ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ (সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স) নিহত হওয়ার পর সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে পাকিস্তানকে বিশ্ব ক্রিকেট থেকে একঘরে করার ডাক দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)। সেই অনুযায়ী আইসিসিতে একটি বিশেষ আবেদনও জমা দিয়েছিল বিসিসিআই। ভারতের ওই আবেদন নাকচ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটি।
আইসিসির পাশাপাশি সংস্থার সদস্য দেশগুলোর কাছেও একই আবেদন জানিয়েছিল বিসিসিআই। বলা হয়েছিল, সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয় এমন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। তবে কয়েকদিন সময় নিয়ে আইসিসি জানিয়ে দিল, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার তাদের হাতে নেই।
বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয় অথবা সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি করছে এমন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করুক আইসিসি।
কিন্তু আইসিসির পক্ষে স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে, দেশের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টি সরকারি স্তরের আলোচনার বিষয়। এই বিষয়ে আইসিসির করা কিছু নেই।
বিসিসিআই সূত্রের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, আইসিসি জানিয়েছে- এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনোরকমের সুযোগই নেই। কারণ কার সঙ্গে কার সম্পর্ক থাকবে, সেটা একান্তভাবে সরকারি সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া আইসিসির হাতে এমন কোনো আইন বা নিয়মও নেই। যেটা বিসিসিআই-ও খুব ভালো করেই জানে। তবুও বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
আইসিসির চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহরের নেতৃত্বে একটি বৈঠকে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয় সংস্থাটি।
টাইমস অব ইন্ডিয়া এমনটাও জানাচ্ছে, বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবাদে যুক্ত থাকার কারণে সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে ওই বৈঠকে যে চেয়ারম্যান খুব বেশিক্ষণ সময় ব্যয় করেননি, সেটাও জানা গেছে।
বিসিসিআই’র একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘পাকিস্তান সুপার লিগে বিভিন্ন দেশের অনেক খেলোয়াড়রা খেলেন, ফলে ওই দেশগুলো এই বিষয়ে আলোচনা করতে কখনোই রাজি হবে না। তবে নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং সে বিষয়ে ভারতকে পুরোপুরি নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।’
১৬ জুন বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বের ম্যাচে একে অপরের মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। তবে পুলওয়ামায় হামলার পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় ভারতের সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল ওই ম্যাচ বয়কটের আহবান জানায়। অবশ্য ২০০৮ মুম্বাই হামলার পর থেকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক কোনো ম্যাচ হচ্ছে না। তবে আইসিসির বিভিন্ন ইভেন্টে একে অপরের বিরুদ্ধে খেলছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে। পরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে বিমান হামলা চালায় ভারত। দুদিন পর ভারত শাসিত কাশ্মীরে পাল্টা বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হামলা মধ্যে ভারতের একজন পাইলট পাকিস্তানের হাতে আটক হন। পরে শুক্রবার তাকে ছেড়ে দেয় পাকিস্তান। ওই ঘটনার জের ধরে দুদেশের কাশ্মীর সীমান্তে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুইপক্ষে সীমান্তরক্ষীদের ছোড়া গোলায় সীমান্তের উভয় পাশেই হতাহতের ঘটনা ঘটছে।