তামিমে সমাধান খুঁজছেন শান্ত

পুরনো সতীর্থদের অনেকেই জাতীয় দলে নিজেদের অবস্থান মজবুত করে ফেলেছেন। পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। যাদের সঙ্গে খেলে বয়সভিত্তিক পরিসর মাতিয়েছেন সেই মিরাজ, সাইফউদ্দিন, মোসাদ্দেক, মোস্তাফিজদের ছাড়া বাংলাদেশ দল এখন চিন্তা করাই কঠিন। অল্পদিনেই তারা হয়ে উঠেছেন ভরসা। সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান শান্তও হতে পারতেন তাদের দলের সারথি। প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান হয়েও পথ হারিয়ে শান্ত পড়ে রইলেন আড়ালে, থাকলেন নিজের ছায়া হয়ে।

২০ বছর বয়সী টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান শান্তর ব্যাটিং দক্ষতায় আস্থা ছিল সবার। অনুশীলনে ব্যাটিং আর ফিল্ডিং নিয়ে তার সিরিয়াসনেস খুব প্রশংসিত হত চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে ও তার অধীনে থাকা অন্য কোচদের আমলে। যার পুরস্কার, কুড়িতে পা রাখার আগেই ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে সুযোগ পান দুটি টেস্ট খেলার। বিসিবির এইচপি ক্যাম্প থেকে তাসমান সাগরপাড়ে গিয়ে অবশ্য সক্ষমতার ছাপ ফেলতে পারেননি এ তরুণ।

পরে শান্তর ওয়ানডে খেলার সুযোগ আসে গত বছর, এশিয়া কাপে। টানা তিন ম্যাচে সুযোগ পেলেও ছিলেন বড্ড বেশি অনুজ্জ্বল। করেন মোটে ২০ রান। বড় মঞ্চে ব্যর্থতার ছাপ কিছুটা পড়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটেও। ২২ গজে আগের মতো আর ধারাবাহিক নন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর জার্সিতে শেষ চার ম্যাচের দুটিতে ফিফটি করলেও আগের তিন ম্যাচে ভুগেছেন রানখরায়।

খারাপ সময় পেছনে ফেলতে ধারাবাহিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠা তামিম ইকবালের সঙ্গে কথা বলেছেন শান্ত। নিয়েছেন পরামর্শ, অনুপ্রেরণা। যেখান থেকে পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে খেলার ডাক, সেই এইচপি ক্যাম্প থেকেই কক্ষপথে ফেরার স্বপ্ন দেখছেন। ম্যাচসেন্স আর মানসিক শক্তি বৃদ্ধির পাঠ নিয়ে তৈরি হতে চান বাংলাদেশ দলের তিন নম্বর পজিশনটা নিজের করে নিতে। চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে শান্ত শোনালেন সেসব কথাই। যাতে উঠে এল ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনার জগতের আদ্যোপান্ত।

জাতীয় দলের আঙিনায় ঘুরে এসে আবার আপনি এইচপি ক্যাম্পে…
প্রথম যখন জাতীয় দলে ডাক পেলাম, এইচপি ক্যাম্প থেকেই গিয়েছিলাম বেশ কিছুদিন কাজ করার পর। এখন জাতীয় দলে নেই, আবার এইচপিতে আসছি। নিজের ব্যাটিং বা ফিল্ডিং যেটাই হোক, এখান থেকে সবকিছু উন্নতি করলে বাংলাদেশ দলে আবার একটা সুযোগ আসবে বলে মনে হয়।

বড় মঞ্চের জন্য প্রস্তুত হতে এইচপি ক্যাম্প কতটা সহায়ক?
সামনের দিনগুলোতে যেসব জায়গায় উন্নতি করা দরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার জন্য, ভালো পারফর্ম করার জন্য ওসব জায়গাতেই বেশি কাজ করবো। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী হওয়া জরুরী, এসব নিয়ে কাজ করবো এইচপি ক্যাম্পে।

শূন্য থেকে শুরু করবেন নাকি জাতীয় দলে খেলা ও ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়েই?
একটা জিনিস ভালো হয়েছে জাতীয় দলে বেশ কিছুদিন ক্যাম্প করেছি, কয়েকটা ম্যাচও খেলেছি। ওই জায়গাটা আসলে বুঝি, ওখানকার পরিবেশ। কীভাবে ভালো করা যায় সেই ধারণা কিছুটা হলেও আছে। নতুন করে শুরু করার কিছু নেই। ওই যে অভিজ্ঞতা সে অনুযায়ী এইচপি বা ‘এ’ টিম যেখানেই থাকি, সেটা (জাতীয় দলে থাকার অভিজ্ঞতা) অনুযায়ী যদি কাজ করতে পারি, তাহলে জাতীয় দলে ফিরলে আমার জন্য কাজটা সহজ হবে। যা শিখেছি চেষ্টা করবো এখানে কাজে লাগাতে।

২০১৬’তে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন। পরে ঘরোয়া কিংবা ‘এ’ দলেও দুর্দান্ত ধারাবাহিক ছিলেন। কিন্তু জাতীয় দলে সুযোগের পর থেকে আগের ছন্দটা নেই। কেন এমন হচ্ছে?
শুরু থেকে যেখানেই যতটুকু খেলেছি ধারাবাহিক ছিলাম। গত এক-দেড় বছরে কিছুটা এদিক-ওদিক হয়েছে, এটা ক্রিকেট খেলায় হতেই পারে। এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না। আগে রেগুলার রান করতাম, এখন রেগুলার রান করছি না। ক্রিকেট খেলায় খারাপ সময় যায়। এটা নিয়ে খুব আপসেট হয়ে পড়ার কোনো জায়গা নেই। বিশ্বাস করি সামনে যে মৌসুমটা আসবে, এইচপি ক্যাম্পের পর যে খেলাগুলো আসবে, চেষ্টা করবো ওখানে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করার।

