‘নারীর সেবামূলক কাজ মূল্যায়নের পদ্ধতি থাকলে ব্যবহার করবে সরকার’

নারীর গৃহস্থালি অবৈতনিক কাজের যথার্থ মূল্যায়ন অবশ্যই প্রয়োজন জানিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল বলছে, নারীর গৃহস্থালি সেবামূলক কাজের মূল্যায়নের জন্য মডেল বা পদ্ধতি খুঁজছে সরকার।

সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, জিডিপিতে নারীর এই শ্রমকে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে দেশের প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়ে যাবে। তাই দেশের বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ও গবেষকরা যদি কোনো স্বীকৃত গণনাগত পদ্ধতি দিতে পারে তাহলে সেটা ব্যবহার করবে সরকার।

এটি ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি)’ বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার পঞ্চম লক্ষ্য ‘লিঙ্গ সমতা অর্জন এবং সব নারী ও মেয়ের ক্ষমতায়ন করা’ নিশ্চিত করবে বলে তারা মনে করছেন।

নারীর গৃহস্থালির কাজের মূল্যায়নে বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, নারীর যেটা একবারেই সেবামূলক কাজ, সেটা মূল্যায়ন করাটা কঠিন। তবে এ বিষয়ে সত্যিকার অর্থেই যদি কোন পদ্ধতি বা উপায় জানতে পারা যায় বর্তমান সরকার সেটা ব্যবহার করবে।

‘এ বিষয়ে সর্বস্বীকৃত কোন পদ্ধতি এখনো গৃহীত হয়নি। সেবামূলক সময়টাকে উৎপাদনমূলক কাজে উৎপন্ন করাটা কঠিন।’

ড. শামসুল আলম

এর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি গবেষক বা দেশের বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে আহবান জানান নারীর সেবামূলক কাজের স্বীকৃতির কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে সরকারের কাছে পেশ করতে।

তবে তাত্ত্বিক বা আবেগগত না, ব্যবহারিক পদ্ধতি যা পরিসংখ্যানিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এছাড়াও কোনো দেশে যদি পদ্ধতি থাকে সেটাও সরকারকে সরবরাহ করার কথা বলেন।

তবে পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে গৃহস্থালি কাজে নারীর পাশাপাশি পুরুষরাও সময় দেয় তাই বিষয়টাকে একতরফা না দেখে সার্বিকভাবে দেখতে হবে।

২০১৭ সালের একশন এইড এর ‘পাওয়ার’ প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত ‘দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং গৃহস্থালির সেবামূলক কাজ: নীতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায়, নেপালের নারীরা এ ধরনের গৃহস্থালি কাজে দৈনিক ৬.৬ ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন। বাংলাদেশের নারীরা প্রতিদিন ৬.৩ ঘণ্টা এবং ভারতের নারীরা ব্যয় করেন দৈনিক ৫.১ ঘণ্টা। যেখানে এই কাজে পুরুষরা সময় দেন যথাক্রমে নেপাল ২.২ ঘণ্টা এবং ভারতে মাত্র ০.৪ ঘণ্টা। বাংলাদেশও এটি কম মাত্র ১.১ ঘণ্টা।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ২০১৬ সালে প্রকাশিত গেজেটে গৃহস্থালি কাজে নিয়োজিত নারীদের সুরক্ষা ও কল্যাণের নিমিত্ত গৃহকর্মকে (গৃহস্থালির কাজ) শ্রম হিসেবে স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রদান এবং গৃহকর্মীদের জন্য শোভন কাজ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং বিশ্রাম-বিনোদন-ছুটিসহ নাগরিকের সংবিধান স্বীকৃতি মৌলিক অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠার্থে তাদের স্থায়ী ঠিকানা ও কর্মস্থলের তথ্য হালনাগাদকরণ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানায়, তারা এ বিষয়ে সচেতন আছে। তারা এ বিষয়ে কাজ করছে। শ্রম বাজারে নারীদের সমান অংশগ্রহনের জন্য গৃহস্থালি কর্মঘণ্টা যদি না কমে তাহলে শ্রম বাজারে নারীদের থাকাটা কঠিন। জেন্ডার বৈষম্য দূর করা কঠিন। এব্যাপারে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এ বিষয়ে কাজ করছে।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান তাদের জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ বাস্তবায়নের জন্য ২০১৩ সালে যে ‘জাতীয় কর্মপরিকল্পনা’ গৃহীত হয়েছে তার ২৩.১০ অনুচ্ছেদে নারীর গৃহস্থালি শ্রমের স্বীকৃতি এবং জিডিপিতে এর অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়ে উল্লেখ আছে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিক উন্নয়ন সূচি ২০১৫’ এ তৃতীয় অগ্রাধিকার বিষয় হিসেবে অমূল্যায়িত/গৃহস্থালির সেবামূলক কাজকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

নারীর গৃহস্থালির অবৈতনিক কাজ কেন জিডিপিতে অর্ন্তভুক্ত হয় না এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র (বিবিএস) স্ট্যাটিসটিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন ডিভিশনের (এসআইডি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: জিডিপি প্রাক্কলনে এসএনএ’তে (সিস্টেম অব ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট) অর্ন্তভুক্ত কাজ সমূহ অর্ন্তভুক্ত করা হয়। নারীর গৃহস্থালির সেবামূলক কাজ এসএনএ ভুক্ত না। এ কারণে তা জিডিপিতে অর্ন্তভূক্ত হয় না। তবে নতুন এসএনএ’তে নতুন কোন গাইডলাইন আসলে অনান্য দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশও জিডিপি প্রাক্কলন করবে।

এসডিজি নিয়ে কাজ করা সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, নারীদের গৃহস্থালির কাজকে শ্রম হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। তাছাড়া জিডিপিতে নারীর এই শ্রমকে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে দেশের প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়ে যাবে।

একশন এইডএকশন এইড বাংলাদেশনারীনারীর কাজ মূল্যায়ন