লবণের দাম একশ’ টাকা ছাড়িয়ে যাবে-এই আশঙ্কায় পাড়ার দোকানগুলোতে লবণ কেনার হিড়িক।
অফিসে আসার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হবার সময় শুনলাম দুই দারোয়ান আলাপ করছে, ‘লবণের কেজি একশ’- দেড়শ টাকা হইয়া যাইবো।’
কথাটা কানে আসতেই গলির মোড়ের দোকানে একটু ঢুঁ মারলাম, কৌতুহল সামলাতে পারলাম না।
দোকানি বেশ উৎফুল্ল চিত্তে বললেন, ‘সকাল থেকে তিন বস্তা শেষ করছি।’
‘কতো করে বেচলেন?’ প্রশ্ন করতেই বললেন, ‘আগের দামই চল্লিশ টাকা।’
হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক পেঁয়াজের মতো ধরা খেতে হবে না।
‘কি কারণে এত বিক্রি করলেন?’
‘লবণের দাম নাকি বেড়ে যাবে, তাই সবাই লবণ কিনে ঘরে রাখছেন।’
কে বললো প্রথম আপনাকে?
‘সবাই তো বলছে।’
এই হচ্ছে আমাদের হুজুগে সমস্যা। ‘সবাই তো বলছে’।
দেশটা আসলে মগের মুল্লুকে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। যার যেমন খুশি সেভাবেই চলবে যেন। পেঁয়াজের ঝাঁজ না যেতেই কুচক্রি মহল দেশটাকে কার্যত অচল করার লক্ষ্যে হুজুগ তুলে দিয়েছে, লবণ সংকট হবে। কিনে রাখো। আর এই সুযোগে দাম বাড়াও। কামাও টাকা। যেমন কামিয়ে নিয়েছেন পেঁয়াজ থেকে।
কামিয়েছেন শব্দটা এ জন্য বলা, কারণ কেউ কি বাজারে গিয়ে দেখেছেন পেঁয়াজ নেই? বাজারে ঠিকই পেঁয়াজ আছে কিন্তু দাম বেশি। কেন দাম বেশি? ভারত থেকে আমদানি বন্ধ।
খুব ভাল কথা। তবে কেন আমরা টেলিভিশনের পর্দায় দেখলাম পচা পেঁয়াজ বস্তায় বস্তায় ফেলে দেয়া হচ্ছে? এমনও শোনা গেছে, কোথাও কোথাও অভিযানের ভয়ে বস্তায় করে ফেলে দেয়া হয়েছে।
সংসদেও কম আলোচনা হয়নি পেঁয়াজ নিয়ে। কেউ বলেছেন, যারা পেঁয়াজ মজুত করেছে তাদেরকে কেন ক্রসফায়ারে দেয়া হবে না? মানুষ কতটা ক্ষুব্ধ হলে ক্রসফায়ারের মতো একটি প্রস্তাব করতে পারেন সংসদের মতো একটি পবিত্র জায়গায় দাঁড়িয়ে।
মূলত দেশটাকে অচল করার উদ্দেশ্যে একটা গোষ্ঠী উঠেপড়ে লেগেছে। যেকোনো মূল্যে বিশ্বকে দেখাতে হবে-বাংলাদেশে কোনো আইন নেই। যে যার মতো চলছে। কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রণ নেই সরকারের। এমন অভিযোগও রয়েছে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে।
এখন কথা হচ্ছে কারা করছে এই কাজ? তাদেরকে ধরা কি খুবই কষ্টের ব্যাপার? নাকি সরকারের ভেতরে থাকা কোনো চক্র সরকারকে অকার্যকর করার চেষ্টা করছে?
গুজব সৃষ্টিকারী যেই হোক তাদের ধরে এখনি শায়েস্তা করা প্রয়োজন। তা হলেই সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা কমবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)