পারিবারিক জীবনে অর্জিত শিক্ষাই সারাটা জীবন মানুষের মেধা ও মননে গ্রোথিত থাকে এবং সামাজিক আচরণের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসবাদের বিচরণ ও নব্য ছেলে-মেয়েদের জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতার পরিপ্রেক্ষিতের প্রশ্নে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিশুদের মানসিক ও মানবিক বিকাশের জন্য পরিবারতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়নের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। ফজিলাতুন নেছা মুজিব তার সন্তানদের আপন মহিমায় প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, সততা ও নিষ্ঠায় উজ্জীবিত করেছিলেন বাচ্চাদের। বাচ্চারাও শত অভাব-অনটনে মায়ের সততা ও একনিষ্ঠতা দেখে নিজেদের আপন মহিমায় শাণিত করেছিলেন। যার প্রমাণ তার জীবদ্দশায় ও বর্তমানে জীবিত দুই কন্যা সন্তানের মধ্যে দেখা যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ফজিলাতুন নেছা মুজিবের বেঁচে যাওয়া দুই সন্তানের আচার-আচরণে মায়ের প্রভাব লক্ষ্যণীয়। তারা মায়ের দেখানো পথেই সকল ধরনের লোভ, লালসা ও দুর্নীতির বাইরে এসে জীবনযাপন করছেন।
শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ১ম সন্তান দুনিয়াতে আসার আগেই মারা যায়। তাদের পরবর্তী সন্তান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সুনিবিড়, মনোরম পরিবেশে, ইতিহাসের পূণ্যভূমি, বাঙালির পীঠস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গজননীর ঘর আলো করে পৃথিবীতে আসেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিহাস কন্যা, গরীব দুঃখী মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতীক, বাঙালির উন্নয়নের কাণ্ডারী হিসেবে কাজ করছেন। শেখ হাসিনার জন্মের সময় ফজিলাতুন নেছার স্বামী রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত থাকায় আনন্দমেলায় উপস্থিত হতে পারেননি। কিন্তু ঘরে ঠিকই আনন্দের ছোঁয়া লেগেছিল, আত্মীয়-স্বজনে বাড়ি ভরে ওঠেছিল। ফজিলাতুন নেছার শ্বশুর শেখ লুৎফর রহমান শেখ হাসিনাকে দেখে আনন্দের আতিশয্যে বলেন ‘আমার নাতনি কেবল দেখতেই সুন্দরী হবে না, মনের দিক থেকেও সে হবে সমভাবে সুন্দর।’ মা ফজিলাতুন নেছা শেখ হাসিনার জন্মের মাধ্যমে অপার আনন্দ সকলের সঙ্গে একান্ত উৎসবের আমেজে উপভোগ করেন।
শেখ ফজিলাতুন নেছার বড় মেয়ে শেখ হাসিনা ১৯৫৬ সালে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (সরকারি বদরুন্নেসা কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। শেখ হাসিনা তার “বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম” নামক গ্রন্থে ফজিলাতুন নেছা মুজিবের পারিবারিক শাসনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তার ওপর আমরা মাকে তো আরও ভয় পেতাম, মার হাতে দু’চার ঘা যে খেতে হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘একজনকে মারতে ধরলে সবাইকে কিছু কিছু খেতে হতো। মা যখন পাখা হাতে রণরঙ্গিনী বেশে দাঁড়াতেন তখন কেউ বাদ যেত না। মনে হয় সংসারের নিত্য ঝামেলা আর অত্যাচার মুখ বুঁজে সইবার ফলে সন্তানের ওপর তার প্রতিক্রিয়া হতো। ইলেকট্রিসিটি আসার পর আমাদের ছোটরা আর মার খায়নি। কিন্তু অন্ধকার যুগের পাখা নামক অস্ত্রটির প্রয়োগ বেদনা আজও আমার দেহ স্মরণ করে।’ বোঝাই যাচ্ছে, ফজিলাতুন নেছা মুজিব সন্তানদের নিজ দায়িত্বে মানুষ করার সবটুকু চাপ ও কর্তব্য পালন করতেন।
শেখ ফজিলাতুন নেছা মাটির মানুষ হিসেবে নিজের সন্তানদের মানবিক ও বাস্তববাদী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। ছোট্ট একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে ফজিলাতুন নেছা কিভাবে তার সন্তানদের মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন সেটি বোঝাতে সহজ হবে। শেখ রেহানার ভাষ্যমতে, ‘আপা যখন ছোট তখন বাবা বিদেশ থেকে একটা ঘড়ি নিয়ে এসেছিলেন আপার জন্য। এখনকার মতো তখন ঘড়ি পরবার চল ছিল না। তিনি একদিন মাত্র ঘড়িটা পরে স্কুলে গিয়েছিলেন। আর পরেননি। তার কারণ হচ্ছে, তার বন্ধুদের কারো ঘড়ি নেই। সে জন্য মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল তার।’ এমন মানবিক পরিবেশে যখন কেউ বড় হয় বুঝতে হবে সেখানে তার মায়ের অবদান কতটুকু! পাশের মানুষ, প্রতিবেশি, বন্ধুদের নিয়ে নিজের থেকে ভাবা, অন্যকে প্রাধান্য দেওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলি যখন একটি পরিবারের ছেলেমেয়েরা শিখে তখন বুঝতে হবে নৈতিকভাবে সেই পরিবারের কর্তা ব্যক্তিটি নিঃসন্দেহে অনন্য, অতুলনীয়।
