সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে ২০১৪ সাল থেকে পর্যন্ত কমপক্ষে পাঁচ শত কর্মকর্তাকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান, কমিশনার, কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে মুঠোফোনে ৪০-৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক আনিছুর রহমান ও তার সহযোগী ইয়াসিন তালুকদার।
শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-৩) মহিউদ্দিন ফারুকী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
এর আগে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন ৪১/১ সনাতন গড় বৌবাজার এলাকা থেকে প্রতারক চক্রের সদস্য আনিসুর রহমান ওরফে বাবুলকে (৩৬) আটক করা হয়।
পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী হাজরীবাগের নবীপুর লেনের একটি দোকান থেকে চক্রের অপর সদস্য বিকাশ এজেন্ট মো. ইয়াসিন তালুকদারকে (২৩) আটক করা হয়। এসময় তাদের হেফাজত থেকে ২২টি মোবাইল ফোন ও ভুয়া রেজিস্ট্রেশনকৃত ২৬ টি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়।
মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, দেশব্যাপী দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের পর থেকে এই চক্রের অপতৎপরতা বেড়ে যায়। তারা সরকারী টেলিফোন ডিটেক্টরি থেকে ফোন নম্বর নিয়ে সরকারী বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের টার্গেট করে মুঠোফোনে দুর্নীতি মামলা আছে বলে ভয়ভীতি দেখাত। এরজন্য মামলার ভুয়া নম্বর দিয়ে খোঁজ নিতেও বলত। কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ভীত হলেই তাদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করতো।
তিনি বলেন, গত ২৭ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে র্যাব মহাপরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠির তদন্তে নেমে এই চক্রের মুলহোতা সহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, এই চক্রের আরও ৭-৮ জন্য পলাতক রয়েছে এবং আটকদের একজন প্রধান হোতার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রতারক চক্রটি সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে নিজেরাই গিয়ে মোবাইল বা টেলিফোন নাম্বার সংগ্রহ করতে শুরু করে। খুব বেশী সংখ্যক তথ্য সংগ্রহ করতে না পেরে তারা সরকারী টেলিফোন ডিরেক্টরি থেকে বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের টেলিফোন ও মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করতে শুরু করে।
গত পাঁচ বছরে চক্রটি পাঁচ’শ সরকারী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব কর্মকর্তারা কোনো না কোনো ভাবেই দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তা না হলে আর্থিক লেনদেনে যেতেন না।
চক্রটির ফোন অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে গেলে প্রতারক চক্রটি উল্টো ধমক খেয়েছে বা কখনো কখনো সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছে।
মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা আরও জানায়, তাদের ৭ থেকে ১০ টি গ্রুপ রয়েছে। তারা দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করে। তারা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়।
ভুয়া রেজিষ্ট্রেশনকৃত সিম সংগ্রহ ও বিকাশ একাউন্ট তৈরির বিষয়ে আসামী আনিসুর জানায়, বিভিন্ন দোকানে নিন্মবিত্ত মানুষ নতুন সিম কিনতে গেলে তাদের সিম ভুয়া রেজিষ্ট্রেশন করে এবং তাতে বিকাশ একাউন্ট খুলতো। এছাড়াও বিভিন্ন সিম বিক্রির দোকান থেকে ভুয়া রেজিষ্ট্রেশনকৃত সিম সংগ্রহ করে তা দিয়েই প্রতারণার কাজ করতো। কয়েকবার একটি সিম ব্যবহারের পর সেটি ফেলে দিত চক্রের সদস্যরা।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এ চক্রের সদস্য ইয়াসিন তালুকদার একজন বিকাশ এজেন্ট। হাজারীবাগে ৪২/১ নবীপুর লেনে সাইফুল এন্টারপ্রাইজ টেলিকম নামে তার একটি দোকানও রয়েছে। ওই দোকানে সে অন্য মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সিমের ভুয়া রেজিস্ট্রেশন এবং বিকাশ একাউন্ট খুলত।
তিনি বলেন, প্রতারক আনিছুর রহমানের কাছে থেকে উদ্ধারকৃত ১৪টি বিকাশ সিমে গত ছয় মাসে ৮ লাখ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তার কাছে ১০ লাখ টাকার একটি চেক পাওয়া গেছে। অপর আসামী ইয়াসিনের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ১২টি বিকাশের সিমে ১ লাখ টাকা পাওয়া গেছে।
আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান তিনি।