রাজনৈতিক অঙ্গনের মানুষ না হয়েও ব্যবসায়ী নেতা থেকে সরাসরি উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন মোঃ সিদ্দিকুর রহমান।
সফল ব্যবসায়ী নেতা থেকে রাজনীতিতে তার এ পথ চলা অনেকেই দেখছেন বাঁকা দৃষ্টিতে। নানাভাবে করতে চাইছেন প্রশ্নবিদ্ধ৷ যদিও ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোনো পদে না থাকলেও আওয়ামী লীগ মনোভাবাপন্ন ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে তার পরিচিতি ছিলো।
এমন উদ্ভুত পরিস্থিতি কিভাবে দেখছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নব-মনোনীত এ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক। চ্যানেল আই অনলাইনের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিলো তার কাছে।
তিনি বলেছেন: বর্তমান বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজনীতিবিদ-ব্যবসায়ী এবং আমলা সকলেই নেতৃত্বে নিজেদের প্রমাণ করেছে। এখন আর কাউকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। একজন রাজনীতিবিদকেও দিন শেষ উপার্জনের জন্য ব্যবসা করতে হচ্ছে। তাই তার মনোনয়নে অসঙ্গতি দেখছেন না সিদ্দিকুর রহমান।
এ প্রসঙ্গে তিনি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ট ট্রাম্পের নির্বাচিত হবার কথা তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন: উন্নত গণতন্ত্রের দেশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন যিনি, তিনিও একজন ব্যবসায়ী। প্রেক্ষাপট এখন পরিবর্তন হয়েছেন৷ ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে যারা নেতৃত্ব দিয়ে রাজনীতিতে আসছেন তাদেরও নানা সংকট মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি এবং তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতে গত ১৬ বছর দিয়েছেন সরাসরি নেতৃত্ব। আর ব্যবসায়ী রাজনীতি যুক্ত ছিলেন ব্যবসা জীবনের ৩৬ বছরের মধ্যে ২৫ বছরই।
এসময় বিগত সময় গুলোতে নানা সময়ে নানা সংকট সফলভাবে মোকাবেলা করার, তার পূর্বঅভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি৷
সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগের নব মনোনীত শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক বলেন: আস্থা রাখুন, সকলের সহযোগিতা নিয়ে আমি নিজেকে প্রমাণ করতে চাই।
সিদ্দিকুর রহমানের এ মনোনয়নকে ইঙ্গিত করে সিনিয়র সাংবাদিক ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন: ছাত্র ও যুব রাজনীতির কী দরকার? সহযোগী সংগঠনের মতো বিজেএমইএ সেরা। শুধু মনোনায়ন নয় দলের কেন্দ্রীয় পদও মেলে। শুভ কামনা বিজেএমইএ … ক্ষমতার রাজনীতিতে আপনাদের কাছে আওয়ামী লীগের খারাপ সময়ের কর্মীদের শেখার আছে।
এদিকে সিদ্দিকুর রহমানের পাশেও দাঁড়াতে দেখা গেছে কাউকে কাউকে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিলন পাঠান তার ফেসবুক ওয়ালে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন: ৮১ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের কমিটিতে সম্ভবত ৬০ জনের অধিক সাবেক ছাত্রনেতৃবৃন্দ দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন। বাকীদেরকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সংগ্রাম, পারিবারিক রাজনৈতিক ত্যাগ ও ঐতিহ্যের পরম্পরা এবং বিশেষায়িত ক্যাটেগরিতে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিয়েছেন মাননীয় সভাপতি। মো: সিদ্দিকুর রহমানও একই ধারাবাহিকতায় দায়িত্ব পেয়েছেন। বাস্তবতার নিরিখে এটা আমার উপলব্ধি ও মূল্যায়ন।
রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়েও এ সময় চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন সিদ্দিকুর রহমান। বলেন: আমাদের দলের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প-২০৪১ দিয়েছেন। ওই সময়ে মধ্যে তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। সেটাকে সফলভাবে এগিয়ে নিতে জননেত্রী হাতকে শক্তিশালী করাই হবে আমার প্রধান লক্ষ্য। তরুণ প্রজন্মের জন্য আমরা এসময়ে মধ্যে একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম রেখে যেতে চাই।
তার এ সকল লক্ষ্য বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আগামী দিনের আরও বেশি শক্তিশালী করতে চান নব মনোনীত এ সম্পাদক।
এসময় তিনি আওয়ামী লীগের পূর্ণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হওয়াকে মুজিববর্ষে নিজের সবথেকে বড় পাওয়া বলে বর্ণনা করেন। ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের নিহত সকলের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং তাকে দায়িত্ব দেওয়ায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
গত ১১ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়: দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে দেওয়া ক্ষমতাবলে সিদ্দিকুর রহমানকে আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে ৯মবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের।
এর কয়েকদিন পর ২৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি পদ শূন্য থাকে। শূন্য পদগুলোর মধ্যে ছিল শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদকের পদটিও।