জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু: যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক সংঘর্ষ, বেশ কিছু শহরে কারফিউ

পুলিশের হেফাজেতে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

শুরুতে শন্তিপূর্ণ থাকলেও এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপক মাত্রায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকারীদের উপর টিয়ার গ্যাস এবং রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। কয়েকটি শহরে পুলিশের যানবাহনেও আগুন দেয়া হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ক্ষত ‘নিরাময়ের’ আহ্বান জানিয়েছিলেন কিন্তু বলেছিলেন যে তিনি জনগণকে আধিপত্য বিস্তার করতে দিতে পারেন না।

গত সোমবার মিনেয়াপোলিসে পুলিশের হেফাজতে থাকার সময় মারা যান ৪৬ বছর বয়সী আফ্রিকান আমেরিকান নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড।

৪৪ বছর বয়সী শ্বেতাঙ্গ সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চাওভিনকে তার মৃত্যুর জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং সোমবার তাকে আদালতে তোলার কথা রয়েছে।

অনলাইনে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় যে, বেশ কয়েক মিনিট ধরে ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু গেড়ে বসে থাকেন চাওভিন। ফ্লয়েড বারবারই বলছিলেন, তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না।

এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো শহরে এই ঘটনায় শুরু হয় বিক্ষোভ। অন্তত ৩০ শহরে বিক্ষোভ করে বিক্ষোভকারীরা।

জর্জিয়া, আটলান্টায় বিক্ষোভকারীরা ভাংচুর চালানোর পর সেখানে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যান্য শহরের সাথে মিনেয়াপোলিস, আটলান্টা, লস এঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া, পোর্টল্যান্ড এবং লুইসভিলে রাতভর কারফিউ জারি করা হয়েছে।

এই ঘটনায় ট্রাম্প বলেন, ফ্লয়েডের মৃত্যু আমেরিকাবাসীকে ভয়, ক্রোধ এবং শোকে নিমজ্জিত করেছে। শান্তিপ্রিয় প্রতিটি আমেরিকানের সামনে বন্ধু হিসেবে দাঁড়াবো আমি। তবে ক্ষুব্ধ জনগণের কর্মকাণ্ড সহ্য করবো না, এটা চলবে না।

ওই সময়ে চাওভিন ছাড়াও উপস্থিত থাকা আরো তিন পুলিশ কর্মকর্তাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।

সোমবার রাতে একটি মুদি দোকান থেকে ফোন করে পুলিশকে অভিযোগ জানানো হয়, ফ্লয়েড একটি নকল ২০ ডলারের নোট দিয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে পুলিশের গাড়িতে তোলার চেষ্টা করার সময় তিনি মাটিতে পড়ে যান এবং বলেন যে তিনি ক্লসট্রোফোবিক বা আবদ্ধতায় তার ভয় কাজ করে। কিন্তু পুলিশ তার কথা না শুনেই তাকে হাতকড়া পরায়।

স্থানীয় চিকিৎসাকর্মী প্রাথমিকভাবে ময়না তদন্তের পর জানিয়েছেন যে, ফ্লয়েডের গলায় ওই পুলিশ কর্মকর্তার হাঁটু আট মিনিট ৪৬ সেকেন্ড ধরে চেপে ছিল।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্লয়েডের হৃদরোগজনিত সমস্যা ছিল, তারউপর তার গলা চেপে ধরা হয়েছিলো। এই দুইয়ের সমন্বয়ে তার দেহে প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের পদক্ষেপের কারণে ‘তার মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়েছে।’

ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় চাওভিনের বিরুদ্ধে থার্ড-ডিগ্রি মার্ডার এবং সেকেন্ড ডিগ্রি বেআইনি ও অনিচ্ছাকৃত নরহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

কারফিউকৃষ্ণাঙ্গপুলিশফ্লয়েডমৃত্যুযুক্তরাষ্ট্র