ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সা. সম্পাদকের ওপর হামলার বিচার দাবি

ইদুল আযহার দিন ঝিনাইদহে নিজ গ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ইমরান হোসাইনের ওপর স্থানীয় ইউপি সদস্যের করা হামলার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে সিলেটে ঢাবির ছাত্রলীগ নেতা সাইদ খান শাওন, কক্সবাজারে সাজ্জাদ হোসেন সিহাবসহ সারাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হয়েছেন, সেসব হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

পাশাপাশি এই মহামারি পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় একটি কমিটির মাধ্যমে ‘হেল্পলাইন’ বা ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে ডাকসু’র সাবেক সদস্য ও ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকত বলেন,“দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যার যার অবস্থান থেকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু এটা দুঃখজনক যে, এই প্যানডেমিকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তারা বিভিন্নভাবে হামলা মামলার শিকার হয়েছেন।আমারা এই রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়িয়ে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অতিদ্রুত এসব হামলার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।”

ডুজার সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলার ঘটনা উল্লেখ করে সৈকত বলেন,”ঝিনাইদহে কুরবানির দিন মিসকিনের মাংস আত্মসাতের প্রতিবাদ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও ডুজার সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসাইন স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দ্বারা সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার হয়েছেন। গণমাধ্যমে হামলার বিষয়টি আসার পরও প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এটা দুঃখজনক, এটা লজ্জার। আমরা চাই না এদেশে কোনো নাগরিক বিচারহীনতায় থাকুক। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই নয়, দেশের যেকোনো নাগরিকের পাশে ঢাবি শিক্ষার্থীরা রয়েছে।”

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে ইমরানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী হামলার শিকার হয়েছে, তাদের ওপর হামলার দ্রুত বিচারের দাবি জানান ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম।

তিনি এও বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় একটি ‘হেল্পলাইন’ বা ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের একটি দাবি থাকবে। যাতে দেশের যেকোনো প্রান্তেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী হয়রানি, অত্যাচার কিংবা হামলার শিকার হলে সুষ্ঠু বিচার পায়।”

ইমরানের সহপাঠি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী তারেক হাসান নির্ঝর বলেন,“ এই মহামারীতে সারা বিশ্বের মানুষ যখন আতঙ্কিত হয়ে ঘরবন্দি, আমরা যখন ভেবেছি আমরা একটি সহিঞ্চু পৃথিবীর দিকে এগুচ্ছি, আমরা যখন ভেবেছি অসংখ্য মানুষের মৃত্যর মধ্য দিয়ে মানুষের মাঝে মানবতাবোধ জাগ্রত হবে। ঠিক সেই সময়ে আমরা আমাদের সহপাঠীদের হামলার বিচারের দাবিতে এখানে দাঁড়াতে হয়েছে। এটা জাতিগতভাবে আমাদের জন্য যেমন লজ্জার ,তেমনি আমাদের বিচারহীনতার দীর্ঘদিনের সংস্কৃতিকে তুলে ধরছে।”

হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে নির্ঝর বলেন,“ইমরান আমাকে জানিয়েছে মামলার দুইদিন পর্যন্ত পুলিশ তৎপর ছিল। কিন্তু দুদিন পর আর কোনো তৎপরতা ছিল না তার এলাকায়। পুলিশ এ বিষয়ে আর কথা বলছে না, উপরোন্তু যে মেম্বার ইমরানের ওপর হামলা চালিয়েছে, তারা এখন তাকে চারিত্রিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করছে।

এছাড়াও মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ( জাসদ) সভাপতি রাহাদ হোসেন, ইশা ছাত্র আন্দোরন ঢাবি শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসিভিত্তিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের পক্ষে ঢাবি চলচিত্র সংসদের সভাপতি ফেরদৌস খান নির্ঝর, ডাকসু নির্বাচনে সতন্ত্র জোট নেতা তাওহীদ তানজীম ও ডুজার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম আবির প্রমুখ।

এর আগে গত শনিবার ঈদুল আযহার দিনে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়ী ইউনিয়নে অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য জনগণের কাছ থেকে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করা হয়। মাংস বিতরণ শেষে প্রায় ২০ কেজি মাংস ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আজিজুর রহমান একজন সচ্ছল জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও নিজের পারিশ্রমিক হিসেবে রেখে দেন। বিষয়টি নিয়ে ইমরানের বাবা প্রতিবাদ করলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।

পরে ইমরান ও তার ছোট ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আকরাম হোসাইন এগিয়ে গেলে ইউপি সদস্য আজিজুর তার দলবল নিয়ে দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে ইমরান, তার বাবা এবং তার ছোট ভাই আকরাম হোসাইন গুরুতর আহত হন। এতে ইমরানের মাথা ফেঁটে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে মাথায় পাঁচটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। ছোট ভাই আকরাম হোসাইনেরও মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে বলে জানা যায়। তারা বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়মানববন্ধনহামলা