এবছর শুরু থেকে শেষ অবধি বলিউড ইন্ডাস্ট্রির তিন খান বেশ সমালোচনায় ও আলোচনায় ছিলেন। তবে ছবি নিয়ে যতোটা আলোচনায় ছিলেন ঠিক ততটা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে বেশ বলিপাড়া সহ পুরো ভারত জুড়ে সমালোচনায় আগুনে পুড়েছেন শাহরুখ ও আমির খান। এদিক থেকে সালমান খান বেঁচে গেলেও নিজের মামলা নিয়ে বেশ বির্তকের মধ্যে পড়েছেন তিনি।
শাহরুখ খান:
ভারতের মহারাষ্ট্রে গরুর মাংস নিষিদ্ধের জের ধরে এক মুসলমান ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা, কানাড়া ভাষার এক লেখককে হত্যাসহ সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শাহরুখ খান প্রথম বলিউডের কোনো অভিনেতা যিনি এ বিষয় নিয়ে মুখ খোলেন। নিজের ৫০তম জন্মদিনে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে কথা বলায় তুমুল বির্তকে জড়ান বলিউডের কিং খান শাহরুখ খান।
মন্তব্যের পরই বিজেপির নেতাদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। ভিএইচপি নেত্রী সাধ্বী প্রাচী বলেন, পুরস্কার ফেরানোর কথা বলে রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছেন এসআরকে। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
যারা যারা পুরস্কার ফিরিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেরই রাষ্ট্রদ্রোহিতার শাস্তি হওয়া উচিত। অনেকে আবার বলেছেন, শাহরুখ পাকিস্তানের দালাল তাকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হোক। তবে শাহরুখের পাশে বলিউডের অনেক তারকারা পাশে ছিলেন জাতীয় পুরস্কার জয়ী অভিনেত্রী অপর্ণা সেন, সালমান খান।
তবে পরিস্থিতি গরম থাকায় মিড ডে’র সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে শাহরুখ অবশ্য নিজের মন্তব্য অস্বীকার করে তিনি জানান, কখনোই আমি বলিনি ভারত অসহিষ্ণু। আমি যখনই কোনো বিষয় সম্পর্কে বলি প্রায়ই সেগুলোকে বিকৃত ভাবে, ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হয়। এটা খুবই বিরক্তিকর।
আমির খান:
এক খানের আগুন নিভতে না নিভতেই আবারে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে তোপের মুখে পড়েন বলিউডের আরেক খান আমির খান।
বছরের শেষের দিকে একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ‘পিকে’ খ্যাত এ আমির ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত বলে মন্তব্য করেন। তখন তিনি বলেন, ‘আমি, আমার সন্তানরা এবং আমার স্ত্রী কিরণ মনে প্রাণে ভারতীয়। তবুও আমার স্ত্রী ভারতের বর্তমান পরিস্থিতিতে শঙ্কিত হয়ে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে দেশের বাইরে চলে যাওয়া উচিত বলে মনে করছেন।
এমন মন্তব্যের পরই পুরো ভারত আমিরে উপর ক্ষোভে ফেটে ওঠে। ক্ষমতাসীন বিজেপির তোপের মুখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বলিউড পাড়ায়ও চলে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। উগ্রবাদীদের তোপের মুখে পড়া আমির খানকে চড় মারার জন্য একটি ওয়েব সাইটও খোলা হয়।
এছাড়া শিব সেনা আমিরকে চড় মারার জন্য ১ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেন। হত্যার হুমকিও দেওয়া হয় আমির ও শাহরুখকে। ক্ষোভ যখন তীব্র আকার ধারণ করে তখনি হঠাৎ করে আমেরিকায় পরিবারসহ বেশ কিছুদিনের পাড়ি জমান তিনি। পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হবার পর বর্তমানে তিনি দেশে রয়েছেন।
আমিরের এ বিপদের অবশ্য বলিউডের তেমন কাউকেই কাছে পাননি তিনি। তবে তার বিপদে পাশে ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী এ আর রহমান ও নায়িকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। শাহরুখ খান বা সালমান খানকে তেমনভাবে পাশে পাননি আমির।
সালমান খান:
শাহরুখ খান ও আমির খান এ বছর যে আগুনে জ্বলেছেন অবশ্য সালমান খান সেই অাগুনে না জ্বলেও জ্বলেছেন দীর্ঘদিনের হত্যা মামলা রায় নিয়ে। এবছর ২০১৫’এ শুরুতে ২০০২ সালে গাড়িচাপা মানুষ হত্যা মামলায় মুম্বাই হাইকোর্ট পাঁচবছরেরে কারাদণ্ড প্রদান করেন। তবে জামিনে মুক্ত হয়ে সিনেমা ‘বাজরাঙ্গি ভাইজান’ ছবির কাজ শেষ করেন তিনি।
সাক্ষ্য প্রমাণ তেমন কোনো মিল না পাওয়ায় আদালত বছরের শেষের দিকে সালমানকে এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেন। তবে আসল ঘটনা শুরু মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর। হত্যা মামলা থেকে অব্যহতি পেতে ২৫ কোটি রুপি ব্যয় করেছেন সালমান ও তার বাবা সেলিম খান এমন খবরও ভারতীয় গণমাধ্যমের বাতাসে বইতে থাকে।
এছাড়া সালমান ফিরে আসায় বলিউডের নাকি সামগ্রিক ভাবে প্রায় ৫’শ কোটি রুপি বেঁচে গেছে। বছরের প্রখম দিকে ভালো না কাটলেও বছরের মাঝামাঝি সময়ে বক্স কাঁপানো সিনেমা ‘বাজরাঙ্গি ভাইজান’ ও বছরের শেষে ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’ দিয়ে এ বছরটি খুব ভালোভাবে শেষ করেছেন দাবাং খান সালমান খান।