বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। দীর্ঘ এই সময়ে কারাবন্দী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির দাবিতে তীব্র কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি দলটি৷
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জোরালো কোনো কর্মসূচি কেন দিতে পারলো না? এমন কোনো কর্মসূচি না থাকায় তৃণমূলে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দলটির ভূমিকা। দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পর থেকে বেশ কিছু ঢিলেঢালা কর্মসূচি দিতে পেরেছে মাত্র তারা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মানববন্ধন, কালো পতাকা প্রদর্শন, অবস্থান কর্মসূচি, অনশন ও স্মারকলিপির মতো দুর্বল কর্মসূচি। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না এই দাবিতেও অনড় থাকতে পারলো না৷ তাকে ছাড়াই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলো৷ নির্বাচনের আগে খালেদার মুক্তির দাবিতে আর কোনো কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি ও ২০ দল। নির্বাচনের পরও দেশব্যাপী ব্যাপক ও দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি পালন করতে সক্ষম হয়নি৷
সম্প্রতি বগুড়ার এক মতবিনিময় সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের চেয়াপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বগুড়া থেকে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও নয়াপল্টনে প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি জানান।
কিন্তু সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির দাবিতে রাজপথে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি দলটি৷ তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেল৷ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করল৷ কিন্তু তবু কেনো আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে না এ নিয়ে ২০ দলের শরীকদের মাঝেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে৷ কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিম বিএনপির উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ছেন, ভোট ডাকাতির পরও আন্দোলন নয় কেন? ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে ‘ভোট মহাডাকাতি’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম এই শীর্ষ নেতা। এরপরও বিএনপির আন্দোলনের ডাক না দেয়ার সমালোচনা করেছেন তিনি।
‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে’ বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত এক ‘সংহতি সমাবেশে’ সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ২০ দলীয় জোটকে কার্যকর রাখতে নিজেদের সমন্বয় প্রয়োজন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে গিয়েছে বিএনপি, কিন্তু ভোট মহা-ডাকাতির পর কেন আন্দোলনে যাচ্ছেন না? আসলে আমাদের কোথাও গলদ আছে, আসলে আমরা বোবা হয়ে গেছি।
২০ দলীয় জোটের আরেক শরিক লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান নির্বাচনে ২০ দলের ভরাডুবির জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে দায়ী করেন৷ তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে। গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা কোনো কিছু বলিনি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের কোনো প্রয়োজন ছিল না। এটা আমাদের ডুবিয়েছে। ২০ দলকে পরীক্ষিত জোট দাবি করে ইরান বলেন, ২০ দল পরীক্ষিত, জোটকে বিতর্কিত করতে সরকার দালালদের দিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। নিজেদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, পাতানো নির্বাচনের পরে কোনো কর্মসূচি না দেয়ায় আমাদের নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু কেন ব্যর্থ হল এ ব্যর্থতার দায় কার? নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য কি কেবলই দায়ী সরকার দলের দমন পীড়ন তাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা নকি
ভোট ডাকাতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) চেয়ারম্যান লে: কর্নেল (অবঃ) অলি আহমেদ৷ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ২০ দলীয় জোটের এই শীর্ষ নেতা বলেন: আপনি তো ওমরাহ করেছেন, নামাজ পড়েন। বলেন তো, অলি আহমদের মত লোক ২২ হাজার ভোট পাবে? প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভুল শুধরে’ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে অলি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর যে ভুল করেছেন, তা শুধরাতে একটি ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ দিন। ভোট ডাকাতির কথা প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করলেই পারতেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলব, যেভাবেই হোক, ক্ষমতায় যেহেতু আছেন, দোষ স্বীকার করে নিলেই হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেশকে মুক্ত করুন, নইলে দীর্ঘ মেয়াদে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে৷ কিন্তু কি সে অনিশ্চয়তা? বিরোধী রাজনৈতিক জোট হিসাবে এ অনিশ্চয়তা প্রতিরোধের ক্ষমতা কি তাদের রয়েছে?
ক্ষমতার মধ্য দিয়ে গঠিত দলটি ক্ষমতার কাছেই বারবার হেরে যাচ্ছে৷ ২০১৪ সালে হারলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে৷ ২০১৮ সালে হারলো নির্বাচনে অংশ নিয়ে৷ অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বড় দল হয়েও ছোট দলদের সাথে গিয়ে ভিড়ল৷ নেতৃত্বও দিয়ে দিল ছোট দলের বড় নেতাকে৷ ধানের শীষ প্রতীক দিল ২০ দলকে ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে৷ ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে তারা নির্বাচনে নামালো নিবন্ধন বাতিল হওয়া দল জামায়াতকে৷
কেন? জামায়াতকে ধানের শীষ না দিলে কি ক্ষতি হতো বিএনপির? ভুল মিত্র টানা, আন্দোলনে যেতে সাহসী না হয়ে ওঠা,স্বাধীনতাবিরোধী ও জঙ্গিবাদের পক্ষাবলম্বন প্রভৃতিই কি রাজনীতির সরকার দল ও বিরোধী দল হতে তাদের ছিটকে যাওয়ার কারণ নয়? সরকার বিরোধী আন্দোলনের কি সহায়ক হয়? না এমনটি হয়েছে কোথাও? সরকারি রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই কি বিরোধী আন্দোলন চালানোর রীতি নয়? সুতরাং সরকারের দমন পীড়নের দোহাইকেই আন্দোলনে নামতে না পারার যুক্তি কি খোঁড়াযুক্তি নয়?
বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতাকে ব্যবহার করেই কি হ্যাঁ না ভোট দিয়ে ক্ষমতাকে জায়েজ করেননি? ক্ষমতার মধ্য দিয়েই তিনি গ্রামে গ্রামে গ্রাম সরকার পদ্ধতি চালু করেছেন৷ ক্ষমতা না থাকলে কে তার ডাকে গ্রাম সরকার হতে চাইতো? বিএনপি ক্ষমতায় না থাকলে তখন কোন নেতা বিএনপিতে যোগ দিতো? সেদিনের ক্ষমতাবাজরা তখন ভাবেনি যে তারাও একদিন ক্ষমতার কাছেই হেরে যাবে৷ আসলে যুগে যুগে ক্ষমতার অধিকারীরা অতীত ভবিষ্যত ভুলে গিয়ে ব্যস্ত থাকে কেবল বর্তমান নিয়ে, তাই নয় কি?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)