নগরবাসীর প্রত্যাশা নিয়ে ভাবুন আগামীর নগরপিতারা

২০১৯ সালের বিদায় লগ্নে বেজে উঠেছে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ঘণ্টা। নতুন বছর, ২০২০ সালে ঢাকাবাসি পাবে তাদের নতুন নগরপিতা। রাজনৈতিক দলের মনোনিত প্রার্থীরা  নগরবাসির কাছে ভোট চাইতে ম্যান্ডেট নিয়ে মাঠে নামছে  রাজনৈতিক দলের মনোনিত প্রার্থীরা।

আপেক্ষিকভাবে ভোট নিয়ে জনগণের মাঝে তেমন আগ্রহ নেই। কারণ হলো, রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন দলের সুদৃঢ অবস্থান না থাকা। আর মানুষের ধারণা, বাংলাদেশে ভোটাধিকার এখন বির্তকিত বিষয়। ভোট দিয়ে তারা মতের মূল্যায়ন পায় না।

তবে আসন্ন ঢাকার দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামী লীগ যে জনগণের মতকে মূল্যায়ন করেছে তা সত্যি প্রশংসনীয়। একজন মেয়রের সালতামামিতে ব্যর্থতার কথা বারবার আলোচিত হয়েছে। তাই তার অশ্রুসজল কন্ঠে পুনরায় মেয়র হবার আকুল প্রার্থনা নগরবাসীর কাছে হাস্যকর মনে হয়েছে। দীর্ঘ সময় মেয়র হিসাবে দায়িত্বে থেকে তিনি চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে। শত মায়ের সন্তান হারানোর শোককে তিনি বিন্দুমাত্র অনুধাবন করতে পারেননি, তা প্রমাণিত।

সাঈদ হোসেন খোকন দেশের সকল নগর পিতার জন্য ব্যর্থতার উদাহরণের বিপরীতে স্বল্প সময়ের নগরপিতা আনিসুল হক জনগণের কাছে স্বপ্ন সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। স্বপ্নবান আনিসুল হক আগামীর নগরপিতাদের অনুপ্রেরণা হবে, এমন প্রত্যাশা সকলের।

দেশের প্রতিটি সিটি কর্পোরেশনে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছে আওয়ামী লীগের মেয়রগণ। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণের মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী প্রার্থীদের বেলায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা কোনো ছাড় দেননি।  তিনি আবার প্রমাণ করেছেন জনগণ ও নগরের উন্নয়ন ব্যাহত হলে দল কাউকে সমর্থন দেবে না। এখন মূল ফলাফলের জন্য ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর এক্ষেত্রে নগরবাসী তাদের বিবেচনায় যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে পারে, তা নিশ্চিত করবে নির্বাচন কমিশন।

এই ধারাবাহিকতায় পরর্বতীকালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। স্বপ্নবান আনিসুল হকের আগের দিনগুলোতে ফিরে গেলে নগরপিতা হিসাবে উজ্জ্বল ব্যক্তিটি ছিলেন চট্টগ্রামের। তিনি সবার অতি পরিচিত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী। এ মানুষটি আওয়ামী রাজনীতিতে আত্মনিবেদিত একজন মানুষ। জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে দীপ্ত এ নেতা চট্টগ্রামবাসীকে ছেড়ে যাননি তার জীবদ্দশায়। নিজের স্বার্থকে উপেক্ষা করে ভেবেছেন নগরবাসীর ভালো মন্দ নিয়ে। একজন যথার্থ নগরপিতা হয়ে সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নগরবাসীকে সেবা দিয়েছেন। সাংসদ, মন্ত্রীত্বের ডাকেও তিনি সাড়া দেননি শুধুমাত্র নিজের শহরকে ভালোবেসে। তার চলে যাওয়া চট্টগ্রামবাসীর কাছে সারাজীবনের জন্য বেদনাদায়ক।

অতীতকে মনে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। কিন্তু দেশের উন্নয়নে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী, মেয়র আনিসুল হক কেবল উদাহরণই হয়ে আছেন। তা না হলে ঢাকা, চট্টগ্রামের নগরবাসীর জনজীবন এতোটা হতাশাপূর্ণ হতো না। ঢাকার দক্ষিণের মানুষের মতোই অনেকটা বেহাল দশা চট্টগ্রামবাসীর। এখন অবধি জলাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। শীতের মৌসুমে জোয়ারের পানিতে শহরের মানুষ সংকটমুক্ত হলেও সারাবছর ডুবে থাকে পানির নিচে। অপরিপক্ক উন্নয়ন পরিকল্পনাতে রাস্তা উঁচু করে সংস্কার করা হচ্ছে। আর এতে করে মানুষের ঘরবাড়ি বিপদগ্রস্ত। পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজের অব্যবস্থাপনাতে মানুষ কোনো আশার আলো দেখছে না। বর্তমানে শহরের সৌন্দর্যের নামে দোকানে দোকানে সয়লাব শহরের যাত্রী ছাউনিগুলো। যা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে বারবার।

একজন মেয়র দলের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত হলেও তার দায়িত্ব থাকে নগরের উন্নয়ন ও নগরবাসীকে সেবা দেয়া। এ কথাও সত্য যে, সিটি কর্পোরেশনকে কাজ করতে হয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে। এতে করে নানা ধরনের সমস্যা ও হয়ে থাকে। তবে সাদা চোখে নগরের উন্নয়ন, পরিচ্ছন্নতা, সংস্কারের কাজের দায় মেয়রের। এসব ক্ষেত্রে বির্তকিত হয়ে দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করা সমীচীন নয়।

দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনা করছে। রাজনীতিতে এই দলের একক প্রাধান্য দেশজুড়ে। এ অবস্থায় নগরপিতা হতে হলে দলের ম্যান্ডেটের আগে নগরবাসীর প্রত্যাশা বিবেচ্য বিষয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের রূপকল্প ২০২১ নিয়ে প্রথম ক্ষমতায় আসেন ২০১১ সালে। সে রূপকল্প এখন দৃশ্যমান হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এমতাবস্থায় দেশের নগরবাসীর ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে তাদের নগরে যোগ্য নগরপিতা চায়।

আর এ আশাকে মূল্যায়ন করে ঢাকার পর দল অন্য নগরের নির্বাচনেও যোগ্য প্রার্থী দেবে, এটাই প্রত্যাশা সকলের।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

আওয়ামী লীগচট্টগ্রামঢাকানগরপিতাশেখ হাসিনাসিটি করপোরেশন