শেখ ফজিলাতুন নেছার বড় ছেলে শেখ কামাল, যিনি বাড়িরও বড় ছেলে ছিলেন। বঙ্গমাতার ২য় সন্তান শেখ কামালের জন্ম ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট। বঙ্গমাতা তার এ সন্তানের নামকরণ করেছিলেন তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্ক এর নামানুসারে। নামকরণের ক্ষেত্রে বেগম মুজিব তার পছন্দের ব্যক্তি ও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ মানুষের নামের সাথে মিলিয়ে নাম রেখেছিলেন। ছোট বয়স থেকে কামাল বাড়ির গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ করতেন। কারণ, শেখ কামালের বাবা অধিকাংশ সময় রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞ এবং জেলখানাতে ছিলেন। খেলাধূলা, নাটক, বিতর্ক সবকিছুতেই সমান পদচারণা ছিল শেখ কামালের। শেখ কামাল ছায়ানটের ছাত্র ছিলেন, মঞ্চ নাটকেও পারদর্শী ছিলেন। ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করে আন্দোলন সংগ্রামেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন শেখ কামাল। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর এডিসি হিসেবে কাজ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পর সেনাবাহিনী ত্যাগ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ অনার্স পাশ করেন। শেখ কামাল শাহীন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। খেলাধূলা ও সংস্কৃতি চর্চায় অন্তঃপ্রাণ ছিলেন কামাল। তার হাতের ছোঁয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট, ফুটবল, হকিসহ বিভিন্ন খেলাধূলা প্রাণ পায়। তিনি আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা, ছিলেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বাস্কেটবল অধিনায়ক। শেখ কামাল বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গণে অনেক বেশি সমৃদ্ধ হত। সংগীত অঙ্গণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন ‘স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী’ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে। সুসাহিত্যিক আবুল ফজল তার ‘শেখ মুজিব তাকে যেমন দেখেছি’ গ্রন্থে শেখ কামালের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তার ভদ্রতা, নম্রতা, শিষ্টাচার, বিনয়ী স্বভাবের অনেকটা যে মমতাময়ী মায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন সেটিও উল্লেখ করেছেন।
৩য় সন্তান শেখ জামালের জন্ম হয় ১৯৫৩ সালের ২৮ শে আগস্ট। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, আরব জাতীয়তাবাদের অগ্রদূত জামাল আব্দুল নাসের-এর নামানুসারে শেখ জামালের নামকরণ করা হয়। শেখ জামাল ধানমণ্ডির ১৮নং রোডের বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং সেনাবাহিনীর একজন কমিশন প্রাপ্ত অফিসার ছিলেন। শেখ জামাল ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। তিনি সেনাবাহিনীর একজন চৌকষ অফিসার ছিলেন এবং এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্যান্ডহার্স্ট থেকে সুনামের সহিত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। তিনি একজন ভালো ক্রিকেটার এবং গানের অনুরক্ত ছিলেন। চতুর্থ সন্তান শেখ রেহানার জন্ম হয় ১৯৫৬ সালে। ১৯৬৬ সনের ছয় দফা আন্দোলনের উত্তাল সময়ে জন্মগ্রহণ করেন শেখ রাসেল। শেখ রাসেলের নাম রাখা হয় বিশ্ব বিবেক, প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব বার্টান্ড রাসেলের নামানুযায়ী। শেখ হাসিনা ছায়ানটে গান শিখতেন, শেখ কামাল টিএসসিতে নাটক করতেন, খেলাধূলাতে শেখ কামালের প্রবল আগ্রহ ছিল। ফুটবল ক্রিকেটের পাশাপাশি হাইজ্যাম্প এবং লংজ্যাম্পে পারদর্শী ছিলেন শেখ কামাল। শেখ জামাল বন্ধুবৎসল ছিলেন, তার বন্ধুরাও তাকে খুব ভালবাসতেন।
