নতুন শিল্পীদের প্রতিষ্ঠিত করানো নির্মাতার স্বার্থকতা: বান্নাহ

একের পর এক নতুন নতুন নাটক বানাচ্ছেন মাবরুর রশিদ বান্নাহ। সম্প্রতি শেষ করলেন সিরিয়াল ‘বদমাশ পোলাপান’। আগামী মাসেই আসছে পরের কিস্তি। তার সমসাময়িক অনেকেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট বানাচ্ছেন, কিন্তু তিনি এখনও সময় নিচ্ছেন। সবকিছু নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বললেন জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহ।

নতুন কাজের খবর
সম্প্রতি শেষ করলাম ‘বদমাশ পোলাপান’ সিজন-১। এ সিরিয়ালে বেশিরভাগ নতুন শিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছি। খুব যে প্রত্যাশা ছিল তা নয়। তবে একমাসে ভিউসের হিসেবে যে পরিমাণ মানুষ দেখেছেন তা ছিল অনুপ্রেরণার। এজন্যই সিজন-২ নিয়ে আসছি। আগামী মাস (ভালোবাসা দিবস) থেকে সিজন-২ প্রচারে আসবে। আশা রাখছি, সিজন ২ আগের চেয়েও বেটার হবে। এছাড়া তাহসান ভাই, তিশা আপুকে নিয়ে ভালোবাসা দিবসের জন্য কাজ করলাম। সামনে মিশু সাব্বিরকে নিয়ে কাজ করবো। জোভান-শাওনকে নিয়ে ‘ব্রাদার্স ৩’ বানাচ্ছি।

নতুনদের নিয়ে কাজের কারণ
দর্শকরা আমার ক্যারিয়ার গ্রাফ সম্পর্কে ভালো করে জানেন যে আমি শুরু থেকে এমন। নতুনদের সঙ্গে নিয়ে পুরাতনদেরও সঙ্গেও কাজ করতে পছন্দ করি বা জনপ্রিয় শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমার নির্দেশনায় যেমন মোশাররফ ভাই, তাহসান ভাই, ফজলুর রহমান বাবু ভাই, নুসরাত ইমরোজ তিশা আপু, জাকিয়া বারী মম আপু সবাই কাজ করছেন, তেমনি আজকে যারা মিডিয়াতে এসেছে তারাও কাজ করছে। নতুনদের নিয়ে কাজ করতে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ থাকে যেটি আমি উপভোগ করি। নতুন শিল্পীদের প্রতিষ্ঠিত করানো নির্মাতার স্বার্থকতা। এটা আমাকে একটা ভালো ফিল দেয়।

ওটিটি প্লাটফর্মে কাজ
ওটিটি আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সবার জন্য একটা আশা। আমিও এর বাইরে না। আমি অবজারভেশন পিরিয়ডে আছি। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা দেখে ওটিটি প্লাটফর্ম এলোমেলো মনে হচ্ছে। কীভাবে বা কোন প্লাটফর্ম থেকে শুরুটা করা উচিত সেটাই বোঝার চেষ্টা চালাচ্ছি। দেশ ও দেশের বাইরে একেবারে আন্তর্জাতিক মানের প্লাটফর্মের সঙ্গে আমার কথা চলছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করিনি কোনটার জন্য প্রথম কাজ করবো। এখানে আমার কোনো তাড়াহুড়ো নেই। টিভি বা ইউটিউবে যেভাবে মানুষ আমার কাজ পাচ্ছেন, আগামীতে হয়তো ওটিটি-তে এভাবে নিয়মিত কাজ করবো।

অনলাইন কাজে সেন্সর/নীতিমালা
সেন্সর শব্দটা আমার কাছে নেগেটিভ মনে হয়। বরং বলা যেতে পারে গ্রেডিং সিস্টেম। বিশ্বের বড়বড় ইন্ডাস্ট্রি এই সিস্টেমে চলে। গ্রেডিং সিস্টেম দিয়ে বলা হয় ১৮+ কনটেন্ট তাহলে সেখানে ১৮ বছরের নিচে কেউ দেখতে পারবেন না। কিংবা গ্রেডিং দিয়ে ইয়ুথ বেইজ বা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ফেলা যেতে পারে। আমি মনে করি গ্রেডিং হচ্ছে সবচেয়ে সেরা ফর্মুলা। সব ধরনের কাজে ভেরিয়েশন থাকবে।

ক্যারিয়ারে টার্নিং কাজ
আমার নির্দেশিত প্রথম নাটকে কাজ করেছেন প্রয়াত আলী যাকের স্যার, আবুল হায়াত স্যার। তাদের মতো সিনিয়রদের সীমাহীন সাপোর্ট পেয়েছি। কিন্তু আমার খুব টার্নিং পয়েন্টের কথা বলতে গেলে দুজন শিল্পীর নাম অবশ্যই বলতে হবে তাহসান খান ভাই এবং নুসরাত ইমরোজ তিশা আপু। ‘ফায়ার ফ্লাই’ নামে ২০১২ সালে একটি কাজ করেছিলাম সেই কাজটাকে মনে করি আমার ক্যারিয়ারে প্রথম টার্নিং।

প্রসঙ্গ সিনেমা নির্মাণ
মিডিয়ার বেশিরভাগ মানুষ থেকে সংবাদকর্মী বন্ধুরাও আমাকে আগে জিজ্ঞেস করেন, সিনেমা কবে বানাবো? তার মানে সবাই চাচ্ছেন আমি সিনেমাটা বানাই। আমার প্রতি প্রত্যেকের এই প্রত্যাশাকে সম্মান করি। এজন্য আমি নিজেকে অনেক লাকি মনে করি। স্ট্রাগল দিয়ে যখন নাটক বানানো শুরু করেছিলাম, পরে আর থামিনি। তাই একবার যদি সিনেমার ক্রিজে নামি তাহলে ঠিকভাবেই খেলবো। লম্বা ইনিংসই খেলবো। ফিল্মে ওয়ানডে-টিটোয়েন্টি নয়, টেস্ট ম্যাচ খেলবো। দু-একটা বানিয়ে সরে যাবো না। নিয়মিতই বানিয়ে যাবো।

সিনেমা হবে যে ধরনের
সাউথ বা কলকাতার ইন্ডাস্ট্রির উদাহরণ দিয়ে বলি, তাদের ফিল্মে নিজস্ব একটা ভাষা (স্বকীয়তা) রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশী ফিল্মেরও একটি ভাষা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সিনেমায় এই ভাষাটাকে মিসিং মনে হয়। আমার ফিল্ম যখন তৈরি করবো যেন মনে হবে এটা বাংলাদেশের সিনেমা, এদেশের মানুষের সিনেমা। গল্পটা হবে ৬৪ জেলার মানুষের। দেখলেই সবাই গল্পতে কানেক্ট করতে পারবে। কোনোভাবেই যেন মনে না হয় অমুক দেশের বা ইন্ডাস্ট্রির সিনেমার মতো। আরেকটা বিষয় বলতে চাই, আমাদের দেশের প্রযোজকদের সঙ্গে পরিচালকদের মতের অমিল থাকায় ভালো সিনেমা তুলনামূলক কম হচ্ছে। দুজনের ভাবনাটা দুই রকম। এদিকে আরও বেশি নজর দেয়া উচিত। আশা করছি, আমার সিনেমায় সময় এমনটা মোটেও হবে না।

মাবরুর রশিদ বান্নাহলিড বিনোদন