প্রতীকী আলোকবর্তিকা রূপে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন

পাকিস্তানি বর্বর হানাদারদের পরাজয়ের পর করাচির কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে দেশে ফিরেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে সেদিন বিকেলে উড়োজাহাজ থেকে বঙ্গবন্ধু নামার পর পূর্ণতা পেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ঐতিহাসিক সেই স্থানে এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে।

তবে সেখানে এবার তিনি স্বশরীরে আসেননি, এসেছেন লেজার রশ্মির প্রতীকী আলোকবর্তিকা রূপে। বঙ্গবন্ধু যখন নেমে আসছিলেন, তখন প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে জাতির পিতার প্রতি সম্মান জানান। পিতার এ আগমনে অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এসময় বারবার চোখ মুছতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। এরপর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিক কাউন্টডাউন (ক্ষণগণনা) ঘোষণাকালে দেওয়া বক্তব্যের সময়ও বারবার অতীত স্মৃতিচারণ করে অশ্রুসজল হতে দেখা যায় শেখ হাসিনাকে।

প্রধানমন্ত্রীর অশ্রুসজল হওয়ার এই ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে এমন এক কালিমা লেপন করা হয়েছে, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীও যা করার সাহস পায়নি। পাকিস্তানিরা যেটা করতে পারেনি, বাংলার মাটি সেই বর্বরতার সাক্ষী হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে। সেই দিনের খুনিরা নিজেদের হয়তো সাময়িকভাবে সফল ভেবেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সফলতা অর্জন করতে পারেনি। এখনও বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাংলার মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা তারই প্রমাণ দেয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বাংলাদেশ উল্টো পথে যাত্রা শুরু করেছিল। জনককে হারিয়ে জাতি হিসেবে আমরা অন্ধকার সময়ে ছিলাম। আলোকবর্তিকা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের এই ক্ষণে আবারও আলোর পথে যাত্রা শুরু হয়েছে। যে বিজয়ের আলোকবর্তিকা জাতির পিতা তুলে দিয়েছিলেন তা নিয়েই হোক আমাদের আগামী দিনের পথচলা।

জাতির পিতার জন্মগ্রহণের শততম বছর পূর্ণ হবে মূলত চলতি বছরের ১৭ মার্চ। ওই দিন থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন করবে বাংলাদেশ। জন্মশতবর্ষের মূল অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বঙ্গবন্ধুর সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্বকে। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মকে বিশ্বব্যাপী আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ এসেছে বলে আমরা মনে করি।

এজন্য দেশ-বিদেশে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী জাঁকজমকভাবে উদযাপনে সর্বস্তরের জণগণকে সম্পৃক্ত করা হবে বলে আমাদের আশাবাদ। ক্ষণগণনার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অনুষ্ঠানে অবশ্য এই ইতিবাচক মানসিকতা লক্ষ্য করা গেছে। আয়োজনের শেষ পর্যন্ত জনগণকে সম্পৃক্ত করার মানসিকতা তাদের থাকবে বলে আমাদের আশাবাদ। মুজিববর্ষের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের যে নতুন ব্র্যান্ডিং শুরু হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম ও আদর্শ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে তা সফলতার সঙ্গে এগিয়ে নিতে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীমুজিববর্ষসম্পাদকীয়