টাঙ্গাইলে গণপিটুনির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে মিনু মিয়া (৩০) নামের দরিদ্র ভ্যানচালককে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সোমবার রাতভর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন; উপজেলার নাগা গ্রামের মৃত তারিকুল আলমের ছেলে মাইনুল হক হিটু (৩৭), সন্তোষ মালুর ছেলে প্রভাত মালু (১৯), আনোয়ার হোসেনের ছেলে শিশির আহম্মেদ (৩২), মৃত নুরুল ইসালামের ছেলে মিজানুর তালুকদার (৪৭), আনোয়ারের ছেলে ওমর (৩২) ও পালিমা গ্রামের ফজলু মিয়ার ছেলে আলামিন (১৯)

মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শফিকুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ২১ জুলাই রোববার ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে কালিহাতী উপজেলার সয়া হাটে ভ্যানচালক মিনু মিয়াকে গণপিটুনি দেন স্থানীয়রা। কিন্তু তিনি ছেলে ধরা ছিলেন না। মূলত হাটে মাছ ধরার জাল কিনতে গিয়েছিলেন তিনি।

‘‘পরে এ ঘটনায় আহততের ভাই রাজিব হোসেন সোমবার রাতে বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। রাতেই ভিডিও ফুটেজ দেখে অভিযান চালিয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের টাঙ্গাইল আদালতে পাঠানো হবে।’’

তিনি আরো বলেন, জেলায় আরো দুইজন ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। কিন্তু তারাও ছেলেধরা ছিলেন না। যদি কাউকে সন্দেহ হয় তাহলে পুলিশকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। এ বিষয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে।

স্থানীয়রা জানান, গত ২১ জুলাই রোববার ভূঞাপুর উপজেলার টেপিবাড়ী গ্রামের কোরবানের ছেলে দরিদ্র ভ্যানচালক মিনু ও প্রতিবেশী জাবেদের ছেলে অটো চালক শাকের বন্যায় কর্মহীন হয়ে পড়ায় কালিহাতীর সয়া হাটে গিয়েছিলেন মাছ ধরার জাল কিনতে। কিন্তু হঠাৎ করে এক কিশোর ছেলে শাকেরে পকেটে হাত দেয়। এসময় শাকের ছেলেটির ধরে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে ধরে নিলো বলে চিৎকার দেয় ওই কিশোর। এসময় ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা তাদের ঘেরাও করে গণপিটুনি দেন। এর এক ফাঁকে শাকের পালিয়ে যেতে পারলেও অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় মিনুকে।

পরে নাগা গ্রামের বেশকিছু ব্যক্তি পিটুনি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তাকে উদ্ধার করে সয়া বাজারের হিটু’র ডিমের আরত ঘরে রেখে পুলিশে খবর দেন তারা। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই উত্তেজিত জনতা ওই ঘর থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় অমানবিক নির্যাতন চালায় বলে দাবি তাদের।

পুলিশ এসে মিনু মিয়াকে উদ্ধার করে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে মিনুর অবস্থা অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। পরে সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজন হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন মিনু।

এ ঘটনায় মিনুর ভাই গতকাল সোমবার রাতে বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। এর পরপরই গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে সয়া হাটের আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম।

গণপিটুনিগুজবছেলেধরা