পাঁচ বছর আগে দেওয়া রায়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প নিয়ে রাজউক যতগুলো বোর্ড সভা করেছে তার সবগুলোর সিদ্ধান্তের অনুলিপি চেয়েছেন হাইকোর্ট।
সেই সাথে বন, উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, পার্ক, জলাশয় ইত্যাদি স্পষ্ট করে করে চতুর্থ সংশোধিত লেআউট প্ল্যান ও প্রস্তাবিত পঞ্চম সংশোধিত লেআউট প্ল্যান আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এসবকিছু দাখিল করতে রাজউককে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেন।
আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর। আর রাজউকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানজিব-উল-আলম।
এ বিষয়ে আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর বলেন, মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সাতটি সংগঠনের করা জনস্বার্থের এক মামলায় ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট পূর্বাচল প্রকল্পের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)’র চতুর্থ সংশোধনী লেআউট প্ল্যানের অনুমোদন দেয়।
ওই রায়ে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়ে বলেন: আদালতের অনুমতি ছাড়া অনুমোদিত চতুর্থ সংশোধিত লেআউট প্ল্যানে চিহ্নিত বন, লেক, খাল, পার্ক, খেলার মাঠ ও উদ্যান, সবুজ বেষ্টনী ও নগরায়নের জন্য করা সবুজ আচ্ছাদনে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে না রাজউক।
কিন্তু দেখা যায়, গত বছরের নভেম্বরে উচ্চ আদালতের অনুমোদিত চতুর্থ সংশোধিত লেআউট প্ল্যানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নতুন প্লট সৃষ্টির জন্য পঞ্চম সংশোধনী প্ল্যান অনুমোদনের জন্য আদালতে আবেদন করে রাজউক। রাজউকের সেই পঞ্চম সংশোধনী প্ল্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনটি (১০০ তলা বিশিষ্ট ভবন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও রাজউকের কেন্দ্রীয় স্ট্যাকইয়ার্ড) নতুন স্থাপনার জন্য পূর্বাচলের চতুর্থ সংশোধিত প্ল্যানে ২১ রকম ভূমি ব্যবস্থাপনার ২০টিতেই পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু তাই নয় চতুর্থ সংশোধিত লেআউট প্ল্যানের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে খেলার মাঠ (প্রায় ১৪০ একর ) সরিয়ে অন্য জায়গায় বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল রাজউকের প্রস্তাবিত পঞ্চম সংশোধনী প্ল্যানে। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রাজউকের পঞ্চম সংশোধনী লেআউট প্ল্যানটি কার্যত বাতিল করে দেয়।
প্রস্তাবিত পরিবর্তনের মধ্যে কেবল ১০০ তলা ভবনের অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে বলে আদেশ দেন আদালত। সেই আদেশে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয় যে, চতুর্থ সংশোধনীতে যেখানে বাণিজ্যিক এলাকা দেখানো আছে শুধুমাত্র সেখানেই এ ১০০ তলা ভবনের জন্য অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। তবে খেলার মাঠ, সবুজ বেষ্টনী, জলাশয়সহ অন্য ২০টিরও ভূমি ব্যবহারে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না।
হাইকোর্টের এ আদেশের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় যে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বনের জায়গা কমিয়ে নতুন প্লট তৈরির অনুরোধ জানিয়ে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে। এছাড়া আদালতের অনুমোদিত প্ল্যানে ব্যত্যয় ঘটিয়ে ৮৪টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে।
রাজউকের এসব সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে গত এপ্রিলে সাতটি সংগঠনের পক্ষে হাইকোর্টে একটি আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত আজ এ আদেশে দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর।