বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় হোম ভিডিও প্লাটফর্ম ক্রাইটেরিয়ন কালেকশান এর চলচ্চিত্র সাময়িকী দ্য কারেন্ট ‘দশের দশকের গুপ্তধন’ নামে ১০টি চলচ্চিত্রের তালিকা প্রকাশ করেছে। যেখানে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশের পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন পরিচালিত ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ছবিটি।
সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই জানিয়েছে এই ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খনা টকিজ।
‘দশের দশকের গুপ্তধন’-এর তালিকায় আরও রয়েছে টমি লি জোন্সের কান্-এ গোল্ডেন-পাম নমিনেটেড ‘দ্য হর্সম্যান’ (২০১৪), ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি পুরস্কার জয়ী দুটি ছবি আল্রিচ সেইডলের ‘প্যারাডাইস: ফেইথ’ (২০১২) ও আনা লিলি আমানপোর পরিচালিত ‘দ্য ব্যাড ব্যাচ’ (২০১৬), সানড্যান্স-এ সেরা চিত্রনাট্য পুরস্কারজয়ী ম্যাট স্পাইসারের ‘ইনগ্রিড গোজ ওয়েস্ট’ (২০১৮) ও নাডিন লাবাকির অস্কার-নমিনেটেড ও কান্-এ জুরি পুরস্কার জয়ী ‘ক্যাপারনাম’ (২০১৮)।
শন বেকার, এরি এস্টন, লেসলি হ্যারিস, এলেক্স রস পেরি, ড্যানিয়েল স্মিথ, সুসান সিডেলম্যান, জুলি তৈমর ও গ্রেগ মোত্তোলার মত প্রতিথযশা চলচ্চিত্র পরিচালকদের কাছে জানতে চাওয়া হয় দশের দশকের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চলচ্চিত্রের নাম যা যথেষ্ট প্রচার-প্রসার পায়নি বলে তারা মনে করেন।
‘মেড ইন বাংলাদেশ’ কে সত্যজিৎ রায়ের ছবির সাথে তুলনা করেছেন লেসলি হ্যারিস, চলচ্চিত্রটির গল্প বলার ধরণ এর প্রধান চরিত্রের মতই শান্ত, সুসংহত ও পরিচ্ছন্ন যা আমাদের মহান চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়কে স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’-এ এই দশকের গুরুতর কিছু সমস্যা প্রতিফলিত হয়েছে। যেমন, শ্রমিকদের উপর বৈশ্বিক শোষণ, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও বাণিজ্যিক লোভ। এছাড়া রয়েছে এই দশকে ঘটে যাওয়া নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার নারী শক্তির জাগরণের মত সার্বজনীন বিষয়ও।
লেখক-পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন নান্দনিক ও সিনেম্যাটিক ক্যামেরা মুভমেন্টের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন ঢাকা শহরের উজ্জ্বল রঙের ছোঁয়া, প্রাণবন্ত বিন্যাস ও দগদগে ক্ষত।
লেসলি আরও উল্লেখ করেন, এটি নারীদের সংহতি, বন্ধুত্ব, এবং আশঙ্কার গল্প যেখানে নারীরা পরস্পরকে সোচ্চার হতে উৎসাহিত করে। এটি এমন একটি ছবি যা এই দশকের নারীশক্তির যে উত্থান তাকেই ধারণ করে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের ৪ তারিখ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ৭১টি হলে মুক্তি পায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। পঞ্চম সপ্তাহে এসেও দেশগুলোর ৬৪ হলে প্রদর্শিত হচ্ছে ছবিটি। আর চলতি বছরে কানাডা ও আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে মুক্তির জন্য ইতিমধ্যেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলে জানায় খনা টকিজ। একই সাথে বাংলাদেশেও মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা চলছে বলে জানালেন ছবিটির অন্যতম প্রযোজক আদনান ইমতিয়াজ আহমেদ।
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে ও আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে পোশাকশিল্পের যে ভূমিকা আছে তার আলোকে দৃঢ়চেতা নারী পোশাকশ্রমিকদের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প বলা হয়েছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রে।
ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিকিতা নন্দিনী শিমু, নভেরা হোসেন, দীপান্বিতা মার্টিন, পারভীন পারু, মায়াবি মায়া, মোস্তফা মনোয়ার, শতাব্দী ওয়াদুদ, জয়রাজ, মোমেনা চৌধুরী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি ও সামিনা লুৎফা প্রমুখ। দুটি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিতা চৌধুরী ও ভারতের শাহানা গোস্বামী।
প্রথম ছবি মেহেরজান এবং দ্বিতীয় ছবি ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’-এর পর এটি রুবাইয়াত হোসেনের তৃতীয় ছবি।