প্রণোদনার আশায় প্রতারিত পাঁচ দিনমজুরের জামিন

কোনো টাকা ছাড়াই তাদের জামিন শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির

করোনাকালে সরকারের দেওয়া প্রণোদনার টাকা পাওয়ার আশায় প্রতারণার শিকার হয়ে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় ভুক্তভোগী পাঁচ দিনমজুরকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

জামিন প্রাপ্তরা হলেন: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বিধবা ফুলমনি রানী, রণজিৎ কুমার, প্রভাষ চন্দ্র, কমল চন্দ্র রায় ও নিখিল চন্দ্র বর্মন।

ভুক্তভোগীদের করা জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে এই আদেশ দেন।

আদালতে টাকা ছাড়াই ভুক্তভোগীদের জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।

ভুক্তভোগীদের জামিন আবেদনে সংযুক্ত করা পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের মাস্টাররোল কর্মচারী কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী তানভীর ইসলাম স্বপন (৩০) করোনাকালীন সরকারি প্রণোদনা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তাদের ৫ জনকে নিয়ে সোনালী ব্যাংকের নাগেশ্বরী শাখায় যান। সেখানে তাদের নামে ব্যাংক হিসাব চালু করেন এবং শ্রীপুরে নিয়ে গিয়ে ব্যাংকের চেক বই ও বিভিন্ন কাগজপত্রে টিপ-সই নেন।

একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে ব্যাংকের সব কাগজপত্র ও চেক বই নিয়ে নেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে, তাদের এই ব্যাংক একাউন্টে প্রণোদনার টাকা পাঠানো হবে। এর কিছুদিন পর পাঁচ দিনমজুরের হিসাব নম্বরে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা চলে আসে। এসব টাকা আসে সোনালী ব্যাংক হেডকোয়ার্টার শাখা থেকে। যার মধ্যে রণজিতের সঞ্চয়ী হিসাবে ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২০ টাকা, প্রভাষের হিসাব নম্বরে ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ১২০ টাকা, সুবলের হিসাব নম্বরে ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৭২০ টাকা, কমলের হিসাব নম্বরে ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৮০ টাকা এবং ফুলমণি রানির হিসাব নম্বরে ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৫২০ টাকা আসে।

কয়েকদিন পর অপরিচিত ৩-৪ জন লোক এসব হিসাব নম্বর থেকে টাকা তুলতে এলে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয় এবং তারা শ্রীপুর শাখায় টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দেন। তবে টাকা তুলতে আসা অপরিচিত লোকগুলোকে আটকের আগেই তারা ব্যাংক থেকে সরে যায়।

ওই ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হকের করা মামলায় ৫ দিনমজুরসহ শ্রীপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বজলুর রশিদ, হিসারক্ষণ অফিসের অডিটর আরিফুর রহমান, মাস্টাররোল কর্মচারী তানভীর ইসলাম স্বপন ও ঢাকার উত্তরখান জামতলা এলাকার বাসিন্দা শাহেনা আক্তারকে আসামী করা হয়।

এরপর গত ২ জুলাই এই মামলার আসামী চার দিনমজুরকে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আসামীরা নিম্ন আদালতে জামিন করলে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়।

করোনাদিনমজুরপ্রণোদনা