গত মৌসুমের শেষ ম্যাচে নামার আগে কোচ জিনেদিন জিদান খেলোয়াড়দের রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ‘আগের হারের পুনরাবৃত্তি যেন না হয় আর।’ সেই হুঁশিয়ারি কোনো কাজে লাগেনি। উল্টো অসংলগ্ন ও করুণ হারে শেষ হয় রিয়ালের শিরোপাহীন যন্ত্রণার মৌসুম।
গত মৌসুমে শেষ চার ম্যাচের তিনটিতেই হারে বিখ্যাত সাদা পোশাকধারীরা। আর পুরো মৌসুমে লিগে ১২টি ম্যাচে হার দেখে। পয়েন্ট টেবিলে থার্ড বয় হিসেবে লিগ শেষ করে মাদ্রিদ জায়ান্টরা। ম্যাচ শেষে সবাই বলাবলি শুরু করেন, যতদ্রুত সম্ভব এই মৌসুমটা ভুলে যেতে চাইবে রিয়াল।
নতুন মৌসুম শুরুর আগে জিদানের দল কোন পথে যাচ্ছে তা সমর্থকদের জন্য ছিল ভাবনার বিষয়। প্রাক-মৌসুমে প্রথম চার ম্যাচের তিনটিতেই হার। একমাত্র আর্সেনালের বিপক্ষে জিতেছে, সেটিও টাইব্রেকারে। ওই চার ম্যাচে মোট ১৩ গোল হজম করে রিয়াল। তার মধ্যে শেষ দুই ম্যাচেই হজম করে ৮ গোল। ফলে গত ১২ মাসের দুঃসময়ই বহাল থাকে।
গত মৌসুমের ভূত যেন তাড়াতেই পারছিল না রিয়াল মাদ্রিদ। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি জিরোনার বিপক্ষে জেতার পর থেকে জয় শব্দটা ক্রমশ অচেনা হয়ে ওঠে তাদের কাছে। ওই সময়ে দলটি ২১ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে মাত্র ৭টিতে। ১১টিতে হার, ড্র ৩টিতে।
ওই ২১ ম্যাচে আবার রিয়াল গোল করে ৩০টি। কিন্তু খায় ৩৯টি। এই চিত্র দুটি বিষয় স্পষ্ট করেছে, এক- তাদের আক্রমণের দুর্বলতা, দুই- আক্রমণ আটকানোর দুর্বলতা।
জিদানের আগে সান্তিয়াগো সোলারি ছিলেন দায়িত্বে। আর্জেন্টাইন কোচের সময়টা বাদ দিয়ে ১১ মার্চ থেকে জিদানের সময় ধরলেও রিয়ালের অবস্থা বেশ করুণ। এই সময়ে ১৫ ম্যাচে জিদান জিতেছেন পাঁচ ম্যাচ। সাতটিতে হার, ড্র তিনটিতে। অর্থাৎ, তার জয়ে হার শতকরা ৩৩।
অথচ নিজের প্রথম দফায় জিদানের জয়ের হার ছিল ৭০%। তখন ১৪৯ ম্যাচের মধ্যে ১০৫টিতে জিতেছিল তার দল। ড্র ছিল ২৮টি, আর হার ১৬টিতে।
প্রাক-মৌসুমের ম্যাচগুলোতে আরও একটি বিষয় রিয়ালের জন্য ‘রেড অ্যালার্ট’ হিসেবে দেখা হচ্ছিল। প্রথম চার ম্যাচে এক মিনিটও প্রতিপক্ষে চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারেনি লস ব্লাঙ্কোসরা।
তবে প্রাক-মৌসুমে রিয়ালের দুঃস্বপ্নের ভূতটা আস্তে আস্তে সরতে শুরু করে। একের পর এক হারে হতাশায় ডুবতে থাকা দলটি ধীরে ধীরে ভাসতে শুরু করে। মৌসুম শুরুর আগে অস্ট্রিয়ান ক্লাব স্যালজবুর্গের বিপক্ষে ১-০ গোলে জেতে জিদানের শিষ্যরা।
সেই ধারা অব্যাহত ছিল নতুন মৌসুমের প্রথম ম্যাচেও। নতুন মৌসুমের শুরুটা দারুণ হয় রিয়ালের। সেল্টা ভিগোকে ৩-১ গোলে হারিয়ে আগের মৌসুমের দাগ মোছার ইঙ্গিত দেয় তারা। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই আবার গেল মৌসুমের স্মৃতি ফিরিয়েছে রিয়াল। শনিবার রাতে ঘরের মাঠে রিয়াল ভ্যালাদোলিদের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে লস ব্লাঙ্কোসরা।
শনিবারের ড্র রিয়ালের সামনে উত্তরের চেয়ে অনেকবেশি প্রশ্নই দাঁড়া করিয়েছে। প্রশ্নগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হল পল পগবার মতো শক্তিশালী মিডফিল্ডারের চেয়ে লস ব্লাঙ্কোসদের দ্রুতগতির নেইমারকেই কী বেশি প্রয়োজন?
করিম বেনজেমা আক্রমণে নিজের মতো করে সব করতে পারছেন না। শনিবারের ম্যাচের প্রথমার্ধের বেশ কয়েকবার সতীর্থদের সহায়তা করতে তার মূল অবস্থান ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
বেনজেমা যদি নিজের কাজটা ঠিকঠাক করতে না পারেন, তাহলে লুকা জোভিচ ছাড়া জিদানের স্কোয়াডে আর কোনো গোল-স্কোরার নেই। এ কারণেই পগবার নাম উল্লেখ করা হচ্ছে। কারণ, জিদানের একজন গোল-স্কোরার প্রয়োজন।
এই প্রয়োজন পগবার চেয়ে বেশি মেটাতে সক্ষম নেইমার। দ্রুতগতিতে ড্রিবল করার ক্ষমতা নেইমারের রয়েছে। এডেন হ্যাজার্ড দলে না থাকলে বর্তমান রিয়াল স্কোয়াডের এটারই অভাব রয়েছে।
ব্রাজিলিয়ান তারকাকে দলে নিতে ডাকাডাকি অব্যাহত রেখেছে রিয়াল, সাবেক বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড শেষ পর্যন্ত বিখ্যাত সাদা জার্সি গায়ে তুলবেন বলে প্রত্যাশা বার্নাব্যুর সমর্থকদের।
ভ্যালাদোলিদ ম্যাচে হামেস রদ্রিগেজ, গ্যারেথ বেল ও ইসকোকে দিয়ে শুরু করেছিলেন জিদান, কিন্তু তারা আসল কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সেল্টা ভিগোকে হারানোর আনন্দ খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ভক্ত এবং ক্লাব পরিচালকদের কাছ থেকে খেলোয়াড়দের প্রতি আবার সন্দেহ ফিরে এসেছে। দলবদলের সময়সীমা শেষ হতে আর মাত্র আট দিন বাকি, তবে এই সময়ে রিয়াল মাদ্রিদের ঠিক কী দরকার? নেইমারের গতি নাকি পগবার শক্তি?