দেশব্যাপী ৫২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন নিয়ে নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ফাগুন হাওয়ায়’। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন ‘অজ্ঞাতনামা’ খ্যাত নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। শুক্রবার ছবিটি মুক্তির পর দেশব্যাপী বেশ সাড়া ফেলছে, প্রশংসা করছেন সাধারণ দর্শকরাও।
বিশেষ করে ‘ফাগুন হাওয়ায়’ নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় বেশ ইতিবাচক মন্তব্য করছেন দর্শকরা। চলচ্চিত্রটিকে ‘সাহিত্যের অভিযোজন: বিপ্লবী ফাগুন হাওয়ায়’ আখ্যা দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের গ্রুপে রহমান মতি নামের একজন লিখেছেন, ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতা আমাদের মৌখিকভাবে ভালোই শোনা যায়। চলচ্চিত্র ইতিহাসকে অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারে আমরা ভুলে যাই। তাই বাঙালির আত্মপরিচয় লাভের জন্য ভাষা আন্দোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ছবির অভাব থাকে এদেশে। অভাবটা ঘোচালেন নির্মাতা তৌকীর আহমেদ।
ভাষা আন্দোলনের উপর নির্মিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র বলেই নয়, ছবিটি প্রশংসা পাচ্ছে নির্মাতার সৃজন আর অভিনেতা অভিনেত্রীদের অসাধারণ অভিনয়ের জন্যও। অনেকে ১৯৫২ সালের প্রেক্ষাপট পর্দায় অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তোলায় প্রশংসা করছেন তৌকীর আহমেদের।
শুক্রবার ও শনিবার রাজধানীর একাধিক সিনেমা হল পরিদর্শন ও হল মালিকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ছবিটি দেখতে মধ্যবিত্ত দর্শকের আগ্রহই বেশী। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাই বেশী ছবিটি দেখতে আসছেন।
রাজধানীর অন্যতম প্রেক্ষাগৃহ মধুমিতা। হলটির কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ছবিটি পিরিওডিক্যাল ও ইতিহাস নির্ভর। ছবিটির দর্শকদের বেশীর ভাগই তাই শিক্ষিত শ্রেণি। প্রথম দিন ছবিটি দেখতে দর্শকের বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। দ্বিতীয় দিনেও তাই। তবে সেটা আহামরি নয়। তবে দিন শেষে এমন কন্টেন্টের ছবি দেখতে ভালো দর্শকরা হলে আসছেন, এটা আশা ব্যঞ্জক।
অন্যদিকে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় অবস্থিত বলাকা সিনেমা হলে ছবিটি দেখতে দর্শক সমাগম উল্লেখ করার মতো। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবারের বিকাল ও সন্ধ্যার শো দুটি হাউজফুল ছিলো। রাজধানীর শ্যামলী সিনেমা হলেও দর্শকের একই অবস্থা। প্রতিটি শো’র দর্শকরাই প্রশংসা করছেন ছবিটির। এমনকি কেউ কেউতো বলছেন, অজ্ঞাতনামার পর এটি তৌকীরের আরেকটি মাস্টারপিস।
শুধু রাজধানীর দর্শক নয়, ছবিটি দেখতে জেলা শহরের হলগুলোতেও হাজির হচ্ছেন দর্শকরা। এমনটাই চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন ছবির পরিবেশক ও টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জাহিদ হাসান অভি।
তিনি বলেন, ছবিটি নিয়ে যে হাইপ তৈরী হয়েছে সেটা ধরে রাখতে পারলে মফস্বলের হলগুলোতেও প্রচুর দর্শক সমাগম ঘটবে। এমনকি সামনের সপ্তাহে হলও বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে অনেক অঞ্চলের হল মালিকরা ছবিটিকে অবজার্ভেশনে রাখছেন। তারা ছবিটি নিতে আগ্রহী হয়ে আছেন।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে বঙ্গভবনে ‘ফাগুন হাওয়ায়’ এর বিশেষ প্রদর্শনী দেখেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবিটি দেখে তিনি এই ছবির প্রযোজক ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদের প্রশংসা করেন। এসময় ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ সহ আরো উপস্থিত ছিলেন নির্মাতা তৌকীর আহমেদ সহ ছবির অন্যান্য শিল্পী ও কলাকুশলীরা।
টিটো রহমানের ‘বউ কথা কও’ গল্পের অনুপ্রেরণায় নির্মিত হয়েছে ‘ফাগুন হাওয়ায়’। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে সিয়াম-তিশা ছাড়াও অভিনয় করছেন বলিউডের অভিনেতা যশপাল শর্মা, শহীদুল আলম সাচ্চু, আবুল হায়াত, আফরোজা বানু, ফারুক হোসেন, সাজু খাদেম, আজাদ সেতু, হাসান আহমেদ, নুসরাত জেরী প্রমুখ।