ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে পদক্ষেপ কী?

ভারতের রাজধানী দিল্লির ভয়াবহ বায়ুদূষণ নিয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রায়ই শঙ্কার খবর দেখা যায়। তবে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ মাঝে মাঝে দিল্লিকে ছাড়িয়ে গেলেও এ নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হয় না। এমনই প্রেক্ষাপটে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টকে এগিয়ে আসতে হয়েছে।

চ্যানেল আই অনলাইনের প্রতিবেদনে জানা গেছে, রাজধানীর বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন এইচআরপিবি করা রিটে এক সম্পূরক আবেদনের পর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্টে বেঞ্চ সোমবার নির্দেশনাগুলো দেন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া যারা বিভিন্ন ধরনের টায়ার পোড়ায় ও ব্যাটারি রিসাইকেলিং করে তা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ; ঢাকার পাশের নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজিপুর ও মানিকগঞ্জে যেসব অবৈধ ইটভাটা এখনো বন্ধ করা হয়নি সেগুলা বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়া; যেসব পরিবহন নির্ধারিত মাত্রার বেশি কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে সেগুলো জব্দ এবং পরিবহনের ‘ইকোনোমিক লাইফ’ নির্ধারণ করতে বলা; নির্মাণ এলাকায় বালু, সিমেন্ট মাটিসহ নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা নিশ্চিত করা; দোকান বা মার্কেটের ময়লা-আবর্জনা বিন, বেগ বা ছালায় জমা করে দোকান বা মার্কেট বন্ধ করার সময় নির্ধারিত জায়গায় ফেলার বিষয়টি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে নিশ্চিত করতে বলাসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এসব নির্দেশনা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।

বায়ুদূষণের কারণে দিল্লিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘটনা ঘটলেও ঢাকায় এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের তেমন কোনো কর্মতৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই ভয়াবহ দূষণ ঢাকা শহরে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে। বিশেষ করে শিশুদের স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, বাতাসে ভারী ধাতু ও সূক্ষ্ম বস্তুকণা বেড়ে গেলে ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুজনিত সমস্যা বেড়ে যায়, বুদ্ধিমত্তা কমে যায়।

রাজধানী ঢাকার বায়ুমাণ খুব খারাপ হলেও দূষণের উৎস দিন দিন বাড়ছে। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, যানবাহনের দূষণ নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর উদ্যোগ নেই। এছাড়া দূষণের অন্যতম উৎস নির্মাণকাজের ধুলা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। হাইকোর্টকে এ বিষয়ে এগিয়ে এসে নির্দেশনা দিতে বাধ্য হওয়া এবং ঢাকার বায়ুদূষণ ও বায়ুমাণ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপিরচালককে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হতে বলা পরিবেশকর্মীদের অভিযোগকে আরও দৃঢ় করে। বায়ুদূষণের পরিস্থিতি যে কতোটা খারাপ তা সহজেই অনুমেয়।

তবে এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে যেমন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, তেমনই ঢাকার বাসিন্দাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, যার যার অবস্থান থেকে দূষণ রোধে সচেষ্ট না হলে সরকারের একার পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কোনোমতেই সম্ভব হবে না। এ জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

বায়ুবায়ু দূষণসম্পাদকীয়হাইকোর্ট