ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী কার্যক্রমে অংশ নেয়ায় বিশ্বভারতীর বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আফসারা আনিকা মীমকে দেশ ছাড়তে নোটিশ দিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদেশিদের আঞ্চলিক রেজিস্ট্রেশন অফিস থেকে আফসারাকে ভারত ত্যাগের চিঠি দেওয়া হয়।
দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, বাংলাদেশ থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থী আফসারা আনিকা মীম বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মীম বাংলাদেশের কুষ্টিয়া থেকে ২০১৮ সালের শেষের দিকে সেখানে কলা অনুষদের ডিজাইনে স্নাতক করতে আসেন।
গত ডিসেম্বরে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের একাংশ নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে একাধিক সমাবেশ করেন।
ওই শিক্ষার্থী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেয়ার কিছু ছবি তার ফেসবুকে পোস্ট করে। পরে ওই পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার শিকার হয়।
নোটিশে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাইনের স্নাতক কোর্স পড়ুয়া আফসারা আনিকা মীম সরকারবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। এ ধরনের কার্যকলাপে তার ভিসার শর্ত লঙ্ঘন হয়েছে।
নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তাকে ভারত ত্যাগ করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ‘দ্য টেলিগ্রাফ।’
অন্যদিকে নোটিশ পাওয়ার পর আফসারা মীম জানিয়েছেন, পড়াশোনার বিষয়ে আমি অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। আমি কী ভুল করেছি যার জন্য এ ধরণের শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে তা এখনও বুঝতে পারছি না। আমার বেশিরভাগ বন্ধুরা এই প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়েছিল বলে কৌতুহলে আমি কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছি। কিন্তু যখন আমি দেখতে পেলাম যে একটি বিশেষ গোষ্ঠী সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে ট্রোল করছে, তখনই আমি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিলাম। আমি সত্যিই নির্দোষ।
তিনি আরও বলেন, আজ আমি বিভাগ থেকে চিঠি পেয়েছি, তারপর থেকেই অন্ধকার অনুভূতি আমাকে আকস্মিক করে তুলেছে। আমি শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখে বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা করতে ভারত এসেছি। আমার এখন কী হবে আমি জানি না।
মীমের এক বন্ধু বলেন, মীম সিএএর বিরুদ্ধে কোনও সমাবেশে অংশ নেননি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেবল কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। তার পোস্টটি বেশ কয়েকজন ডানপন্থী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, যারা তাকে ট্রোল করেছিল এবং তাকে ফেরত পাঠানোর দাবি করেছিল।
কলকাতায় বাংলাদেশের ডিপুটি হাইকমিশনের সূত্র জানিয়েছে, আফসারাকে ভারত ছাড়ার নোটিশ সম্পর্কে অবগত নই। তবে আমরা জানতাম যে সে স্ক্যানারের অধীনে ছিল এবং আমাদের উর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে আমরা খুব সামান্যই করতে পারি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের একাংশ সন্দেহ করছেন যে, কেউ তার ক্যারিয়ার শেষ করতে ওই মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলা হয়, মীমকে এ বিষয়ে দুটি ইমেইল করা হয়েছিল। ১৯ তারিখে দেখা করার কথা জানিয়ে প্রথম ১৪ ফেব্রুয়ারি মেইল করা হয়। পরে ২০ ফেব্রুয়ারি তাকে ২৪ ফেব্রুয়ারি অফিসে রিপোর্ট করতে বলে আরেকটি মেইল করা হয়।
এ বিষয়ে আফসারা মীম বলেন, আমি নিয়মিত আমার ইমেল চেক করি না। চিঠি পাওয়ার পরে আমি আমার ইমেলটি চেক করেছিলাম।
আফসারা জানিয়েছে, তার কয়েকজন বন্ধুবান্ধবসহ বৃহস্পতিবার কলকাতায় বিদেশি আঞ্চলিক রেজিস্ট্রেশন অফিসের কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তটি পর্যালোচনা করার জন্য অনুরোধ করবে।