ধর্ষণের প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যে নারী সমাবেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাচঁটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ওই সমাবেশে রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হল থেকে শুরু করে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি নারী আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

বুধবার বিকেলে ধর্ষণের প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে নারী সমাবেশ হয়। ওই সমাবেশ শেষে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও মিছিল করা হয়েছে।

এই নারী সমাবেশে সংহতি জানান সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন কাবেরি গায়েন, লেকচারার মার্জিয়া রহমান, সহযোগী অধ্যাপক কাজলী শেহেরীন ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা প্রমুখ।

এসময় সাদেকা হালিম বলেন: প্রতিদিন আমরা ধর্ষণের ঘটনা মিডিয়ায় দেখতে পাই। কিন্তু আমরা তার সুষ্ঠু বিচার পাই না। ধর্ষণের মত এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য আমাদের দেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মনেভাব ও চলমান সংস্কৃতি সমানভাবে দায়ী।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সাহসের প্রশংসা করে কাবেরী গায়েন বলেন: আমাদের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীর সাহসের প্রশংসা করতে হয়। তার সাহস, আত্মবিশ্বাস নারী সমাজের জন্য অনুেপ্রেরণা।

তিনি বলেন: আমাদের বিভক্ত হলে চলবে না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে কোন অপরাধের বিরুদ্ধে জাগতে হবে। অন্যথায় দাবি আদায় করা সম্ভব নয়।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া কখনো একটি ধর্ষণমুক্ত সমাজ গঠন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন: দেশে প্রতিদিন কোন না কোন জায়গায় ধর্ষণ হচ্ছে কিন্তু সেগুলো আমাদের দৃষ্টির অগোচরে থেকে যাচ্ছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া কখনো একটি ধর্ষণমুক্ত সমাজ গঠন করা সম্ভব নয়। আমাদের সেই ছাত্রীর মত সকল ভুক্তভোগী নারী যদি ধর্ষকের শাস্তি চাইতো তাহলে ধর্ষকরা মাথাচড়া দিয়ে উঠতে পারত না।

নারী সমাবেশে কবি সুফিয়া কামাল হলের ভিপি তানজিমা সোমা ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো:

১। দেশে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের দ্রুত বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।

২| দেশের সব আদালতে নারী নিপীড়ন সেল গঠন করে ধর্ষনের মামলার বিচার সর্বোচ্চ ১ বছরের মধ্যে করতে হবে।

৩| টিএসসি থেকে সুফিয়া কামাল হল, গণতন্ত্র তোরণ থেকে সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট পর্যন্ত ল্যাম্পপোস্ট ও সিসি ক্যামেরা দিতে হবে।

৪| পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের নিজস্ব ইস্যু নিয়ে কনসাল্ট করার জন্য ৪/৫ জন মহিলা টিচার দিয়ে ফিমেল উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে হবে। এরা প্রয়োজনে আইনি সহয়তা দিবে।

৫| বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের যে কোন আইনি সহয়তার খরচ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হবে।

৬। ক্যাম্পাস থেকে ভবঘুরে, নেশাখোর ও পাগলদের অপসারণ করতে হবে।

৭। ক্যাম্পাসের বাসের স্টপেজগুলোর নিরাপত্তা পুনর্বিবেচনা করা ও ছাত্রীদের মতামতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

৮। ইমার্জেন্সিতে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে অবস্থান করতে দিতে হবে।

এর আগে বুধবার সকালে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সন্তানতুল্য ছাত্রীর ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন: ধর্ষণের প্রচলিত আইন সংশোধন করা প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি৷ শিশু ও নারী নির্যাতন আইনের সংস্কার প্রয়োজন। একজন ধর্ষকের সঙ্গে একজন রাজাকারের কোন তফাৎ নেই। যদি মানবতাবাদী অপরাধের জন্য একজন রাজাকারের ফাঁসি হয়, তাহলে ধর্ষকেরও সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী যখন বিমানবন্দরের মতো ভিআইপি রোডে ধর্ষিত হন, তখন প্রশ্ন থেকেই যায় বাংলাদেশে ধর্ষকরা কি বৈধতা পেয়েছেন। বিশ্ব দরবারে আমাদের অপমানিত হতে হয় যখন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হন। আমাদের নারীদের জন্য একটি নিরাপদ সমাজ গড়ার জন্য আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কাজ করে যাবে।

এছাড়াও রাজধানীর কুর্মিটলা এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের সাথে জড়িত ধর্ষককে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

এছাড়া ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকের সঙ্গে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সোমবার থেকেই আন্দোলন করে আসছে ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছাত্র এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।

ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণধর্ষকধর্ষণমৃত্যুদণ্ড