ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছাত্র রাজনীতিতে নতুন মাত্রা এনে দেবে এমন আশাতেই ছিল দেশের মানুষ। কিন্তু ঘটেছে তার উল্টোটা।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিধি বিধান অনুসারে বহু বছর ধরে নাই ছাত্র সংসদ। রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন হিসাবে কাজ করছে ছাত্র সংগঠনগুলো। যার ফলে শিক্ষা ভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা নেই। সাধারণ ছাত্রদের দাবি দাওয়া উপেক্ষিত হয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে।
আর এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে আলোচিত হয়েছে বারবার। তারপরও সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে হানাহানি আন্দোলনসহ নানা আশংকার দোহাই দিয়ে নির্বাচন করেনি। অতীতে দেখা গেছে রাজনৈতিক কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জট হত। ছাত্র সংসদ ভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা নেই বলে এখন অনেকটাই সেশন জট মুক্ত ছাত্র ছাত্রীরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে হল যানবাহন শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সকল বিষয়াদি প্রশাসনিকভাবে পরিচালিত হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের কথা বলার সুযোগ তেমন নাই। নানা ধরনের জাতীয় রাজনৈতিক ইস্যুতে ছাত্র সংগঠনগুলো ব্যতিব্যস্ত থাকে। শিক্ষা ভিত্তিক ইস্যু নেতৃত্বহীন। মূলত ডাকসু এবং হল সংসদের মুখ্য ভূমিকা থাকতে আবাসন যানবাহন শিক্ষা সংস্কৃতি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে। তাদের কাজ করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের বরাদ্দকৃত বাজেটে ছাত্র ছাত্রীদের জীবন যাত্রাকে শতভাগ সুনিশ্চিত করতে। বাৎসরিক উৎসব সহ মেধা বিকাশের অনুষ্ঠানের আয়োজন ও উন্নয়নমূলক কাজের মধ্য দিয়ে পরিষদ আস্থার জায়গা তৈরি করে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলো গত ১১ মার্চ। সে নির্বাচনের নাটকীয়তার রেশ এখনো কাটেনি। রাজনৈতিক দল গুলোর পাশাপাশি শিক্ষকরা সম্পৃক্ত হয়ে গেছেন নির্বাচন প্রক্রিয়ার জটিলতায়। হয়ত বা ভোটের দিনের সব বিষয় আগামীতে তদন্তের মাধ্যমে বের হয়ে আসবে
কিন্তু যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো, নির্বাচন বর্জন আর গ্রহণের খেলা। জিতলে মানি, না জিতলে মানি না। এমন ধারনা নিয়ে রাজনীতি করাটা এক ধরনের ছেলেমানুষী ভাবনা।
ভোট নাগরিকের অধিকার। নাগরিক দায়িত্ব হিসাবে ভোট দিয়ে তার অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করে। সুতরাং সাধারণ জনগণ যখন কোন ইস্যুতে ভোট দেয় তখন তার প্রতি সস্মান দেখানো রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির কর্তব্য। তাই বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে নিজেদের সুবিধামত আচরণ করা হলো রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা। সোজা কথায় গণতন্ত্রের নামে রাজনীতির দেউলিয়াপনার নামে সাপলুডু খেলা ।
ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলের ধোঁয়াশায় কর্মকাণ্ড যে একটি বহমান প্রক্রিয়া হচ্ছে তা অনুমেয়। কেননা একক প্যানেল নিয়ে কোন রাজনৈতিক সংগঠন সংসদ গঠন করতে পারেনি। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রত্যাশা ছিল ছাত্রলীগ পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হবে। কিন্তু ডাকসুর মূল কাণ্ডারি ভিপি পদটিই হারাতে হলো ছাত্রলীগকে। যদিও অনেক কিছুর পর ছাত্রলীগ তাদের এ পরাজয়কে মেনে নিয়ে নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে। অবশ্যই এর জন্য ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থী শোভনের রাজনৈতিক বন্ধুসুলভ আচরণ সাধুবাদ প্রাপ্য।
বরং নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়ে ডাকসু সহ হল সংসদগুলো সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের জন্য কাজ করবে সে প্রত্যাশাটাই সবার কাম্য হলে মঙ্গল । হাইকোর্টের নির্দেশনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্বাচনের যাত্রা শুরু হয়েছে।
আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার কিশোর বয়সে প্রথম প্রতিবাদটি করেছিলেন স্কুলের ছাদ মেরামতের জন্য। কারণ একজন ছাত্র হিসাবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ছাত্রদের সুযোগ সুবিধা আদায় হলো ছাত্রজীবনের রাজনৈতিক চেতনা বোধ।
সুতরাং ডাকসু নির্বাচনকে নিয়ে রাজনৈতিক জল ঘোলা না করাই উত্তম। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের পরিবেশ, হল আবাসন, শিক্ষা সংস্কৃতি খেলাধুলাসহ যাবতীয় বিষয়াদির সমস্যা সমাধানে সহমতের অবস্থানে সকল সাংসদ কাজ করবে এটাই কাম্য হওয়া উচিত সকলের।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।