বিশ্বের বহু দেশের মানুষ এখন বাড়িতে বসে কাজ করছেন। কর্মস্থলে যতোটা মনোযোগ দেয়া যায়, বাড়িতে সবসময় সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনা হয়তো। তবে চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। এমনকি বাড়িতে বসেই করে ফেলা সম্ভব পৃথিবীকে চমকে দেয়ার মতো কোনো কাজ, যেমনটা করেছিলেন আইজ্যাক নিউটন।
১৬৬৫-৬৬ সালে উত্তর ইংল্যান্ডে প্লেগ ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই মহামারির সময় সচেতন মানুষরা নিজেদের ঘরে আবদ্ধ করেছিলেন। আইজ্যাক নিউটনও নিজেকে রেখেছিলেন সেলফ-কোয়ারেন্টাইনে।
নিউটনের বয়স তখন ২৩। ক্যামব্রিজের ছাত্র ছিলেন। মহামারি আকারে প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ায় দীর্ঘ ১৮ মাস পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। নিউটন ওলসথর্প ম্যানরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। সেখানে মোটামুটি গৃহবন্দি অবস্থায় দিন কাটতে থাকে তার। মহামারির এই সময়টা ছিল নিউটনের জন্য আবিষ্কারের বছর। ক্যালকুলাস, অপটিকস এবং গ্র্যাভিটি আবিষ্কারের বছর ছিল সেটা।
বেডরুমের জানালার শাটারে নিউটন একটি ছিদ্র করেন। ছিদ্র দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকছিল ঘরে। সেই আলোর সামনে তিনি একটি প্রিজম ধরেন। খেয়াল করেন ত্রিভুজাকার প্রিজমের মধ্য দিয়ে যাওয়া আলোর বিক্ষেপণের মাধ্যমে দৃশ্যমান বর্ণালির সৃষ্টি হয়েছে। এই বিষয়টিই জনপ্রিয় ব্যান্ড পিঙ্ক ফ্লয়েড তাদের একটি অ্যালবামের কভারে দিয়েছিল।
নিউটনের জানালা দিয়ে তার বাগানের আপেল গাছ দেখা যেত। ঘরে বসে গাছ থেকে টুপটাপ আপেল পড়া দেখতেন তিনি। আপেলটি কেন মাটিতে পড়ল এই নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেই তিনি গ্র্যাভিটি সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। জানালা দিয়ে দেখার বিষয়টি নিয়ে অবশ্য দ্বিমত আছে। অনেকের মতে আপেল গাছের নিচে বসে ছিলেন নিউটন। তখন আপেল পড়ে এবং তার মাথায় গ্র্যাভিটির বিষয়টি আসে।
মহামারীর কারণে অবসর পাওয়া সময়টাতে নিজের লাইব্রেরিতে গবেষণায় মত্ত থাকতেন নিউটন। ক্যালকুলাস এর কিছু মৌলিক ধারণা তিনি এসময় লিপিবদ্ধ করেন যেগুলো পরবর্তীতে ১৬৬০ থেকে ১৬৭০ এর মাঝামাঝি ক্যামব্রিজে থাকাকালীন সময়ে পুনরায় গবেষণার মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে।
নিউটন বেঁচে থাকলে হয়তো বর্তমান সময়ের কোয়ারেন্টাইন জীবনে আরও অনেক কিছুই আবিষ্কার করতে পারতেন। নিউটন বেঁচে নেই। কিন্তু নিউটনকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে অবসরের সময়টাতে করতে পারেন দারুণ কিছু। ছবি আঁকা, পড়াশোনা, গবেষণার মাধ্যমে দূর করতে পারেন দুশ্চিন্তা। -হিস্টোরিহাস্টল