খেলাধূলায় শেখ ফজিলাতুন নেছার ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ভীষণ উৎসাহী ছিলেন। অ্যাথলেট হিসেবে ছিলেন নির্ভেজাল, প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে খেলাধূলার মুগ্ধতা পেতেন শেখ রেহানা। নাচ এবং গানের দিকে বিশেষ ঝোঁক ছিল শেখ রেহানার। নাচ-গানের ছবিসহ পত্রিকায় ফিচার এসেছিল শেখ রেহানার নামে। মায়ের মত সহজ সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত শেখ রেহানা। বাবা প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্বেও স্কুলে রিকশায় চড়ে আসা-যাওয়া করতেন শেখ রেহানা। দায়িত্বের বিবেচনায় শেখ রেহানা অনন্য চরিত্রের অধিকারী, একবার কোন কাজের দায়িত্ব নিলে শেষ না করে যেন তার নিস্তার নেই। সংকল্প এবং ঋজু চরিত্রের কারণে ভীষণ দৃঢ় ও সংকল্পবদ্ধ শেখ রেহানা। নীরবে, নিভৃতে অবলীলায় দেশের জন্য কাজ করার প্রয়াসে তিনি সংকল্পবদ্ধ। শেখ রেহানা দারুণ অতিথিপরায়ণ, ভদ্র, নম্র ও মার্জিত স্বভাবের। এই গুণগুলো তিনি তার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন নিঃসন্দেহে। এখনো তিনি লন্ডনে চাকুরি করে সংসার চালান যদিও তার বড় বোন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সততার যে দৃষ্টান্ত ফজিলাতুন নেছা সন্তানদের মধ্যে স্থাপন করেছেন তা সত্যিকার অর্থেই অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।
শেখ রাসেল পরিবারের সব থেকে ছোট সন্তান ছিল বিধায় সকলেই আদর করত বেশি পরিমাণে। সকলের প্রাণের স্পন্দন হিসেবে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখতো রাসেল। শেখ রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। সেই ছোট্ট শিশুটিও খুনিদের লালিত পিপাসা থেকে রক্ষা পায়নি। অথচ, বাঁচার জন্য শিশুটি কত অনুনয়-বিনয় করেছিল খুনিচক্রের কাছে, কিন্তু তার পরেও শেষ রক্ষা হয়নি রাসেলের। ঘাতকদের খুনের নেশা থেকে মুক্তি পায়নি শেখ রাসেল। মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ রাসেল একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার ন্যায় কাজ করেছেন এবং এ কাজে সিকিউরিটি তেমন সন্দেহ করতো না। কারণ, যুদ্ধকালীন সময়ে রাসেলের বয়স ছিল ৭ বছর। এ বয়সে ফুলের ঝুড়ির ভেতর অথবা ওষুধের ঝুড়িতে অথবা বেডপ্যানের ভিতরে করে অস্ত্র পাচার করতো মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। অবশ্য এ কাজের সাথে শেখ রেহানাও জড়িত থাকতো। পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শেখ লুৎফর রহমানের বেডের নিচে অস্ত্র লুকিয়ে রাখতো। হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারি এমনকি স্বয়ং লুৎফর রহমানও এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পৃথিবীর অন্যতম নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার জীবন বিষময় হয়ে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত আশ্রয় হয় ভারত, দেশে আসার ব্যাপারে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাধা-বিপত্তি আসতে থাকে। অবশেষে, ১৯৮১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় শেখ হাসিনাকে। তারপর থেকেই দেশের মানুষের প্রত্যাশা মেটাতে শেখ হাসিনাকে দেশে আনার ব্যাপারে তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতারা উঠেপড়ে লাগেন কিন্তু সামরিক সরকার শেখ হাসিনার দেশে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বৃষ্টিস্নাত বিকেলে দেশে আসেন ফজিলাতুন নেছার বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। মানুষের সাথে সাথে প্রকৃতিও যেন ফজিলাতুন নেছার কন্যাকে বৃষ্টির জলে পরম মমতায় বরণ করে নিয়েছিল। সেদিন তিল ধারণের জায়গা ছিল না এয়ারপোর্ট এলাকায়, চতুর্দিকে লোকে লোকারণ্য ছিল।
শেখ হাসিনা ১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৬ সালে, ২য় বার প্রধানমন্ত্রী হন ২০০৯ সালে, ৩য় বার প্রধানমন্ত্রী হন ২০১৪ সালে এবং ৪র্থ বার ক্ষমতায় আসেন ২০১৯ সালে। বাঙালির মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতীক হয়ে সারা দিনরাত কাজ করে চলেছেন দেশ-বিদেশে ফজিলাতুন নেছা মুজিবের কন্যা। অবসর সময়ে লেখালেখিতে অভ্যস্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লেখক হিসেবে তিনি নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন ইতোমধ্যে। