দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে লাভবান হবে বিএনপি

ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা শোনা যাচ্ছে। এগুলো বরাবরই দলীয় প্রতীক, দলীয় মনোনয়ন ব্যতিরেকেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। পৌরসভা নির্বাচনে কিছুটা অঘোষিত দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের বিষয় থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তা একেবারেই অনুপস্থিত থাকতো। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের যোগ্যতা অনুযায়ী নির্বাচন বৈতরনী পার হওয়ার চেষ্টা করে যেতো।

বিগত দিনের পৌরসভা নির্বাচনে অঘোষিত দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের বিষয় থাকলেও দলীয় প্রতীক নৌকা, ধানের শীষ, হাতুড়ি, লাঙ্গল, মশাল এগুলো আমরা আগে কখনো দেখিনি। দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহনের ঘটনা বাংলাদেশে একেবারেই নতুন হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্বল্প সময়ে এই পদ্ধতিটা চালু করার বিষয় বাস্তব অবস্থার বাস্তব বিশ্লেষণ অনুযায়ী সময়োপযোগী মনে হচ্ছে না। মাত্র তিন চার মাস সময়ের মধ্যে দলীয় নেতা-কর্মী, সুহৃদ, শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভোটারদের এই পদ্ধতিতে মানসিকভাবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত সমর্থিত ভুল রাজনীতির পরিণামে বিএনপি চরম অবক্ষয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়ে গেছে। পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ হত্যা, হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও পোড়াওয়ের গণবিরোধী অপরাজনীতি দলটিকে মারাত্মক হতাশায় ফেলে দিয়েছে। তাদের কোনো আন্দোলনের কর্মসূচিই রাজপথ উত্তপ্ত করতে পারছে না। তারা শত চেষ্টাতেও তাদের দলীয় কর্মসূচিকে জনতার কর্মসূচিতে রূপান্তরিত করতে পারছে না। তারেক রহমান বিদেশে পালিয়ে আছেন। খালেদা জিয়াও চিকিৎসার জন্য বিদেশ গেলেন। ফখরুল জেল হতে জামিন পেয়ে বিদেশে এরপর দেশে ফেরত। সালাহ উদ্দিন মানসিক রোগী হয়ে ভারতে। দলটির কী হাল হচ্ছে তা দলীয় নেতারাই বুঝছেন।

বিভিন্ন জেলা উপজেলায় বিএনপির অনেক নেতাকর্মী পিঠ বাঁচাতে আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে। হতাশাগ্রস্থ ও বিপর্যস্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দলীয় প্রতীক নিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন কোন্দল সৃষ্টিতে তেমন প্রভাব ফেলবে না। কারণ সরকারি দল বা বিরোধী দলের চেয়ারম্যান অথবা মেয়র হয়ে তারা যে তেমন সুবিধা করতে পারবে না তা তারা ভালোভাবেই জানে। সুতরাং দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তারা তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হবে না যে তা নিশ্চিত। বিএনপি ও তার সহযোগী জামায়াতের পক্ষে দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীক বরাদ্দ সহজ সাধ্যই হবে। কোন্দল দেখা দেবে সরকারি দল আওয়ামী লীগে।

দেশব্যাপী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বনাম এমপির আওয়ামী লীগ দ্বন্দ্বটি তখন নতুন মাত্রা পাবে। তাদের উপদলীয় কর্মকাণ্ড পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পেরিয়ে গ্রামে গ্রামে শুরু হয়ে যাবে। একক প্রার্থী হিসাবে কাউকে নৌকা প্রতীক দেয়া একেবারেই অসাধ্য হয়ে উঠবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের। এতে করে দলের ক্ষতি বিনে লাভ হবে না। পরিচর্যিত বিরোধটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। লাভবান হবে বিএনপি জামায়াত, তারা একক প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনী বৈতরনী পার হয়ে যাবে।

অতীতে আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে অনেক পৌরসভায় ও উপজেলায় বিএনপি জয়লাভ করেছে। যদিও ভোটের হিসাবে এইসব এলাকাগুলোতে আওয়ামী লীগের ভোট বেশি ছিল। সুতরাং সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে উপদলীয় কর্মকাণ্ডের ভিত্তি মজবুত করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।

বাস্তব অবস্থার বাস্তব বিশ্লেষণ অনুযায়ী দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান আরও পরে চিন্তা করা উচিত। ঘোষিত দল মনোনয়ন বাদ দিয়ে অঘোষিত দলীয় সিদ্ধান্তেই নির্বাচন অনুষ্ঠান যৌক্তিক। নৌকা প্রতীক দেয়া একেবারেই অযৌক্তিক ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এ ব্যাপারেও সিরিয়াস ভাবনা অতি জরুরি।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

বিএনপিস্থানীয় সরকার নির্বাচন