ভুয়া রাজাকারের তালিকা হয়েছে, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকা হয়েছে। এবার যেনো ভুয়া প্রতিরোধ যোদ্ধার তালিকা না হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী কতজন?কতজন জীবিত, কতজন শহীদ, কতজন মুক্তিযোদ্ধা ও কতজন অমুক্তিযোদ্ধা এর একটি তালিকা করা উচিত৷ আর এসব প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সর্বস্বীকৃৃৃত বৈধ কোন সংগঠন আছে কি? থাকলে এর নাম কি? দলাদলি ও বিভক্তির মাঝে এখানেও দুটি প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদ।১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে জেলাওয়ারী কতজন শহীদ হয়েছে, তার একটি তালিকা কিন্তু একটি প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদও করেনি। কতজন জীবিত আছেন তার একটি সঠিক তালিকাও উপস্থাপন করেনি। কোন জেলার কত সংখ্যক মানুষ এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল৷ তাদের যুদ্ধের বিবরণ ও অংশগ্রহণকারীদের পরিচিতি কিছুই করেনি। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছেন সেটা বিষয় নয়। বিষয় হলো ৭৫ পরবর্তী সময়ের তার কার্যক্রমের মূল্যায়ন। এখন যাই হোক সেদিনে তার ভূমিকা ছিল উজ্জ্বল। কোন কিছু পাওয়ার আশায় তিনি সেদিন প্রতিবাদে যাননি। গিয়েছিলেন কেবলই বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসায়৷ বঙ্গবন্ধুর গড়া দল আওয়ামী লীগে তার না থাকতে পারার ব্যর্থতার দায় কেবল কাদের সিদ্দিকীর নয়, আওয়ামী লীগেরও রয়েছে। দুর্দিনের বন্ধুদের বুকে আগলে রাখাটা সংগত নয় কি?
সেদিন কাদের সিদ্দিকী উদ্যোগ না নিলে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ কি হতো? প্রতিবাদকারীদের কি তিনিই উদ্বুদ্ধ করেন নি? তাই তার ব্যর্থতা, সফলতা, ভুল আছে। কিন্তু তিনিও জেলাওয়ারি শহীদ ও জীবিত প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কোন তালিকা উপস্থাপন করতে পারেননি। সর্বস্বীকৃত প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নিয়ে কোন সংগঠনিক কাঠামোও গড়তে পারেননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে একটি বেতার বার্তায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কথা শুনে থমকে যায় সারাদেশ। বিভিন্ন এলাকায় খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়। অনেকেই তখন প্রতিবাদ করতে গিয়ে বন্দি হন, অত্যাচারিত হন৷ কিন্তু তারা কি পেয়েছেন নির্যাতনের বিনিময়ে নূন্যতম কোন মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি?
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় চারটি গণবাহিনীর একটির দায়িত্বে ছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকী। অন্য তিনটি বাহিনী ছিল মুজিব বাহিনী, হেমায়েত বাহিনী ও আফসার বাহিনী। আরও ছিল ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনী। এসব বাহিনী গড়ে উঠেছিল নিখাদ দেশপ্রেমের আবেগে৷ কোন কিছু পাওয়ার আশায় নয়৷ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে কতজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলো আর কতজন অমুক্তিযোদ্ধা৷ প্রজন্মকে কি জানানো উচিত নয়? দুটি প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদ কী তা জাতিকে জানাতে পেরেছে? তারা যুদ্ধে গিয়েছিল দুর্দিনে সংগঠন গড়লো সুদিনে। তাও আবার দুটি সংগঠন। একটি প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদ অপরটি সাধারণ প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদ৷ তবে কি প্রথমোক্তটি অসাধারণ প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদ? আর এসব প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদে কি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন? তার উপস্থিতি ছাড়া কি তা বৈধ হয়?
সংবাদপত্রে তাদের নিয়ে লেখালেখির সুবাদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ১ লাখ টাকা করে অনুদান ঘোষিত হলে সেখানেও ভুয়া প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অনুদান পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ তুলে প্রতিরোধ যোদ্ধারাই। এক্ষেত্রে শহীদদের কথা কেউ মনে না করেই হুমড়ি খেয়ে অনুদানের পথেই ছুটতে থাকলো সকলে৷ এসব কাদাছোঁড়াছুঁড়ি কি শহীদদের আত্মদানের প্রতি অসম্মান নয়? কেন তারা বলতে পারলোনা আমাদের অনুদান পরে আগে আমাদের শহীদদের স্বীকৃতি দিন৷ তারা দুষ্কৃতিকারী বিশেষণ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। জীবিতরাও আজও দুষ্কৃতিকারীই রয়ে গেছেন৷ আগে দুষ্কৃতিকারী বিশেষণ প্রত্যাহারের ঘোষনা ও পরে অনুদান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার বীর প্রতিবাদকারীরা আজ কেন এমন বীরোচিত আচরণ পাচ্ছে না ? ভুয়ারা অনুদান পেয়ে গেলে এর দায়টি কে নেবে?
বাঙালী জাতিকে কলঙ্কমুক্তিতে অবদানকারীদের মাঝে আমরা ভণ্ডামি চাইনা৷ চাই একটি সর্বস্বীকৃত প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদ। যাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সকল জীবিত প্রতিরোধ যোদ্ধারা উপস্থিত থাকবে৷ থাকবেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। উপস্থিত থাকবে বিভিন্ন মত পথে বিভক্ত হওয়া সেদিনের আসল প্রতিবাদকারীরা৷ তারা ঐক্যমতের মাধ্যমে উদ্যোগ নিয়ে প্রকাশ করবে দুষ্কৃতিকারী পরিচয় নিয়ে শহীদদের তালিকা। মৃত ও জীবিতদের তালিকা। কয়জন মুক্তিযোদ্ধা ও কয়জন অমুক্তিযোদ্ধা তার তালিকা। এমনটি করতে পারলেই তবে তারা স্বীকৃতি ও মূল্যায়নের পথে যেতে পারবে। নতুবা নয়৷
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)