দশ টাকায় দুধ বিক্রি করা এরশাদ উদ্দিনের কাছ থেকে শিক্ষা নিন

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র রমজান মাস। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, সেই মাস আসার আগে থেকেই নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। সেই পরিস্থিতিতে বাজার থেকে ফিরে হিসাবের খাতা মেলানো দায় হয়ে পড়ে অধিকাংশ মানুষের। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো আয়-ব্যয়ের ফারাকে চোখে অন্ধকার দেখতে থাকে।

বাংলাদেশের বাজারগুলোতে বছরের পর বছর ধরে এটা সাধারণ নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বেশ কয়েক বছর আগে দেখা যেত রোজার মাসে বেশি ব্যবহার হয় এমন পণ্যগুলোরই দাম বাড়তো। কিন্তু সেই ধারা এখন পাল্টে গেছে। এখন বলা চলে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দামই বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সেটা আবার রমজান মাস শুরু বেশ কিছু দিন আগেই।

এর পেছনেও অসাধু ব্যবসায়ীদের এক কূটকৌশল কাজ করে। রমজানের আগে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে তারা দাবি করে, রমজান মাসে কোনো পণ্যের দাম বাড়ানো হয়নি। এমন কি সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও সকালে-বিকালে ব্যবসায়ীদের মতোই বলতে থাকে; ‘রোজায় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। কেউ বাড়ালে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। দাম বাড়ার প্রতিযোগিতায় মানুষের নাভিশ্বাস উঠে।

দেশের এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা যখন অতিরিক্ত মুনাফায় লিপ্ত, তখন আমরা একজন এরশাদ উদ্দিনের খবর পেলাম। দৈনিক প্রথম আলো তাদের এক প্রতিবেদনে তার সম্পর্কে বলেছে, রমজান মাস এলেই ব্যবসায়ীরা যেখানে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকেন, সেখানে ব্যতিক্রমী নজির স্থাপন করেছেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামের খামারি এরশাদ উদ্দিন। পুরো রমজান মাসে নিজের খামারের মোট উৎপাদিত দুধের ৫০ ভাগ (প্রায় ১ হাজার লিটার) তিনি ১০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করবেন।
তার মতে, রমজান মাসে সাহরির সময় অনেকেই দুধ খেতে চায়। কিন্তু এই সময় আবার দুধের দামও বেড়ে যায়। তাই তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন, পুরো রমজান মাসে নিজের খামারের উৎপাদিত দুধের অর্ধেক ১০ টাকা লিটারে বিক্রি করবেন।

আমরা জানি, এখনকার বাজারে প্রতি লিটার দুধের দাম ৭০ থেকে ৯০ টাকা লিটার। পরিমাণে যাইহোক না কেন এরশাদ উদ্দিনের এই উদ্যোগ তার এলাকার পাশাপাশি সারাদেশের মানুষের প্রশংসা পেয়েছে। বহু জায়গায় তাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী যখন অতিমুনাফায় ব্যস্ত, সেখানে এমন উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য।

আমরা মনে করি, তার মতো করে কিছু কিছু মানুষ উদ্যোগ নিলে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হবে। এরশাদ উদ্দিন যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা তা থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। তাতে দেশ ও দশের মঙ্গল হবে।

অসাধু ব্যবসায়ীকিশোরগঞ্জমুনাফা