দেশের প্রচলিত আইন, রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) এবং সংবিধান অনুযায়ী যারা প্রটোকল সুবিধা পান তাদের প্রটোকল অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেন।
জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ মহানগর ও শহরাঞ্চলের সংশ্লিষ্টদের প্রতি এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে অবিলম্বে আদেশের অনুলিপি সকল জেলা জজ, মন্ত্রী পরিষদ ও জনপ্রশাসন সচিবের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট সংক্রান্ত সংবাদ প্রচার-প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল হতে বলেছেন হাইকোর্ট।
আজ হাইকোর্ট তার আদেশে বলেছেন, মানুষের জন্য সংবাদ পরিবেশন করা বড় ধরনের দায়িত্ব। রাষ্ট্র এবং সমাজের মূখপাত্র হিসেবে সাংবাদিকদের উচ্চ মর্যাদা রয়েছে। তাই তাদের কাছে প্রত্যাশা সাংবাদিকরা আরও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবেন এবং তাদের দায়িত্বশীলতায় খণ্ডিত বা আংশিক না, সম্পূর্ণ সত্যের প্রতিফলন থাকবে।
হাইকোর্টের আজকের আদেশে আরো বলা হয়েছে, ‘‘রিট আবেদনকারী আইনজীবী বলেছেন, বিচারপতি এফআর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ‘দেশে কোনো ভিআইপি নাই’ এধরনের কোনো আদেশ দেননি।’’
আজকের আদেশে হাইকোর্ট বলেন, আমরা যখন আমাদের ভাবনাগুলো নিয়ে আদালতে কথা বলি অনেক সময় তা বিষয়বস্তুর বাইরে যায়। যে কারণে আমরা যা বলতে চাই সেই বার্তাটি অনেকেই বুঝতে ভুল করেন। তাই শুনানির সময় বিচারকরা যখন তাদের চিন্তাগুলো নিয়ে কথা বলেন, সেই কথাগুলোকে চূড়ন্ত হিসেবে ধরে নেয়াটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ চূড়ান্ত রায়েই কেবল আদালতের উদ্দেশ্য এবং ভাবনাগুলো সঠিকভাবে প্রতিফলন ঘটে।
এর আগে বিচারপতি এফআর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ‘দেশে কোনো ভিআইপি নাই’ বলে আদেশ দিয়েছেন উল্লেখ করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে। প্রকাশিত সেসব সংবাদ প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শাহীনুর রহমান হাইকোর্টে রিট করেন। রিট আবেদনে বলা হয়, প্রটোকল বিষয়ে প্রকাশিত পত্রিকার প্রতিবেদনগুলো ভিত্তিহীন ও মর্যাদাহানিকর।
আজ আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী একরামুল হক টুটুল।
এর আগে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় আলোচনায় উঠে আসা ভিআইপি প্রসঙ্গে গত ৩১ জুলাই বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, তারা ভিআইপি নন, তারা (পাবলিক সার্ভেন্ট) প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আর ভিভিআইপি’র কথা বললে বলতে হবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই হচ্ছেন ভিভিআইপি। কারণ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে বিশেষ নিরাপত্তার বিষয়টি থাকে।
এসময় তিতাসের বিষয়টি নিয়ে রিট করা আইনজীবী মো. জহিরুদ্দিন লিমন আইন উদ্ধৃত করে বলেন, কোনো ভিআইপি’র গাড়ি জাহাজ বা ফেরিতে উঠবার ক্ষেত্রে কেবল অগ্রাধিকার পাবে কিন্তু কোনোভাবেই জাহাজ বা ফেরি থামিয়ে রাখতে পারবেন না।
তখন আদালত বলেন, ‘ইয়েস, সারা বিশ্বেই অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেতে দেয়া হয়। আর আমাদের এখানে ঘটেছে তার উল্টোটা।’