আপনার চার বন্ধু (মিরাজ, মোস্তাফিজ, সাইফউদ্দিন, মোসাদ্দেক) জাতীয় দলে একেক জায়গায় সেট হয়ে গেছে। বর্তমান বাংলাদেশ দল যদি ধরি, কোন জায়গায় ব্যাটিং করার লক্ষ্য নিয়ে নিজেকে তৈরি করছেন?
সবসময় তো টপঅর্ডারেই ব্যাটিং করে আসছি। চিন্তা আছে তিন নম্বরে যদি জায়গাটা করে নিতে পারি তাহলে স্বচ্ছন্দে থাকব। তিন নম্বরের জন্যই সবসময় প্রস্তুতি নেই। যেখানেই খেলি বা প্রস্তুতি নেই, চেষ্টা করি কীভাবে উন্নতি করা যায় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কথা মাথায় রেখেই। ক্রিকেট বিশ্বে ওই জায়গাটায় কে কে ব্যাটিং করতেছে তাকে বিট করার জন্য কী কী করা দরকার, এই ধরণের পরিকল্পনা থাকে। তিন নম্বর জায়গা ঘিরেই আমার প্রস্তুতি থাকে।

তিন নম্বর পজিশনে সেরা ব্যাটসম্যানরাই ব্যাটিং করে। বেশিরভাগ দলেই এ পজিশন যারা আঁকড়ে ধরে থাকতে পেরেছেন তারা কিংবদন্তি হয়ে উঠেছেন। তেমন কাউকে অনুসরণ করছেন কিনা?
ওভাবে আলাদা করে কাউকে আসলে অনুসরণ করি না। কিন্তু যারাই ওখানে খেলে, বিরাট কোহলি বলেন, জো রুট বলেন বা ওয়ার্নার-স্মিথ, টপঅর্ডারে যারা রান করছে তাদের সবার ব্যাটিং দেখি। আমাদের তামিম ভাই যেমন নিয়মিত রান করছে। ওনার সাথে মাঝখানে কথা হয়েছে ব্যাটিং নিয়ে। ওনাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করি। ওভাবে আলাদা করে কাউকে ফলো করি না। যে দেশেরই খেলোয়াড় রান করছে, কীভাবে বড় ইনিংস খেলছে, দেখে সেটা বোঝার চেষ্টা করি। এর বাইরে কিছু না।

বাংলাদেশের প্রথম টুর্নামেন্ট জয়ে মোসাদ্দেক বড় অবদান রেখেছে। এতদিন ফাইনাল জয় হবে হবে করেও হচ্ছিল না। আপনারা যারা জাতীয় দলের পাইপলাইনে আছেন তাদের উপর দায়িত্ব বেড়ে গেলে কিনা, সামনে যখন জাতীয় দলে খেলবেন এই সফলতা ধরে রাখতে হবে, সেই চ্যালেঞ্জের জন্য নিজেদের তৈরি করছেন কিনা?
অবশ্যই। দায়িত্ব তো সবসময়ই আছে। যেটা বললেন, এরআগে বেশকিছু ম্যাচ হেরে গেছি। এবার জেতার পর ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে যে মিরাজ, মোসাদ্দেক, মোস্তাফিজ আছে ওই টিমে। সত্যিকার অর্থে খুব বেশি গর্ব হয়েছে ওদের জন্য। দায়িত্বের কথা যেটা, জাতীয় দল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি দলই সব জায়গায় ভালো করে যাচ্ছে। বিশেষ করে ত্রিদেশীয় সিরিজ খুবই ভালো গেছে। আমাদের যদি এইচপি বা ‘এ’ টিমের খেলা হয়, তখনও যার সাথেই খেলি ভালো কিছু করার চেষ্টা থাকবে। জাতীয় দলে যদি ফিরতে পারি তাহলে তো এমন পারফর‌ম্যান্স ধরে রাখার দায়িত্ব থাকবেই। চেষ্টা করবো জাতীয় দলে যেন ফিরতে পারি এবং ওখানে যখন যাব যেন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি।

এইচপি ক্যাম্প ৪ মাসের। ফিটনেস থেকে শুরু করে নির্ধারিত ছকে স্কিল নিয়ে কাজ হবে। এর বাইরে কোন জিনিসটা শিখতে চান যেটা দরকার বলে উপলব্ধি করছেন?
টেকনিক্যালি কাজ তো করবই। নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা আছে। এ ব্যাপারে হেড কোচের (সায়মন হেলমট) সঙ্গে কথা বলব। টপঅর্ডার যেহেতু ব্যাটিং করি, গেমসেন্স নিয়ে কাজ করব। আমার মনে হয় টেকনিক্যালির চেয়ে মেন্টালি যেন আরেকটু উপরের লেভেলে থাকা যায় সেটি আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এইচপি ক্যাম্পতামিমবাংলাদেশ ক্রিকেট দললিড স্পোর্টসশান্তস্পোর্টস বিশেষ