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে অনন্য হল: ‘ওরা টোকাই কেন?’, ‘বাংলাদেশের স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’, ‘দারিদ্র্য বিমোচন: কিছু ভাবনা’, ‘আমার স্বপ্ন, আমার সংগ্রাম’, ‘আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি’, ‘সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বঙ্গবন্ধু রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman’ Volume-1 & Volume-2 বইগুলো প্রকাশের পেছনে অসামান্য অবদান রেখেছেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ ফজিলাতুন নেছার বড় মেয়ে শেখ হাসিনা নিজ যোগ্যতা, দেশপ্রেমের মাহাত্ম্য এবং প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগ এবং সেটিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের মর্যাদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করছেন। ২০১৬ সনে জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত সাধারণ পরিষদের সভায় নারীর ক্ষমতায়নের জন্য “প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন” এবং “এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড” দুটি গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে নিজস্ব ব্যক্তিত্ব আর প্রায়োগিক সামর্থ্যকে আরও বেগবান করেছেন তৃতীয় বিশ্বের প্রতিনিধি হিসেবে। আর নারীর ক্ষমতায়নের শিক্ষা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের কাছ থেকেই পাওয়া। বিশেষ করে শিশু মৃত্যুর হার রোধকরণ, নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধন এবং নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বিশ্ব গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার উন্নয়ন, গণতন্ত্রায়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের সাফল্য বিশেষ গুরুত্ব সহকারে প্রচার করছে ইত্যবসরে। গ্রামীণ নারী, নারী উদ্যোক্তা, মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থা, চাকুরিতে নারীর অধিকার, রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পাদন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মাননা প্রদানসহ প্রতিটি সেক্টরে অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছেন।
শেখ হাসিনা তার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ন্যায় ক্যারিশম্যাটিক ক্ষমতা দেখিয়ে বিশ্বদরবারে বিশ্বনেতা হিসেবে নিজের আসনকে দিনদিন পাকাপোক্ত করে চলেছেন প্রায়োগিক দক্ষতা ও বিশেষত্ব দেখিয়ে। তার প্রাপ্তির চিত্র অন্তত সে কথাটিই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে। অর্জনের ক্ষেত্র রীতিমতো ঈর্ষণীয় অবস্থায় পৌঁছেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে শেখ হাসিনার বিচক্ষণ ও কৌশলী সিদ্ধান্ত দীর্ঘদিন রাজনৈতিক ইতিহাসে নজির হিসেবে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। সমসাময়িক যে কোন রাজনীতিবিদের তুলনায় একাডেমিক ও গবেষণা কাজে শেখ হাসিনা প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। শান্তি স্থাপনে ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৯৮ সালে হাটপাইয়েট-বোজনি; দেশ ও সমাজে শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অস্ট্রেলিয়া থেকে ১৯৯৯ সালে ডক্টর অব ল; শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি ব্রাসেলস থেকে ২০০০ সালে ডক্টরেট ডিগ্রী, মানবাধিকার রক্ষায় বিজপোর্ট ইউনিভার্সিটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০০০ সালে ডক্টরেট ডিগ্রী, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় রানডলপ ম্যাকন উমেনস কলেজ থেকে ২০০০ সালে পিরাল এস বুক-৯৯, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি এবং উন্নয়নের জন্য ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে ডি. লিট, জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখায় জাতিসংঘ থেকে ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ, ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিশেষ অবদান রাখায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী থেকে ২০১৫ সালে সেরেস, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও গণতন্ত্র প্রসারে গান্ধী ফাউন্ডেশন নরওয়ে থেকে গান্ধী পদক সহ আরো অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান জমানায় বাংলাদেশের রাজনীতি, উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকারের এজেন্ডা দেখে বিশ্ব গণমাধ্যমের আলোচিত খবরের কারণে সারা বিশ্বের সকলের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ পরিগণিত হতে শুরু করেছে। ফজিলাতুন নেছার কন্যা হিসেবে মায়ের আদর্শকে বুকে লালন করে বাংলাদেশ বির্নিমাণে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন গরিব, দুঃখী, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য।
চলবে….