অস্ট্রেলিয়ার মতো বিল্ড আপ না, তবে আমাদের এমন অনেক অ্যাডভান্টেজ আছে যা অন্যদের টিমে নাই।’
‘যেটা তৈরি করতে চাই সেটা হল বাংলাদেশি ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট, যেটা আমরা খেলি। আমরা অন্যদের ফলো না করে ওটাতেই ফোকাস করতে চাই। আমাদের যেখানে শক্তির জায়গা, যেগুলো দিয়ে আমরা ভালো খেলতে পারি, সেটা দিয়ে ব্র্যান্ড। সেখানেই আমরা ফোকাস করছি।’
প্রায় ১৫ মাস পর এই সিরিজে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়াবেন সাকিব আল হাসান। একবছরের নিষেধাজ্ঞা গত বছরের অক্টোবরে উঠে গেলেও শ্রীলঙ্কা সফর স্থগিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে আর নামা হয়নি বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডারের।
সাকিব ফিরেই ব্যাটিংয়ে নিজের পছন্দের তিন নম্বর পজিশন পাচ্ছেন না। তাকে খেলতে হবে চার নম্বরে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নাজমুল হোসেন শান্তকে দেখা যেতে পারে তিন নম্বরে। সৌম্য সরকারকে বিবেচনা করা হচ্ছে না টপঅর্ডারে। একাদশে থাকলে দেখা যাবে সাত নম্বরে ব্যাট করতে। তামিমের সঙ্গে যথারীতি ওপেনিংয়ে দেখা যাবে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা লিটন দাসকে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা তার শেষ মেয়াদে ৬ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। সাফল্যের হার ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। ম্যাজিক্যাল মাশরাফী সাধারণ একটি দলকে নিয়ে গেছেন শক্তিশালী দলের কাতারে। দিন বদলের নায়কের উত্তরসূরি হিসেবে তামিম বাংলাদেশকে কোথায় নেবেন, সময়ই দেবে উত্তর।