ট্রেনের নতুন ই-টিকিটিং সিস্টেমে প্রথমদিনেই সাইবার হামলা

রেলের নতুন ই-টিকিটিং সিস্টেমে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। টিকিট কাটার এ সিস্টেম তৈরি করা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘সহজ জেভি’ বলছে, প্রথমদিনেই তারা সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে।  

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার ২৬ মার্চ সকাল ৮টা থেকে ই-টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু শুরুতেই ওটিপি, ওয়েবসাইট লোডিং ও সার্ভার সমস্যাসহ নানা জটিলতার কারণে টিকিট কাটতে পারছেন না যাত্রীরা। দুপুর সোয়া ৩টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও ট্রেনের টিকিট কাটার ওয়েবসাইটটি কাজ করছিল না।

সহজ-এর জনসংযোগ বিভাগের ম্যানেজার ফরহাত আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: দ্রুততম সময়ের মধ্যে ই-টিকিটিং সিস্টেমটা সচল করতে আমাদের প্রকৌশলীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমাদের প্রকৌশলীরা অনলাইনে সাইবার হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে। তবে হামলাটি দেশ থেকে নাকি দেশের বাইরে থেকে হয়েছে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

ফরহাদ আহমেদ জানান, ‘শুধুমাত্র অনলাইনে এই অচলাবস্থাটা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন স্টেশনে কম্পিউটারাইজ প্রোগ্রামে কোনো সমস্যা হয়নি। গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমরা দেশের ৭৭টা স্টেশনে কম্পিউটারাইজ পদ্ধতিতে প্রায় ৪১ হাজার টিকিট বিক্রি করেছি।’

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, আমরা একটি নতুন কার্যক্রমে যাত্রা করেছি। যাত্রীদের একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আমরা সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে টিকিট বিক্রি করছি৷ যাত্রীদের সুন্দর সেবা প্রদান করাই আমাদের লক্ষ্য।

২১ দিনে ট্রেন টিকিটিং সল্যুশন তৈরি করেছে সহজ
বাংলাদেশ রেলওয়ে সম্প্রতি আগামী পাঁচ বছরের জন্য ট্রেনের টিকিট বিক্রি ও পরিচালনা সংক্রান্ত চুক্তি সই করেছে সহজ জেভি-এর সঙ্গে। চুক্তি অনুযায়ী, চুক্তি সইয়ের দিন থেকে পরবর্তী ২১ কর্মদিবসের মধ্যে রেলের টিকিট পরিচালনায় ব্যবহৃত সফটওয়্যার হস্তান্তর করার কথা থাকলেও তা যথাযথভাবে হয়নি।

মূলত টেন্ডার অনুযায়ী, যেভাবে সবকিছু হস্তান্তর হওয়ার কথা ছিলো তা হয়নি। তবে দেশের সার্বিক কল্যাণে এবং রেলওয়ে টিকিট পরিচালনার কাজ চলমান রাখতে ওই একই ধরনের সল্যুশন তৈরি করেছে সহজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ বছরের পুরোনো সমন্বিত টিকিটিং সিস্টেম বুঝে নেয়া ও তা নিয়ে কাজ করা, হার্ডওয়্যার ইন্সটল করা, টিকিটিং সিস্টেম পরিচালনার জন্য দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা কর্মরত কর্মীদের দক্ষতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং রেলওয়ে টিকিট পরিচালনা সংক্রান্ত লজিস্টিক সামলানোর মতো কাজ পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে সহজ।

এর আগে রেলের টিকিট সিএনএসের নিজস্ব সাইটের মাধ্যমে বিক্রি হলেও এবার সরাসরি রেলওয়ের নিজস্ব সাইট (www.eticket.railway.gov.bd) থেকে টিকিট মিলবে। রেলওয়ের সাইট থেকে অনলাইনে টিকিট বিক্রিসহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে সহজ লিমিটেডের নেতৃত্বে সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি। অনলাইন টিকিট সিস্টেমে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ১০ কোটিরও বেশি বাস ও লঞ্চ টিকিট পরিচালনা ও বিক্রি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সহজের।

এর আগে ১৪ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দীর্ঘদিন রেলের টিকিটিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সিএনএস লিমিটেড। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহজের সঙ্গে রেলওয়ে টিকেটিং সিস্টেম পরিচালনার জন্য পাঁচ বছরের চুক্তি হয়েছে।

তারা ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের কম্পিউটারাইজড টিকিটিংয়ের কাজ শুরু করবে। ২০ মার্চ পর্যন্ত সিএনএস লিমিটেড ট্রেনের কম্পিউটারাইজড টিকিটিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এরপর ২১ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত সিএনএসের কাছ থেকে সবকিছু বাংলাদেশ রেলওয়ে বুঝে নেবে। এই সময়টাতে অনলাইন টিকিটিং কার্যক্রম বন্ধ থাকছে।

রেলওয়ে সূত্র মতে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৯৯৪ সালে কম্পিউটারভিত্তিক টিকেটিং সিস্টেম চালু করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ২৭টি স্টেশনে কম্পিউটারের মাধ্যমে টিকিট ইস্যু করা শুরু হয়। বর্তমানে ১০৪টি আন্তনগর ট্রেনের টিকিট ৭৭টি স্টেশনে কম্পিউটারের মাধ্যমে ইস্যু করা হচ্ছে

দৈনিক প্রায় ৯০ হাজার ও মাসিক প্রায় ২৭ লাখ যাত্রীর টিকিট কম্পিউটারের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়। এ সব টিকিটের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১৩ লাখ টিকিট অনলাইন/মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ইস্যু করা হচ্ছে। সিএনএসের পর সহজ লিমেটডও মোট টিকিটের ৫০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রি করবে।

সহজসাইবার হামলা