নির্মাতা কৌশিক গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে গল্প চুরির অভিযোগ

এই সময়ে কলকাতা সিনেমার রুচি বদলে দিয়েছেন যে কজন নির্মাতা, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হিসেবে মনে করা হয় কৌশিক গাঙ্গুলীকে। শব্দ, অপুর পাঁচালী, সিনেমাওয়ালা, বিসর্জন ও দৃষ্টিকোণের মতো আলোচিত ছবি নির্মাণ করেছেন তিনি। অথচ এই নির্মাতার বিরুদ্ধেই এবার উঠলো গল্প চুরির অভিযোগ!

হ্যাঁ। ‘বিজয়া’র পর ফের প্রেক্ষাগৃহে নতুন ছবি নিয়ে হাজির হয়েছেন কৌশিক। নতুন ছবির নাম ‘নগর-কীর্তন’। গেল সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া ছবিটি কলকাতার দর্শকরা বেশ ভালো ভাবেই গ্রহণ করেছেন, হাউজফুল যাচ্ছে সব দিকেই। অথচ এরমধ্যেই ‘নগর কীর্তন’ এর বিরদ্ধে গল্প চুরির অভিযোগ তুলেছেন লেখক স্বপ্নময় চক্রবর্তী।

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে তুলে ধরেন স্বপ্নময়। তার দাবী, তার লেখা উপন্যাস ‘হলদে গোলাপ’ এর গল্প থেকেই নির্মাণ করা হয়েছে ‘নগর কীর্তন’। কিন্তু লেখককে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি নির্মাতা কৌশিক।

স্বপ্নময় তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, কৌশিক বাবু একজন দক্ষ অভিনেতা এবং পরিচালক। নানা গুনে গুনবান, নীরব আহরণ চাতুর্য সমেত। আবুল বাশারের ‘নরম হৃদয়ের চিহ্ন’ উপন্যাসটি নীরবে নিয়ে ‘শূন্য এ বুকে’ ছবিটি বানিয়েছিলেন। এবার ‘হলদে গোলাপ’ এর বেশ কিছুটা আত্মস্থ করে ‘নগর কীর্তন! দরকার হলে বাশার কে ফোন করে জেনে নিতে পারেন।

কৌশিকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের পর সোশাল মিডিয়ায় বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে ‘নগর কীর্তন’ প্রসঙ্গ। অনেকে কৌশিকের পক্ষে আবার অনেকে যুক্তি দিচ্ছেন লেখক স্বপ্নময় চক্রবর্তীর পক্ষে। কিন্তু গল্প চুরির বিষয়টি খোলাসা নয়।

আর তাই নির্মাতা কৌশিকের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে কলকাতার শীর্ষস্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন,স্বপ্নময় চক্রবর্তীকে আমি চিনি না। তবুও তাকে অনুরোধ করছি ছবিটা এক বার দেখুন। আর কী বলব বলুন তো? হঠাৎ করে এমন মন্তব্য! আমি তার গল্প নিলে কপিরাইট নিয়ে নিতাম। ঋতুদার (ঋতুপর্ণ ঘোষ) ভাবনা নিয়েছি যখন সঙ্গে সঙ্গে জানিয়েছি। সারা জীবন পরিচালক নিজের গল্প নিয়ে কাজ করে গেল। ত্রিভুজ প্রেমে তৃতীয় চরিত্র থাকে, সেটাই কি চুরির বিষয়? আর যে পত্রিকায় তার গল্প ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ পেত সেই পত্রিকার সম্পাদক আজ ‘নগরকীর্তন’-এর সমালোচনা লিখেছেন। কই, সেখানে তো তেমন কিছুর উল্লেখ নেই?

‘নগর কীর্তন’ এর যে গল্প কি তবে সত্যিই ‘হলদে গোলাপ’ থেকে চুরি করা? জানতে চাইলে স্বপ্নময় বলেন, আমি ছবিটা দেখিনি। আমি অবশ্য লিখে ফেলেছি, উনি আত্মস্থ করেছেন। এক বার দেখে নিই। বাশারের(কথাসাহিত্যিক আবুল বাশার) ঘটনাটাও উল্লেখ করেছি। বাশার বলেছে আমায়। এলজিবিটি নিয়ে কাজ করে এনজিও, তারা আমায় জানিয়েছে। তারা গল্পটাও পড়েছে। ছবিও দেখেছে। আরও কয়েক জন বলেছেন। তবে ছবিটা দেখে তবেই পুরো বিষয় নিয়ে বলতে পারব।

শরীর ও শরীরের সমাজতত্ত্ব নিয়ে এক দুঃসাহসিক উপন্যাস স্বপ্নময় চক্রবর্তীর ‘হলদে গোলাপ’। ২০১২-১৩ সাল জুড়ে প্রয়াত ঋতুপর্ণ ঘোষ সম্পাদিত পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে এই গল্প পাঠকসমাজকে নাড়িয়ে দেয়।

ইতিমধ্যে কলকাতার বিদগ্ধজন, যারা কৌশিকের ‘নগর কীর্তন’ দেখেছেন এবং স্বপ্নময় চক্রবর্তীর ‘হলদে গোলাপ’ পাঠ করেছেন তারা একটির সাথে আরেকটির অদ্ভুত মিল খুঁজে পেয়েছেন। তেমনি একজন কৌশিকের দর্শক ও স্বপ্নময়ের পাঠক তনিমা রায় চৌধুরী। সোশাল মিডিয়ায় তিনি লিখেন, ‘নগরকীর্তন’ দেখতে বসে খটকা একটা লেগেছিল। পরিমল যখন পরী হল, ভেবেছিলাম এ মিল শুধুই নামের। কিন্তু ট্রান্সজেন্ডারদের ভাষা? আচরণ? যন্ত্রণা? যে অনুভূতিগুলো নিয়ে স্বপ্নময় একটি মহাকাব্য বানিয়েছিলেন, যে পরিশ্রমের ফসল ‘হলদে গোলাপ’ তা থেকে যথেচ্ছ টুকলিফাই হল কি!

ঋতুপর্ণ ঘোষকৌশিক গাঙ্গুলীদৃষ্টিকোণলিড বিনোদনশব্দসিনেমাওয়ালা