তুমি রবে নীরবে

কেরানীগঞ্জের বড় মনোহারিয়ায় মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হক।

চ্যানেল আই অনলাইনকে মুঠোফোনে খবরটি জানিয়েছেন মিতা হকের জামাতা শাহিন।

তিনি জানান, রবিবার বাদ যোহর কেরানীগঞ্জের ভাওয়াল স্কুল মাঠে মিতা হকের জানাজা সম্পন্ন হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই তাকে স্থানীয় কবরস্থানে মা-বাবার পাশে দাফন করা হয়।

এরআগে সকাল ১১টায় মিতা হকের মরদেহ ছায়ানটে নিয়ে আসা হয়। তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এই করোনাকালেও সেখানে উপস্থিত হন দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা। প্রায় চল্লিশ মিনিটের মতো সেখানে রাখা হয়। ছায়ানট থেকে মিতা হককে নিয়ে যাওয়া হয় কেরানীগঞ্জে।

এদিকে তার মৃত্যুতে শোকার্ত সংস্কৃতি অঙ্গন। গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নির্দেশক নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘আহা! অমন পরিশীলিত সুরেলা কন্ঠের দেখা মেলা ভার। আর মিলবে কিনা জানিনা। জীবন ও শিল্পের এমন শুদ্ধতম মিলন কালে ভদ্রে ঘটে। আনন্দের মাঝেই জীবন উথলিয়া ওঠে একথা মিতাকে দেখলেই মনে হতো। দুঃখকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে জীবনের আনন্দে শিশুর মত করতালি দিতো। এইতো মাত্র সাতদিন আগে হাসপাতাল থেকে ফোনে চিৎকার করে বলে- বাচ্চুভাই, আমারতো এইখানে ভাল্লাগেনা, ভাল্লাগেনা, ভাল্লাগেনা। আমারে বাসায় নিয়ে যায়না কেন!’

একমাত্র মেয়ে জয়ীতার সাথে মিতা হক

বাচ্চু বলেন, তার দু’তিনদিন পর কন্যা জয়ীতা ও সন্তানসম শাহীন ওদের করোনামুক্ত মাকে কেরাণীগঞ্জের বাসায় নিয়ে যায়। কিন্তু পরশু হঠৎই শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আবারো হাসপাতাল।আর আজ প্রত্যুষে আমার কন্যা এশা ও পুত্রবৎ সাকি হাসপাতাল থেকে ফিরে জানালো ‘মিতামা’ মারা গেছে। আমি নির্বাক।নিস্তব্ধতায় নিমজ্জিত হই। ভাবি মিতার মত জীবনকে ভালেবাসতে আমি কাউকে দেখিনি। এমনভাবে কাউকে জীবন উদযাপন করতে দেখিনি। শত কষ্ট-দুঃখের মাঝে কলকলিয়ে এভাবে হাসতেও দেখিনি কাউকে…! চোখের জলে চৈত্রের ভোরের আকাশটাকে ধূসর দেখতে থাকি। ভাবি ঐ ধূসরে মিলিয়ে গেলে মানুষ আর কখনো ফিরে আসেনা।

শুধু নাসিরউদ্দিন নয়, সংস্কৃতি অঙ্গনের বহু মানুষের কাছে মিতা হকের গ্রহণযোগ্য ছিলো এমন। তাইতো ছায়ানটে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এই খারাপ সময়েও উপস্থিত হন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর।

সংগীত জীবনে দুইশোর বেশি রবীন্দ্র সংগীত রেকর্ড করেছেন মিতা হক। মুক্তি পেয়েছে ২৪টি অ্যালবাম, যার মধ্যে ১৪টি ভারত থেকে ও ১০টি বাংলাদেশ থেকে।

২০১৭ সালে রবীন্দ্র মেলায় আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন মিতা হক

সংগীতশিল্পী মিতা হক দাপুটে অভিনেতা খালেদ খানের স্ত্রী। তার চাচা দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক ও রবীন্দ্র গবেষক ওয়াহিদুল হক। তার মেয়ে জয়িতাও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। এছাড়াও মিতা হক বিভিন্ন সময়ে জাতীয় রবীন্দ্র সম্মিলন, ছায়ানটসহ বেশ কিছু সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। গেল বছরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মজয়ন্তীতে ‘রবি-চ্যানেল আই রবীন্দ্রমেলা ২০১৭’-তে রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী হিসেবে আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন তিনি। সর্বশেষ ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক প্রদান করে।

রবিবার ভোর ৬টা ২০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিতা হক। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। কয়েক দিন আগে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গানচিরনিদ্রাবাবামামিতা হকরবীন্দ্রলিড বিনোদনসংগীতসংগীতশিল্পী