ধর্ষণ শূন্যের কোটায় আনতে যেসব পদক্ষেপ জরুরি

রাজধানীতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। এই অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে ঢাবি কয়েকদিন উত্তাল থাকার মধ্যে অভিযুক্ত ধর্ষক আটক হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপে স্বল্পসময়ের মধ্যে এই অগ্রগতি বিক্ষুব্ধ জনগণকে কিছুটা আশ্বস্ত করতে পেরেছে।

চ্যানেল আই অনলাইনের প্রতিবেদনে জানা যায়, গ্রেপ্তার হওয়া মজনু একজন মাদকাসক্ত এবং সিরিয়াল রেপিস্ট। সে ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধী-ভিক্ষুক নারীদের ধর্ষণ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। সে নিজেকে দিনমজুর হিসেবে দাবি করলেও ছিনতাই ছিল তার নিয়মিত পেশা। বুধবার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম এসব তথ্য জানান।

এখন দেখার বিষয়, আইনী ব্যবস্থার মাধ্যমে ওই ধর্ষকের বিচার কতো দ্রুত হয়। অতীতে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার জের টানলে দেখা যায়, কোন ধর্ষণ-হত্যার ঘটনার পরপরই বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয় কিন্তু তার বিচার ও ফলোআপ নিয়ে কারো খুব একটা নজর থাকে না। বাংলাদেশে নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ‘নারীপক্ষ’ জানিয়েছে, একটি গবেষণার অংশ হিসাবে ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ৬টি জেলায় ধর্ষণের মামলা পর্যবেক্ষণ করেছে তারা। ওই সময়ে ৪৩৭২টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে, কিন্তু সাজা হয়েছে মাত্র পাঁচ জনের। ওই গবেষণাটি পরিচালনার জন্য নারীপক্ষের তরফ থেকে থানা, হাসপাতাল এবং আদালত – এ তিনটি জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আমাদের ধারণা, সারাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে গবেষণা করলে একইরকম চিত্র উঠে আসবে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ধর্ষণের শিকার নারী ও ধর্ষকের সামাজিক অবস্থা-ক্ষমতার কমবেশিতে তদন্ত-বিচার প্রক্রিয়া কিছুটা ভিন্নখাতে যায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে রাজধানীর বনানীতে রেইন-ট্রি হোটেলে ধর্ষণের ঘটনা একটি বড় উদাহরণ হতে পারে। অনেক ঘটনা তো বছরের পর বছর তদন্তের নামে ঝুলে থাকে, মনে হয় যেনো কোনো ঘটনাই ঘটে নি।

এই অবস্থা দূর করে ভিকটিমদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিচার দ্রুততম সময়ে করা খুবই জরুরি। ধর্ষকদের বিচারের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত তৈরি হলে সমাজে অনেকটাই এর প্রভাব পড়বে। এছাড়া সমাজে ধর্ষকামী’রা কীভাবে সংখ্যায় বেড়ে যাচ্ছে এবং তা নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, তা নিয়ে সমাজ বিজ্ঞানীদের সাহায্যে একটি ব্যবস্থা নেয়া উচিত। মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি গণমাধ্যমে প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে সামাজিক মূল্যবোধ বাড়াতে কাজ করাও জরুরি। আমাদের আশাবাদ, বিভিন্ন দায়িত্বশীলরা এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।

ধর্ষণসম্পাদকীয়