ঘূর্ণিঝড় ফণী ইতোমধ্যেই উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হেনেছে। বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা নাগাদ ‘ফণী’ সেখানে আঘাত হানে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এমনটাই জানিয়েছে। যদিও পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, সেখানে ফণী আঘাত হানবে বিকেল ৩টায়; কিন্তু এর আগেই আঘাত হেনেছে এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়।
ইতোমধ্যে ফণী’র জেরে সব নির্বাচনী জনসভা বাতিল করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী জনসভারও দিনও বদলে গিয়েছে। ভারতের ঝাড়খণ্ডে নরেন্দ্র মোদির জনসভা হওয়ার কথা ছিল। এখন সেই জনসভা হবে রোববার।
এছাড়া শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের জামশেদপুরে সভা করার কথা ছিল। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সেই সভাও বাতিল করে দেয়া হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফণী’র সতর্কতা জারি করার সাথে সাথেই প্রতিটি রাজ্যের সরকার তৎপরতা দেখিয়েছে, আগে থেকেই গ্রামাঞ্চলে বসবাস করা মানুষদের সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। উড়িষ্যা সরকারও প্রায় ১১ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
এসব কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান হয় যে, ভারতে ফণী মোকাবেলায় রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বশীল আচরণ লক্ষণীয়। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন দলের সরকার থাকলেও এখনও পর্যন্ত সেখানে পারস্পরিক দোষারোপের চিত্র দেখা যায়নি। কিন্তু বাংলাদেশে এর বিপরীত কাণ্ড লক্ষ্য করা গেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের প্রস্তুতির কথা বলা হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ভিন্ন কথা। বিএনপির অভিযোগ: ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসলেও এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের কোনো প্রস্তুতিই দেখা যাচ্ছে না।
বিএনপি বলছে: জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল প্রধানমন্ত্রীর হাতে, কিন্তু উনি কোনো ধরনের মিটিং না করেই বিদেশ চলে গেলেন। কোনো আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা নেই। উপকূলীয় জেলা পর্যায়ে জরুরি সভা নেই। তিন বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, কোস্টগার্ড, আনসার এদের নিয়ে কোনো সভা করা হয়নি। উদ্ধার কাজে কোনো প্রস্তুতিই গ্রহণ করা হয়নি।
অবশ্য জেলা প্রশাসনসহ উপকূলীয় অঞ্চলের সংশ্লিষ্টদের দফায় দফায় বৈঠকের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
এছাড়া সব দপ্তরের মাঠ পর্যায়ে ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে। রেড অ্যালার্ট জারি, মাইকিং করে সর্তকতা নির্দেশ, আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখাসহ সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্নের কথা জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
কিন্তু বিএনপির মতো একটি বড় দলের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা জানানো হয়নি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব সরকারের সমালোচনা আর দলীয় নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বানের মধ্যদিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছেন।
এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ শুক্রবার সকালে বিএনপির এই বক্তব্যের সমালোচনা করেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে: দুর্যোগ নিয়েও অপরাজনীতি করছে বিএনপি। প্রাকৃতিক এমন দুর্যোগের আগে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে বিএনপির মন্তব্য কাম্য নয়।
আওয়ামী লীগ বলছে: ঘূর্ণিঝড় ফণী পরবর্তী যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রসাশনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত রয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠন করে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
‘‘এছাড়া ফণী মোকাবিলায় কেন্দ্রীয়ভাবে ১৮ সদস্যের সমন্বয় সেল খোলা হয়েছে, খুলনা চট্টগ্রাম ও বরিশাল এ তিন বিভাগে তিনটি বিভাগীয় কমিটি করা হয়েছে, প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিকেল টিম।
যে কোনো প্রয়োজনে- ০২৯৬৭৭৮৮১ এবং ০২৯৬৭৭৮৮২ আওয়ামী লীগ অফিসের এ দু’টি নম্বরে ফোন করার জন্য বলা হয়েছে।’’
ভারতের উড়িষ্যায় যে দানবীয় গতিতে ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হেনেছে, তার অর্ধেক গতিতে বাংলাদেশে আঘাত হানলেও তা একেবারেই কম দুর্বল নয়। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বোঝা উচিত, এই মুহূর্ত রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ির সময় নয়। এখন আসলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা এবং ফণী পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার সময়।
জনগণের জন্যই যদি রাজনীতি হয়, তাহলে সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মীর উচিত এই বিপদের সময় বেশি কথা না বলে জনগণের জন্য কাজে নেমে পড়া। অবশ্য শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বই নয়, আসলে আমাদের সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে বিপদগ্রস্থ মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)